তুমুল ব্যস্ত সেলাইঘর

6
তুমুল ব্যস্ত সেলাইঘর

পাওয়া প্রায় যেকোনো তৈরি পোশাকের অনেক কপি থাকে। আর কিছু ক্ষেত্রে মাপেও হয় সমস্যা। তাই নজরকাড়া হলেও কিছু মানুষ তৈরি পোশাক এড়িয়ে চলে। তারা খোঁজে মনের মতো নকশা বা মাপে নিজের পছন্দের পোশাক।

তাদের একমাত্র ভরসা সেলাইঘর। তাই ঈদের মতো উৎসবের সময় একটু আগেভাগে কাপড়ের পিস কিনে তারা ছোটে দরজিপাড়ায়। দরজিকে বুঝিয়ে দেয় কী চায়। লম্বা খাতায় মাপ আর নকশার নির্দেশনা টুকে রাখেন ‘কাটিং মাস্টার’।

Pop Ads

নকশা আর মাপ ঠিক ঠিক হলো কি না তা যাচাইয়ে ট্রায়ালের সুযোগও থাকে। বাজারে হাজার রকমের তৈরি পোশাক থাকতেও ঈদে তাই দরজিপাড়ায় ভিড় বাড়ে। দুই ঈদের মধ্যে নতুন পোশাকের আয়োজন মূলত হয় ঈদুল ফিতরেই। রোজার প্রথম ১০ দিন ধুমিয়ে ফরমায়েশ নেয় দরজিঘরগুলো।

সম্পর্কের জোরে ১৫-২০ রোজা পর্যন্ত অর্ডার রাখা হয়। এরপর আর সাধারণত সে সুযোগ থাকে না। রোজা এখন সেই অর্ডার নেওয়ার শেষের পর্যায়ে। রাজধানীর সেলাইঘরগুলোতে এখন তাই চলছে বছরের সর্বোচ্চ ব্যস্ততা। সকাল থেকে শুরু করে সাহরির সময় পর্যন্ত অবিরাম কাজ করছেন কারিগররা।

অনেক টেইলার্সই সপ্তাহখানেক আগেই নতুন ফরমায়েশ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এখন চাঁদরাত পর্যন্ত কারিগররা সুই-সুতার কাজ চালিয়ে যাবেন। ঈদের শেষ পোশাকটির কাজ ফুরানোর আগে বিশ্রাম নেই তাঁদের। এবার কী ধরনের পোশাক বেশি আসছে দরজিপাড়ায়, জানতে চাইলে প্রায় একই রকম উত্তর পাওয়া গেছে সবার কাছ থেকে। কারিগররা জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের তৈরি কাপড়ই বেশি এসেছে। তরুণীরা দুই অংশের থ্রি-পিস নিয়ে আসছেন বেশি।

বিভিন্ন তারকা অভিনয়শিল্পীর পরিধেয়র অনুকরণে পোশাক তৈরির ফরমাশ পাচ্ছেন কারিগররা। নকশা যেন কপি হয়ে না যায় সে জন্য পোশাক তৈরি হয়ে গেলে তা যেন সবার সামনে সাজিয়ে না রাখা হয় সেই নিষেধাজ্ঞাও দিয়ে রেখেছে অনেক গ্রাহক। কয়েকজন কারিগর বললেন, হরেক রকম নকশার এসব কাজ করতে গিয়ে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গতকাল শনিবার ছুটির দিনে নিউ মার্কেট এলাকায় ছিল ব্যাপক যান ও জনজট। ঈদের বাজারের হট্টগোলপূর্ণ ভিড় পেরিয়ে চাঁদনী চক মার্কেটের তৃতীয় তলায় যেতেই সেলাই মেশিনের খটাখট। বাইরের খদ্দের ছাড়াও নিউ মার্কেট এলাকা থেকেই কাপড় কেনা অনেকে চলে আসে এখানকার দরজিঘরগুলোতে। সারা বছরই তাই এখানে এক ধরনের ব্যস্ততা থাকে। আর ঈদের মৌসুমে তা ওঠে তুঙ্গে। চাঁদনী চক এসি মার্কেটের তৃতীয় তলার নাবিলা লেডিস ফ্যাশন, সুরুচি লেডিস টেইলার্স এবং বোরকা, সুনন্দি লেডিস টেইলার্স, লেডিস ফ্যাশন, সুরেশমী লেডিস টেইলার্স, মিনহা লেডিস ফ্যাশন, শুভেচ্ছা লেডিস ফ্যাশন, সুবেশী লেডিস ফ্যাশন গতকালও নতুন পোশাকের ফরমায়েশ নিচ্ছিল।

উত্তর ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত বিপণিবিতান শাহজাদপুরের সুবাস্তু নজরভ্যালিতে রয়েছে ২০টির মতো দরজিঘর। পাশেই রয়েছে লেইস, এমব্রয়ডারি ও পোশাকসজ্জার বিভিন্ন উপাদানের দোকান। সেখান থেকে পছন্দের জিনিসটি কিনে দরজিঘরে ছুটতে দেখা গেছে অনেককে। আবার কেউ কেউ অপেক্ষায় ছিল তৈরি হওয়া পোশাক বুঝে নিতে। সুবাস্তুর কেউ কেউ এক সপ্তাহ আগেই ফরমাশ নেওয়া বন্ধ করলেও কয়েকটি টেইলার্স জানাল, তাদের দরজা আরো কয়েক দিন খোলা। মজিবর ফ্যাশন টেইলার্সের মালিক তথা প্রধান দরজি মো. মজিবর জানান, এখন একান্ত যাদের অনুরোধ ফেলা যায় না তাদের ফরমাশই নিচ্ছেন শুধু। ঢাকার বাইরে রংপুর-কুড়িগ্রাম থেকেও ফরমাশ পেয়েছেন এবার, জানালেন তিনি। তাঁর আটজন কারিগর সকাল থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত কাজ করছেন।

কয়েকজন গ্রাহক জানিয়েছেন, দরজিঘরগুলো সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মজুরি নিচ্ছে। এ কথা অকপটে স্বীকার করেছেন মো. মজিবর। তিনি জানান, রোজার আগে তাঁর ২০০ স্কয়ার ফুটের দোকানের জন্য ১২ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হতো। রোজায় তা বাড়িয়ে ২৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া দিনরাত কাজ করতে হয় বলে কারিগরদের ইফতার ও সাহরি তাঁকেই করাতে হচ্ছে। এই বাড়তি খরচ গ্রাহকদের কাছ থেকেই তুলতে হচ্ছে। মো. মজিবর জানান, তাঁর এখানে কামিজের মজুরি ওয়ান পার্ট হলে সাত-আট শ, টু পার্ট হলে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া ব্লাউজের মজুরি এক হাজার আর পাঞ্জাবির মজুরি ৬০০ টাকা। পোশাকে লেইস বা এমব্রয়ডারি চাইলে কাজ বুঝে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়তি।