দাবদাহে রাজশাহীতে ঝরে পড়ছে আমের গুটি

2
দাবদাহে রাজশাহীতে ঝরে পড়ছে আমের গুটি

টানা খরা ও দাবদাহের কারণে রাজশাহী অঞ্চল জুড়ে ঝরে পড়ছে বাগানের আমের গুটি। ইতিমধ্যে অনেক বাগানের অন্তত ২০ শতাংশ গুটি ঝরে পড়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, তীব্র খরা দীর্ঘস্থায়ী থাকলে আমের গুটি ঝরতে থাকবে। এক্ষেত্রে আমবাগানে পরিমাণমতো ঘনঘন পানি সেচ দিতে হবে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, চলতি বৈশাখের শুরু থেকে দাবদাহে পুড়ছে রাজশাহী অঞ্চল। ঠা-ঠা রোদে তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেতে উঠেছে এই অঞ্চলের পথ-ঘাট। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে প্রাণিকুল। সম্প্রতি রাজশাহীতে তাপমাত্রা ওঠে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজশাহী জুড়ে গত শনিবার থেকে সাত দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। প্রখর রোদ-গরমে সুস্থ থাকতে মাইকিং করে মানুষকে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে।

Pop Ads

আবহাওয়া অফিস বলছে, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠলেই তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

রাজশাহীর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম জানান, গত ১৭ এপ্রিল থেকে রাজশাহী অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। ঐদিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর গত ১৮ এপ্রিল রাজশাহী অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৯ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০ এপ্রিল তাপমাত্রা বেড়ে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে, বৈরী আবহাওয়ায় বাগানের আম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী মহানগরীর খড়খড়ি বাইপাস এলাকার আমচাষি শরিফুল ইসলাম কাদু জানান, আমের বোঁটার রস শুকিয়ে যাওয়ায় আম হলুদ আকার ধারণ করে ঝরে পড়ছে। মৌসুমের শুরুর দিকে বেশ ভালো মুকুল এলেও ঘন কুয়াশা ও হালকা বৃষ্টিতে প্রথম দফায় আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর চলমান খরায় বাগানের গাছে আম ধরে রাখা কষ্টকর।

রাজশাহী মহানগরীর পশ্চিম প্রান্তের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার আমচাষি এন্তাজ আলী বলেন, আম চাষের জন্য এই সময়ে বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার আমের আকার বেশ ছোট হবে। একই আমের সঙ্গে উত্পাদনও কমবে। গাছে আম পর্যাপ্ত উত্পাদন না হলে মৌসুমের শুরু থেকেই এবার আমের দাম চড়া থাকতে পারে।

এদিকে তীব্র খরায় আমের গুটি রক্ষায় প্রতিদিন গাছে পানি স্প্রে করার মাধ্যমে আমগাছ ধুয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেচের ব্যবস্থা না থাকলে অন্তত সকালে বা সন্ধ্যায় গাছে পানি স্প্রে করা উচিত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মোছা. উম্মে সালমা জানান, জেলার সব উপজেলায় চলতি খরা মোকাবিলা ও বাগানের আমের গুটি টিকিয়ে রক্ষায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।