দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করুন: প্রধান বিচারপতি

12
দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করুন: প্রধান বিচারপতি

দুর্নীতিবাজদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেছেন, ‌‘দুর্নীতি যেমন বৈষম্য, সামাজিক অনৈক্য ও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে, তেমনই তা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই আমি মনে করি, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের গুরুদায়িত্ব দুদকের হলেও এককভাবে কমিশনের পক্ষে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও জনগণের সক্রিয় উদ্যোগই পারে সমাজ থেকে দুর্নীতি নামক বিষবৃক্ষকে নির্মূল করতে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সেই জাতি যারা অন্যায়- অবিচার, দুঃশাসন-অপশাসন, বৈষম্য-জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করেছি। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেও জয়লাভ করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। প্রধান বিচারপতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ধারণ করে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ করে দুর্নীতিবাজদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন।’

Pop Ads

আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ। জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে দুদক।

সভায় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দেশের সব জেলায় বিশেষ জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের একাধিক বেঞ্চ দুর্নীতি দমন আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলাগুলো শুনানি করছেন। তাই প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারি যে দেশের অধস্তন আদালত ও উচ্চআদালতে দুর্নীতির মামলাগুলো যথাশীঘ্র নিষ্পত্তিতে বিচার বিভাগ সচেষ্ট।’

তিনি আরও বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির বিকাশের কারণে দুর্নীতির ধরন ও পদ্ধতিও পাল্টেছে। তাই বর্তমান বাস্তবতায় দুদকের সামনে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ বিরাজমান। এ কারণে দুদককে দুর্নীতি দমন, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে শুধু গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় মামলা-মোকদ্দমা নয়; বরং আন্ডারকভার অপারেশন, সার্ভিলেন্স, কোভার্ট ইনভেস্টিগেশন, মামলা পরিচালনায় আধুনিকীকরণ, রেকর্ড ব্যবস্থাপনা যুগোপযোগীকরণ, পুনরুদ্ধার করা সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, দুর্নীতি প্রতিরোধে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনীমূলক কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে দুদক কর্তৃক মামলা যেমন আগের তুলনায় বেড়েছে, তেমনই মামলায় সাজার হারও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।’

দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিটের মাধ্যমে আদালতে মামলা পরিচালনার বিধান রয়েছে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা যত দ্রুত সম্ভব নিজস্ব স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নিন। তাহলে দেশের আদালতগুলোতে চলমান দুর্নীতির মামলাগুলো আরও দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। একই সঙ্গে কমিশনের অনুসন্ধান, তদন্ত ও তদারকির কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা অত্যন্ত নির্মোহভাবে, কোনো অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে, নিষ্ঠার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন। আপনার কোনো ভুল পদক্ষেপে যেন কোনো নিরপরাধ হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকবেন।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবজাত দূরদর্শিতায় উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে দেশ হতে দুর্নীতি দূর করতে না পারলে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সম্ভব হবে না। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলেন, ‘সরকারি আইন করে কোন দিন দুর্নীতিবাজদের দমন করা সম্ভব নয় জনগণের সমর্থন ছাড়া। আজকে আমার একমাত্র অনুরোধ আপনাদের কাছে সেটা হলো- ‘এই। আমি বলেছিলাম প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে।’ আজকে আমি বলব বাংলার জনগণকে এক নম্বর কাজ হবে দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই।’

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে উদ্বৃত করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সেই ডাকে যদি আমরা সাড়া না দেই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান হতে যদি সক্রিয় ভূমিকা পালন না করি- তাহলে কিন্তু সেটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি অসম্মান করা হবে। তাই সবার প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, আসুন উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই; দেশ থেকে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করি।