পাচারের টাকা আনার সুযোগ অসাংবিধানিক ও বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক : সিপিডি

পাচারের টাকা আনার সুযোগ অসাংবিধানিক ও বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক : সিপিডি

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশ থেকে পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই সুযোগকে অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলছে, এই সুযোগ অর্থ পাচারের মতো অপরাধকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেয়ার নামান্তর। এতে অর্থ পাচারসহ সার্বিকভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হবে।

শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এই কথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, পাচার করা টাকা কর দিয়ে দেশে আনার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে এতে সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করা হয়। এটা অনৈতিক। এটা থেকে কোনো অর্থ আসবে না। কারণ যারা দেশের বাইরে টাকা পাচার করে তারা দেশে ফিরে আসার জন্য টাকা পাচার করে না।

Pop Ads

ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর নজর না দিয়ে আমাদের বর্তমান অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতির যে চাপ, তার পরিপ্রেক্ষিতে যারা দরিদ্র ও নিম্নআয়ের জনগণ আছেন, তাদের কীভাবে সুরক্ষা দেয়া যায় এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কীভাবে রক্ষা করা যায় সেগুলোর ওপর জোর দিতে বলেছিলাম। সেটি করতে গিয়ে যা প্রয়োজন আর্থিক বা মুদ্রা পদক্ষেপ, সেটির মধ্যে সমন্বয় করা খুবই প্রয়োজন। আমরা প্রায়শই দেখি, এগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় থাকে না।

এসময় সিপিডির ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদেশে গচ্ছিত টাকা আনার প্রক্রিয়ায় সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবে এবং অসাধুরা আরো টাকা পাচারে উৎসাহিত হবে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে টাকার অংকে বরাদ্দ বাড়লেও, তা জিডিপির তুলনায় কমেছে বলে মনে করে সিপিডি। এ খাতের সুবিধাভোগীদের সুযোগও কমেছে। এসময় কৃষিখাতে ভর্তুকি বৃদ্ধিকে ইতিবাচক বলে জানান বক্তারা।

বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কর সুবিধা রাখা হয়নি, সুবিধা পেয়েছে উচ্চবিত্তরা। সেইসাথে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও যথেষ্ট উদ্যোগ নেই। বরাবরের মত টাকার অংক বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য পৌনে সাত লাখ কোটির বাজেট দিয়েছে সরকার। তবে এই বাড়তি বাজেটের বরাদ্দের বেশিরভাগ গেছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরদের বেতন ভাতা, পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে, কৃষি ভর্তুকির মত খাতে।

টাকার অংকে এবার সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও কমেছে জিডিপির তুলনায়। পেনশন বাবদ খরচ বাড়লেও, কমেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নেয়া কর্মসূচির ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা। গবেষণা সংস্থা সিপিডি তাদের আনুষ্ঠানিক বাজেট পর্যালোচনায় এসব তথ্য তুলে ধরে।

করোনাকালে সারাবিশ্বের মত দেশেও ধনীদের আয় বেড়েছে, কমেছে নিম্নবিত্তদের। এসময় করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়লেও, করপোরেট কর কমানোয় উচ্চবিত্তরাই সুফল পাবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

বাজেটে কৃষি ভর্তুকি বৃদ্ধিকে ইতিবাচক বললেও সিপিডি মনে করে, মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক নয়। সংস্থাটি মনে করে, কয়েকবছরের মধ্যেই বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধে চাপ বাড়বে। যা মোকবিলায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতে আরো জোর দিতে হবে।