পেঁয়াজ রক্ষায় রাত জেগে পাহারা

25
পেঁয়াজ রক্ষায় রাত জেগে পাহারা

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহীর রাজশাহীতে জমিতে পাহারা বসিয়েছেন কৃষকরা। পেঁয়াজ খেত থেকে চুরি ঠেকাতে এ ব্যবস্থা নিচ্ছেন কৃষকরা। শীতের রাতে পেঁয়াজ পাহারা দিতে গিয়ে কষ্টও করতে হচ্ছে কৃষকদের। তবে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে অগত্য পাহারা বসিয়েছেন জমিতে।

তার পরেও চোরের কারণে জেলার পুঠিয়া, দুর্গাপুর, গোদাগাড়ীমহ প্রায় সব উপজেলার বিলের মধ্যেকার জমিগুলোতে রোপন করা মুড়ি (ঢেমনা) পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, গত বছরে এ সময়ে অনেক জমি থেকে পেঁয়াজ চুরি হওয়ায় এ কাজটি করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে যাঁদের বাড়ি জমি থেকে দূরে এবং যাদের জমি বিলের মধ্যে সেখানে বাড়ি-ঘর নাই, সেসব জমিতে পাহারা বসানো হচ্ছে।

Pop Ads

রাজশাহীর দুর্গাপুরের মাড়িয়া গ্রামের কৃষক সাধন মণ্ডল বলেন, ‘গতবারও ঢেমনা (মুড়ি) পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল।

চলতি বছরও দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এবার ৮ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ লাগাইছি। আশা করছি ৬০-৬৫ হাজার টাকার পেঁয়াজ হবে। গত তিন চার দিন আগে পাইকারি ১৭০ টাকা কেজিও পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।

তাই দাম বেশি পাওয়ায় জমি থেকে পেঁয়াজ চুরির আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতবার আমাদের এলাকায় তিন-চার জনের পেঁয়াজ চুরি হয়েছিল। এবার তাই অনেকেই পাহারা দিচ্ছে। যেন জমি থেকেই পেঁয়াজ চুরি না হওয়ায়।’
কৃষক সাধন বলেন, ‘একজন মানুষ দুই ঘণ্টা সময় দিলেই এক মণ পেঁয়াজ তুলতে (জমি থেকে সংগ্রহ) পারবে।

আর চার ৫ জন গেলে একটা জমি থেকে দুই-তিন ঘণ্টাতেই ১৫-১৬ মণ পেঁয়াজ তুলতে পারে। প্রতি মণ পেঁয়াজ এখনো বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে। তাহলে ৪-৫ জন গিয়ে দুই-তিন ঘণ্টাতে ৫০-৬০ হাজার টাকার পেঁয়াজ চুরি করতে পারবে। আর এ কাজ হলে যারা পেঁয়াজ চাষ করে লাভের আশা করছেন, তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই বাধ্য হয়ে পেঁয়াজের জমি পাহারা দিচ্ছি।’

এদিকে, রাজশাহীর বাজারে গতকালও এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা দরে। ফলে দাম পাওয়া কৃষকরা যেমন খুশি, তেমনি জমি থেকেই পেঁয়াজ চুরিরও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই জমি থেকে পেঁয়াজ চুরি রোধে পাহারা বসিয়েছেন কৃষক।

পবার বাগধানী এলাকার কৃষক নাদের শাহ বলেন, পেঁয়াজ চুরির আতঙ্কে আছি। এ কারণে রাতে পাহারা বসিয়েছি। জমির পাশে টং (টিনের) ঘর তুলে রাতে পাহারা দিচ্ছি।

গোদাগাড়ীর উপজেলার বেনীপুর গ্রামের কৃষক মাজহারুল ইসলাম এবার দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনিও জমিতে পাহারা বসিয়েছেন। রাতে লাইট নিয়ে গিয়ে আলো জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে জমিরে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখেন তারা কয়েকজন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, রাজশাহীতে বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বাজারে আসছে। এর মধ্যে ভারতীয় জাতের একটি পেঁয়াজও চাষ হয়েছে। ভারতীয় জাতের পেঁয়াজ রাজশাহীতে ১৩ শ হেক্টর জমিতে। এ পেঁয়াজ গত প্রায় এক মাস ধরে বাজারে আসছে। ভারতীয় জাতের এ পেঁয়াজ এবার প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হবে রাজশাহীতে। এরই মধ্যে দেশি ঢেমনা (মুড়ি) পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। এ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ মুড়ি পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আছে এক লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন।