প্রযুক্তির ফাঁদে নারীর সম্ভ্রম; সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দাবি

প্রযুক্তির ফাঁদে নারীর সম্ভ্রম; সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দাবি। প্রতিকী-ছবি

সুপ্রভাত বগুড়া ডেস্ক: প্রযুক্তির অ’পব্যবহারের মাধ্যমে নারীদের ব্ল্যা’কমেইল করে আপ’ত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে। কখনো প্রেমিক, কখনোবা স্বামী তার ব্যক্তিহিং’সা চরিতার্থ করার জন্য ভুক্তভোগী নারীর স’ঙ্গে কা’টানো অন্তর’ঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিওগু’লো ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দিচ্ছে। আবার অনেকে ধ’র্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে ইন্টারনেটে। অনেকে গো’পন ক্যামেরায় বাথরুমের চিত্র ধারণ করেও অনলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফেসবুক ও টুইটারে নারীদের বিরু’দ্ধে কুৎসা রটানো এবং বাজে মন্তব্য করা এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এত কিছুর পরও আইনের ফাঁ’ক গলে অ’পরাধী থেকে যাচ্ছে ধ’রাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু লোকল’জ্জায় কোনো কিছু প্রকাশ করছেন না অনেক নারী। দিশাহারা হয়ে আ’ত্মহ’ত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন কেউ কেউ। আবার একটি চক্র আন্তর্জাতিক প’র্নোসাইটে আপ’ত্তিকর এই ভিডিওগু’লো বিক্রি করে টাকা কামাচ্ছে। নারীকে তার গো’পন মুহূর্তের তোলা ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পরিচিত পুরুষদের কেউ কেউ তার স’ঙ্গে অনৈ’তিক সম্পর্র্ক স্থাপনের জন্য চাপ দিচ্ছে। সাইবার ক্রা’ইমের নতুন এই ধরনকে প্রযুক্তিবিদরা ‘সে’ক্সটোরশন’ বলছেন।

Pop Ads

বিশেষজ্ঞদের মতে, জঘন্য এই অ’পরাধে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের যে ক্ষ’তি হয় তা অ’পূরণীয়। আর এই অ’পরাধের জন্য অ’পরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি যাব’জ্জীবন কারা’দন্ড বা মৃ’ত্যুদন্ড করার দাবি জানান তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর দেশে সাইবার অ’পরাধের যেসব মা’মলা হয়েছে এর অধিকাংশ (৭২ শতাংশের বেশি) মা’মলার বি’ষয় ছিল, সাবেক প্রেমিক তার ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রেমিকার স’ঙ্গে কা’টানো অন্তর’ঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ভাইরাল করে দেয়। আবার অ’পরিচিত অনেকে ভুক্তভোগী নারীকে ধ’র্ষণ করে পরে ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার হু’মকি দিয়ে পুনরায় ধ’র্ষণ করে।

এ অবস্থায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন আইনের সহায়তা নিলেও লোকল’জ্জার ভয়ে বেশির ভাগ নারীই অ’পরাধীদের কু’প্রস্তাব নীরবে মেনে নিচ্ছেন। অ’পমানজনক এ ঘটনা সইতে না পেরে এরই মধ্যে অনেক কিশোরী ও নারী আ’ত্মহ’ত্যা করেছেন। কেউ কেউ ভুগছেন মানসিক যন্ত্রণায়। বিবাহিত অনেক দম্পতির সংসারে ফাটল ধরেছে। আবার যৌ’তুকের দাবিতে অনেক স্বামী তার স্ত্রীর আপ’ত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ’পরাধী যে-ই হোক না কেন, এ ধরনের অ’পরাধের জন্য তাকে প’র্নোগ্রাফি আইন ও ডিজিটাল অ্যাক্টের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ডিজিটাল ও প’র্নোগ্রাফি আইনে অ’পরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি পর্যা’প্ত নয়। এ শাস্তি আরও বৃ’দ্ধি করে তা মৃ’ত্যুদন্ড বা যাব’জ্জীবন করতে হবে। সাইবার ক্রা’ইম করে নারীর সম্ভ্রমহানি করার ফলে একজন ভিকটিম মানসিকভাবে বারবার ধ’র্ষিত হয়। এমনকি এ অ’পরাধে যারা জড়িত তা যদি প্রমাণিত হয়, তবে কোনোভাবেই অ’পরাধীকে ছাড় দেওয়া যাব’ে না। এ জন্য প্রয়োজনে পলিসি তৈরি করতে হবে। আবার আইনের সঠিক প্রয়োগ না হলে শুধু অ’পরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে কিছু হবে না। দেখা যাচ্ছে, প’র্নোগ্রাফির শিকার ভুক্তভোগীরা পারিবারিক নি’র্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন।

এ জন্য শাস্তি আরও বৃ’দ্ধি করা দরকার। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের যে ধা’রা আছে, সেগু’লো পর্যালোচনা করে যদি কঠোর শাস্তির বি’ষয়টি উল্লেখ করে কিছু সংযোজন ও সংশোধনী আনা যায়, তাহলে অ’পরাধ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাব’ে। সাইবার ক্রা’ইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের তথ্যে, ২০১৯ সালে ১৫.৩৫ শতাংশ ব্যবহারকারীর ছবি বিকৃত করে অনলাইনে প্রচার করা হয়। আর এর মধ্যে বেশির ভাগ ভুক্তভোগীই নারী এবং এদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া তথ্যে, প্রতি বছর দেশে গড়ে ১১ জন নারী সাইবার অ’পরাধের শিকার হয়ে আ’ত্মহ’ত্যা করেন।

দেখা যায়, ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেক নারীর ভয়’ঙ্কর এই অ’পরাধের শিকার হওয়ার আগে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়। এরপর সেই অ্যাকাউন্ট থেকে ভুক্তভোগীর আপ’ত্তিকর ছবি হ্যাকাররা পোস্ট করে। সাধারণত ব্যক্তিহিং’সা চরিতার্থ করা, জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, ব্ল্যা’কমেইল করে অর্থ আ’দায়, মানসিকভাবে অত্যাচার করতে একজন অ’পরাধী নারীদের আপ’ত্তিকর ছবি ও ভিডিও অনলাইনে দিয়ে দেয়। কিশোরী, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন ব্যবহারকারী, তারাই এর শিকার বেশি হয়। এ জন্য ভুক্ত ভোগীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন দারুণভাবে ক্ষ’তিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও লোকল’জ্জায় ভুগছেন।

প’র্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর ধা’রা ৮(২) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি প’র্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তিমর’্যাদার হানি করলে বা ভয় দেখিয়ে অর্থ আ’দায় করলে বা কোনো সুবিধা আ’দায় করলে বা ব্যক্তিকে ধারণকৃত ভিডিও দিয়ে মানসিক নি’র্যাতন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারা’দন্ড এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ ধরনের অ’পরাধের জন্য অ’পরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃ’ত্যুদন্ড করা উচিত। তবে শুধু শাস্তি বৃ’দ্ধি করলেই হবে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগও থাকতে হবে। যদি আইনের প্রয়োগই না হয় তবে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েও কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার কোনো অন্তর’ঙ্গ ভিডিও অনলাইনে যদি ছাড়া হয়, সেটি কিন্তু ভিডিও করার সময় দুজনের সম্মতিতেই ধারণ করা হয়েছিল। এ জন্য এই ভিডিও স্বামী ও স্ত্রী যিনিই অনলাইনে ছাড়বেন, তিনিই অ’পরাধী হবেন। দেখা যায়, নিজের বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, পরিবারের অন্য ভাইবোনদেরও বিয়ে বন্ধ হয়ে পড়ার ভয়সহ বিভিন্ন চাপে বি’ষয়গু’লো ভুক্তভোগী চেপে যান। আবার অ’পরাধীরাও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে বি’ষয়টি চেপে যাওয়ার হু’মকি দেয়। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘অ’পরাধ যতটুকু, তার শাস্তিও ততটুকু হওয়া উচিত।

আবার দেখা যায়, মা’মলায় জেরার ক্ষেত্রে অনেক অবান্তর প্রশ্ন করে নারীকে প্রায়ই বিব্রত করা হয়। আইন সংশোধন করে আমা’দের এই বি’ষয়গু’লোতে পরিবর্তন আনতে হবে। এ বি’ষয়গু’লো যুগো’পযোগী করতে হবে। পাশাপাশি মানবাধিকারের বি’ষয়গু’লোও বিবেচনায় আনতে হবে। সাইবার ক্রা’ইমে অনেক কিছু এসেছে। দেখা যাচ্ছে স্বামী ও প্রেমিকরা প্রিয়জনের আপ’ত্তিকর ছবি অনলাইনে দিয়ে দিচ্ছে। এগু’লো পোস্ট দিয়ে একজন মেয়ের চরিত্র নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে। প’র্নোগ্রাফির শিকার ভুক্তভোগীরা একই স’ঙ্গে পারিবারিক নি’র্যাতনেরও শিকার হচ্ছে। এ জন্য এই অ’পরাধের শাস্তি আরও বৃ’দ্ধি করা দরকার।