ফেসবুকে পোস্ট দিলেন ‘কতটুকু বাঁচবেন?’ দেড় ঘণ্টা পর দুর্ঘটনায় মৃত্যু

79

নিজস্ব প্রদিবেদকঃ নিজেকে বহন করা প্রাইভেট কারে বসে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিলেন যুবক। জীবন আর আয়ুষ্কাল নিয়ে ভাবনার কথা জানালেন ফেসবুকে। আর এই পোস্ট দেওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পর ওই গাড়ি দুর্ঘটনায়ই নিহত হলেন আল আমীন (৩০) নামের ওই তরুণ।
চলন্ত গাড়িতে বসেই তিনি লিখলেন, কতটুকু বাচঁবেন? ৬০,৭০ কিংবা ভাগ্যগুণে ৮০।
এক বছরে ৩৬৫ দিন হয়। প্রতিদিনে ৮৬ হাজার ৪০০ সেকেন্ড। খুব বেশি সময় নিয়ে আসেননি তো! টিকটক করে সেকেন্ড কিন্তু চলে যাচ্ছে। মৃত্যু খুবই সন্তর্পণে এগিয়ে আসছে।টুপ করে হাতে জমে থাকা সব সেকেন্ড শেষ হয়ে আসবে একদিন…ভালো বই পড়ুন, ভালো কাজ করুন, সময় করে বেড়িয়ে আসুন চমৎকার কোনো জায়গায়। রাত জেগে আকাশ দেখুন। স্রষ্টাকে স্মরণ করুন, কাউকে প্রাণভরে ভালোবাসুন, কাউকে ভালোবাসার সুযোগ করে দিন। ফেসবুক পোস্টে এমন প্রেরণাদায়ক কথা লিখে ফেসবুকে আপলোড দিয়েছিলেন আল আমীন।দেড় ঘণ্টা পেরোতেই রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার।
নিহতের বন্ধু পরাগ জানান, একটি দাওয়াতে অংশগ্রহণের পর বুধবার (৫ জুলাই) রাতে আল আমীন চট্টগ্রাম থেকে মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় ফিরছিলেন। মাইক্রোবাসে তার সঙ্গে রেস্টুরেন্ট মালিক ও তার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে নরসিংদীর হাড়িখোলা রেলক্রসিং পার হওয়ার পর মাইক্রোবাসটি একটি ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে গেলে ভেতরে থাকা আরোহীরা গুরুতর আহত হন।কিন্তু ঘটনাস্থলেই আল আমীন মারা যান। তার মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালে রয়েছে। আহত অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পরাগ আরো জানান, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর আল আমীনের মরদেহ নিয়ে তারা ঈশ্বরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন। এ কথা বলার সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিহত তরুণের গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। আল আমীনের মৃত্যৃ নিয়ে তার বন্ধুবান্ধবের শত শত আবেগঘন মন্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত আল আমীন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. আবদুর রাশিদের পুত্র। তিনি রাজধানীর রামপুরা এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট চালাতেন। পাশাপাশি নিজ গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় নানা ধরনের মানবিক ও সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন। ‘রাজীবপুর পরিবার’ নামে তার একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপের তিনি অ্যাডমিন ছিলেন।
এলাকার এক যুবক জাকির মোল্লা বলেন, আল আমীন ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণা। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। এ ধরনের মৃত্যু মানা যাচ্ছে না।
ফেসবুকে আপলোড করা তার এই লেখা পড়েছেন অনেকে। প্রশংসামূলক মন্তব্যও লিখেছেন বন্ধুরা। এর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ল ফেসবুকে।
নিহত আল আমীনের এলাকা উচাখিলা ইউনিয়নের শিপন সরকার এ প্রতিনিধিকে ফোন করে জানান, আল আমীন তার আচরণ দিয়ে অল্পতে মানুষের মন জয় করে নিতেন। ভালো কাজে তাকে সব সময় পাশে পাওয়া যেত। করোনাকালীন তিনি উপজেলা প্রশাসনের গঠন করা স্বেচ্ছাসেবক কমিটির সদস্য হিসেবে মাঠে কাজ করেছেন। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার এই মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টকর।