রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে ১জন নিহত

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে ১জন নিহত

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে লক্ষ্মীপুরে যুবদলের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশসহ বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। দেশব্যাপী বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে আজ মঙ্গলবার এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর গাবতলী থেকে শুরু হয় বিএনপির পদযাত্রা। নেতা-কর্মীরা মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে পৌঁছালে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়। পরে শুরু হয় সংঘর্ষ। দলটির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, পদযাত্রাটি বাঙলা কলেজের সামনে পৌঁছালে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় পদযাত্রা থেকে পাল্টা ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়।

Pop Ads

একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় একটি মোটরসাইকেল ও একটি সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।মিরপুরে বিএনপির পদযাত্রায় হামলা হয়। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে একটু সমস্যার কথা শুনেছি। পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে সজিব হোসেন নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবদল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমসহ ৫০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মী। নিহত যুবদল কর্মী সজিব হোসেন সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সাহাবুদ্দিন সাবু এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার বিকেলে শহরের রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে। পদযাত্রা কর্মসূচিতে নেতৃত্বে দেন দলটির প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া।ফেনীতে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংষর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট

পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের গোডাউন রোডে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসভবনের সামনে থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা পদযাত্রা বের করে। পদযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে ঝুমুর স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। মিছিলটি রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহুমদ ইব্রাহিম, যুবদল কর্মী সজিব হোসেনসহ অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী। এ ছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিনসহ ৫০ পুলিশও আহত হয়। একপর্যায়ে দুটি মোটরসাইকেল, দুইটি প্রাইভেট হাসপাতালসহ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন নেতা-কর্মীরা।

পরে আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর গুলিবিদ্ধ যুবদল কর্মী সজিব হোসেন মারা যান। অন্য আহতদের সদরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।পিরোজপুরে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে পুলিশ বাধা দেয় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে যুবদল নেতা সজিব হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দুই শ’র বেশি নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

পাখির মতো গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না উল্লেখ করেন এ্যানি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ঘরে ফিরে যাবে না বিএনপি। জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। পরে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়।

পুলিশ সুপার বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা ও সদর থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিনসহ ৩০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সজিব নামে এক যুবক নিহত হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।খাগড়াছড়িতে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

কিশোরগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জেলা শহরের ঈসাখাঁ রোডে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে সমগ্র জেলা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। এ সময় বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা।

প্রথমে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের মাঠে জমায়েত হয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরে জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের নেতৃত্বে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে ঈসাখাঁ রোডের মাঝামাঝি পদযাত্রাটি পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করলেই শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোঁড়ে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা করছিলাম। পুলিশ বাধা দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি করেছে। গুলিবিদ্ধসহ আমাদের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এসব করে আমাদের দমানো যাবে না। আমরা এ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আছি থাকবও।’

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাক সরকার বলেন, ‘পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে হঠাৎ বিক্ষোভ মিছিল করে আমাদের পুলিশের ওপর চড়াও হয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা। জনগণের জানমাল রক্ষার্থে তাৎক্ষণিক কয়েক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আমাদের পুলিশও আহত হয়েছেন কয়েকজন। এসব বিষয় পরে জানানো হবে।’

পিরোজপুরেও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের সার্কিট হাউজ সড়কে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে। এতে সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ দশজনকে আটক করেছে।

পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন সাত পুলিশ সদস্য আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন ও সদস্যসচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু দাবি করেছেন, পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিচার্জে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংঠনের ১০-১২ জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, শহরের সার্কিট হাউজ সড়কে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালীন বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করে এবং ইট ছুড়তে থাকে। এতে পুলিশের ৭ সদস্য আহত হয়। তাদের পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হামলায় জড়িত ১০ জনকে আটক করে।

ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, পদযাত্রার নামে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপরে হামলা চালায়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে অতর্কিত হামলা চালায়।কিশোরগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফেনীতে পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পৃথক স্থানে সংঘর্ষে বিএনপি-পুলিশ, সাংবাদিকসহ আওয়ামী লীগের শতাধিক কর্মী আহত হয়েছেন। বিকেলে বিএনপি পদযাত্রা শেষ করে যাওয়ার সময় শহরের ইসলামপুর রোডের সামনে পুলিশ ও বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।

এ সময় বিএনপি-পুলিশ সাংবাদিকসহ আওয়ামী লীগের শতাধিক লোকজন আহত হয়। এ ঘটনায় ফেনীতে রণক্ষেত্র তৈরি হয়। বিএনপির দাবি, সংঘর্ষে তাদের ২০০-এর বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। অন্যদিকে বিকেল ৫টার দিকে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের উদ্দেশে বড় মসজিদের সামনে দিয়ে একটি মিছিল প্রেসক্লাব ভবন পার হবার সময় মিছিলের পেছনের অংশে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ককটেল নিক্ষেপ করলে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা ছিটকে পড়ে।

এ সময় প্রেসক্লাব ভবন, কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালায় সন্ত্রাসীরা।জেলা পুলিশ সুপার মো. জাকির হাসান বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ নিরাপত্তার জন্য ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

এদিকে, খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে বিএনপি জেলা কার্যালয়ের সামনে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পৌরসভা কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। আগুন দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে। ভাঙচুর করা হয় আরও কয়েকটি যানবাহন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে বিজিবির সদস্যরা। সংঘর্ষের জেরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পৌরশহরে। শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভাঙচুরের আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে দোকানপাটও।

রাজবাড়ীতে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দলটির অন্তত ১৫ নেতা-কর্মী আহত হন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শহরের কেন্দ্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্বরের সামনে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম গ্রুপের সঙ্গে লিয়াকত আলী ও হারুন গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।

বিএনপির পদযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ দলীয় কার্যালয়ে জমায়েত হন। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে খৈয়ম গ্রুপ দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের সময় লিয়াকত-হারুন গ্রুপের কর্মীরা বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষের বাধে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় দুই গ্রুপের অন্তত ১৫ নেতা-কর্মী আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।