শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে প্রধান শিক্ষক খালেদা খাতুন

101
শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে প্রধান শিক্ষক খালেদা খাতুন

বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন ধরনের বাগান দেখা যায়। অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদে যেসব বাগান দেখা যায় তার অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যেকোন গাছ, এমনকি শাকসবজিও ফলানো সম্ভব। এসব বাগান করে সফলতাও পাচ্ছেন অনেকে। শখ থেকে হয়ে উঠছে বানিজ্যিক চিন্তাধারাও।

এমন একজন শখের ছাদ বাগানি খুলনার পাইকগাছার সফল প্রধান শিক্ষক খালেদা খাতুন। তিনি তার নিজ বসতবাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদে বিভিন্ন প্রকারের ফল, ঔষধী, সবজি ও ফুলের চাষ করেছেন। তার ছাদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই ছাদ বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

Pop Ads

শিক্ষক খালেদা খাতুন পাইকগাছার গদাইপুর ইউনিয়নের ২৬ নং মানিকতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক। স্বামী এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি হিসাবে দৈনিক যায়যায়দিন, ফধরষু ড়নংবৎাবৎ ও দৈনিক গ্রামের কাগজ পত্রিকায় কর্মরত রয়েছেন।

খালেদা খাতুন পেশায় একজন শিক্ষক হলেও বাগান করার প্রতি তার আগ্রহ ছোট বেলা থেকেই। ছোট বেলায় বাড়ির আঙ্গিনা কিংবা আশপাশ যেখানে জায়গা পেতো সেখানেই তিনি বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা রোপন করতেন। ছোট বেলার শখকে তিনি একটি মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

গত ১৯৯৭ সালের ২৯ জুন থেকে অদ্যবধি পৌর সদরের বান্দিকাট গ্রামে খালেদা খাতুন তার পরিবারকে নিয়ে এক সঙ্গে জীবনযাপন শুরু করেন। বসবাসের শুরু থেকেই নিজ বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা আশপাশ তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে দু একটা গাছা লাগিয়ে বাগান করা শুরু করেন। বসতবাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদকে এখন তিনি জীবন্ত বাগানে পরিণত করেছেন। ছাদের কোথাও তিনি লাগিয়েছেন কমলা, মাল্টা, আপেল, কদবেল, বেদানা, লিচু, আমলকি, সিডলেস কাগুজী লেবু ও চায়না কাগুজী লেবু, ড্রাগন, আপেল,আজোয়া সৌদি খেজুর,বারোমাসি আমড়া,বল সুন্দরী কুল,চায়না পেয়ারা সহ বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ, কোথাও লাগিয়েছেন পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন,করেল্লা, শসা, কাকুড়, ঢেঁড়স,লাল শাক,পালংশাক,মুলা,ওল কপি,লাউ,সীম,কয়েকটি প্রজাতির মরিচ সহ অনেক ধরণের সবজি, আবার কোথাও লাগিয়েছেন দোপাটি, রঙ্গন, জুঁই, হাসনাহেনা, গোলাপ, জবা, গাঁধা, রজনীগন্ধা, লজ্জ্বাবতী,ক্যকটাস,বনসাই বটগাছ,নীল অপারজিতা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ।

ছাদের কোন অংশে আবার লাগিয়েছেন পাথর কুঁচি, কালমেঘা, তুলসী, ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রক গাছ সহ বিভিন্ন ধরণের ঔষধী গাছ। সবজি, ফল আর ফুলে ভরে গেছে ছাদের সমস্ত অংশ। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন ছাদ, নাকি সবুজ ফসলের মাঠ। সব ধরণের সবজি ও ফল কীটনাশক ব্যবহার না করেই এবং জৈবসার ব্যবহার করে উৎপাদন করছেন শিক্ষক খালেদা খাতুন।

উৎপাদিত সবজি ও ফল নিজের পরিবারের চাহিদা পুরণ করে অতিরিক্ত ফল ও সবজি আত্মীয় স্বজনের মাঝে বন্টন করেন বলেও তিনি জানান। খালেদা খাতুন শিক্ষকতা ও স্কুল, কলেজ পড়ুয়া তিন ছেলে মেয়ের যতœ নেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় তিনি বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যবহার করেন।

এ ব্যাপারে শিক্ষক খালেদা খাতুন জানান, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে করোনাকালীন সময়ে আমার বিদ্যালয়ে ছুটি পড়ায় ওই সময় থেকে অনেক গাছ লাগিয়ে ছাদবাগান গড়ে তুলি। ছোট বেলা থেকেই বাগান করা আমার শখ। আমার বাড়ীর সাথে তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে বাগান করা শুরু করি। প্রতিদিন ভোর ৫টার দিকে এবং স্কুল থেকে ফিরে বিকালে এক দেড় ঘন্টা করে বাগানের পরিচর্যার কাজ করি।

গত ৩/৪ বছরের ব্যবধানে ছাদ ছেয়ে গেছে সবজি ও ফল-মূলে। আমার পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অনেক সবজি ও ফলমূল অতিরিক্ত থেকে যায়। প্রতিদিন লোকজন যখন আমার বাগান দেখতে আসে তখন একদিকে খুব ভালো লাগে। অপরদিকে নিজেকে মনে হয় ছাদ বাগান করে আমি মনে হয় সফল হয়েছি।

ভবিষ্যতে ছাদে ড্রেনেজ সিষ্টেম ও বাড়ির সামনে বড় পরিসরে বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে ওই শিক্ষক জানান। খালেদা খাতুনের ছাদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই এ ধরণের বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি খালেদা খাতুনের ন্যায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ছাদে বাগান করার মত নানন্দিক পারিবারিক কাজকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। এতে নিজে ও তার পরিবার সহ সমাজ উপকৃত হবে।