সাইবার অপরাধীরা বেপরোয়া

6
সাইবার অপরাধীরা বেপরোয়া

1.ম্যালওয়্যার দিয়ে চুরি করছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
2.সতর্ক না হলে বড় আক্রমণের শঙ্কা
মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার থেকে ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য চুরি করে নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। কখনো কখনো চুরি করা তথ্য অর্থের বিনিময়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের কাছেও। ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য চুরি ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটারে ম্যালওয়্যারের আক্রমণ বেড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে সরকারের সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত প্রকল্প কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট)। সংস্থাটি বলছে, গত অক্টোবর থেকে পাঁচটি ম্যালওয়্যারের ৬ হাজার ৫২১টি আক্রমণ চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন না হলে যে কোনো সময় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের সাইবার আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। নিকট অতীতে দেশ-বিদেশের একাধিক বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ চুরিরও নজির আছে।

Pop Ads

সাইবার (৪)
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভির হাসান জোহা ইত্তেফাককে বলেন, ‘বাংলাদেশে তথ্য চুরি সাধারণ একটা ঘটনা। আমাদের সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই পাইরেসি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। পাইরেসি সফটওয়্যার ব্যবহারে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ক্র্যাক ভার্সনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য চুরি হয়ে থাকে। সাইবার ক্রাইমটা হচ্ছে বর্ডারলেস। কোন দেশ থেকে অপরাধ হচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করা কঠিন। হ্যাকিং হলো এমন একটা বিষয়, এটা হলে থানায় অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া দুরূহ। এ ধরনের অপরাধ তদন্ত করার জন্য পুলিশের যে ধরনের জনবল ও ল্যাবরেটরি থাকার দরকার ছিল, সেটা একেবারেই অপ্রতুল।

কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম বলছে, গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত রেড রাইন স্টেলারের আক্রমণের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৭, মেটা স্টেলারের ১ হাজার ৫৬৮, রাইজপ্রোর ৩৩৩, লুম্মাসিটুর ১৩৯ এবং রেকুনের ১১৪টি। তথ্য চুরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ম্যালওয়্যারগুলো সামগ্রিকভাবে ইনফো স্টিলার হিসেবে পরিচিত। এ ধরনের ম্যালওয়্যার মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ডিভাইস থেকে লগইনের তথ্য যেমন—ব্যবহারকারীর নাম, আইডি, পাসওয়ার্ড ও অন্য সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করে তা সাইবার অপরাধীদের কাছে পাঠায়। অপরাধীরা এসব তথ্য বড় ধরনের সাইবার আক্রমণের পরিকল্পনায় ব্যবহার করে। ব্যক্তি পর্যায়ে সংক্রমণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানও এই ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হতে পারে। সম্প্রতি এ ধরনের ম্যালওয়্যার সংক্রমণের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সাইবার (১)
কীভাবে নিরাপদ থাকতে পারেন: বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে বলেছেন, ম্যালওয়্যারের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চাইলে অপরিচিত কোনো নম্বর কিংবা ইমেইল থেকে আসা কোনো লিংকে ক্লিক করবেন না। নম্বরটি পরিচিত হলেও ভিন্ন কোনো মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিত, তিনি আসলেই কোনো লিংক পাঠিয়েছেন কি না। কারণ, পরিচিত ব্যক্তির মোবাইল ফোন কিংবা ইমেইল হ্যাক হলেও তার ফোনে থাকা সব নম্বর কিংবা ইমেইলে ভাইরাসটি নিজেই লিংক পাঠাতে পারে। আর ইমেইলের সঙ্গে আসা অ্যাটাচ করা ফাইল খোলার ক্ষেত্রেও সাবধান থাকা উচিত। ইমেইলে কোনো অ্যাপ বা সফটওয়্যার অপরিচিত কেউ পাঠালে তা মোবাইল ফোনে বা পিসিতে ইনস্টল করা উচিত নয়। অপরিচিত কারো কাছ থেকে আসা জিপ কিংবা অন্য কম্প্রেস করা কোনো ফাইল আনজিপ করাও উচিত নয়। এছাড়া ফেসবুক, ইয়াহু, জিমেইল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান থেকে ইমেইল এসে যদি কোনো লিংকে ক্লিক করে ‘লগইন’ করতে বলে, তাহলে খুব সতর্ক থাকতে হবে আসলেই এসব ইমেইল ঐ সব প্রতিষ্ঠানের কি না। ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে খুব সতর্কভাবে লক্ষ করতে হবে, তা এসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস কি না। অনেক সময় সাইবার অপরাধীরা এসব জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের কাছাকাছি ডোমেইন নিয়ে প্রায় একই রকম দেখতে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে লগ ইন করিয়ে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড চুরি করে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিশ্লেষক সুমন আহমেদ সাবির ইত্তেফাককে বলেন, ‘কোনো একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে আপনার মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করাতে পারে সাইবার অপরাধীরা। ম্যালওয়্যার যে কোনো ধরনের তথ্য আপনার ডিভাইস থেকে নিয়ে যেতে পারে। মেইল খোলার জন্য বা ফেসবুক ব্যবহারের জন্য যে পাসওয়ার্ড দিচ্ছেন, সেটাও সে নিয়ে যাচ্ছে। আবার আপনাকে ব্যবহার করে সে অন্যজনের ডিভাইসে বিভিন্ন লিংক পাঠানোর মাধ্যমে কিংবা ফাইল ট্রান্সফারের সময় ঢুকে যাচ্ছে।’

ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্রাউজারও নিয়মিত ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিহাস সংরক্ষণ করে থাকে, যা কুকিজ নামে পরিচিত। কুকিজে থাকা তথ্য কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীর উপযোগী কনটেন্ট বা বিজ্ঞাপন দেখিয়ে থাকে ব্রাউজারগুলো। সম্প্রতি ক্রোম ব্রাউজারে সংরক্ষণ করা কুকিজ থেকে ব্যবহারকারীদের গুগল অ্যাকাউন্টের তথ্য চুরি করতে সক্ষম এমন একটি ম্যালওয়্যারের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ব্লিপিং কম্পিউটারের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

সাইবার (৩)
কারা এই ম্যালওয়্যার আক্রমণ করছে জানতে চাইলে সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘দেশেও কিছু আছে। কিন্তু দেশের বাইরের হ্যাকাররা এটা বেশি করছে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাইয়ে আমেরিকান ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চের খবরে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেটে। বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই হলেও এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।