হরিণাকুন্ডুতে গাছকাঁটাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পের আইসি এসআই শামিম আক্তার ষড়যন্ত্রের শিকার

সুপ্রভাত বগুড়া (রাসেল আহাম্মেদ ,ঝিনাইদহ): ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার সোনাতনপুর পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত আইসি এসআই শামিম আক্তার গত ৫ মে মঙ্গলবার দখলপুর থেকে অবৈধভাবে গাছ কেটে ঘরের ফার্নিচার বানানোর জন্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেছে।

এই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়ে যে, গত মঙ্গলবার ঝড়ে দখলপুর থেকে মৃগেবাথান পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ খালের উভয় পাড়ের দখলপুর বনায়ন সমিতির কয়েকটি গাছ ভেঙ্গে পড়ে যায়।এলাকার কিছু লোক ভেঙ্গে পড়া গাছগুলো কেটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় এলাকাবাসী পুলিশ ক্যাম্পে ফোন দিয়ে আইসি এসআই শামীম আক্তার কে ঘটনা জানান। এসআই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়ে কেটে রাখা গাছগুলো তাৎক্ষনিক সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। সাধুহাটি বাজার সংলগ্ন মেইন রোডের পৌছালে আলমসাধু গমির চালককে রাখতে বলেন।

Pop Ads

এরপর এসআই ফোনের মাধ্যমে দখলপুর বনায়ন সমিতির সভাপতির সাথে যোগাযোগ করেন এবং গাছ গুলো নিয়ে যেতে বলেন। সে সময় দখলপুর বনায়ন সমিতির সভাপতি আলী হোসেন এসআইকে বলেন আগামীকাল বিকালে গাছগুলো নিয়ে যাবে। এর মাঝে কৌশলে সভাপতি আলী হোসেন ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে এসআইকে হেনস্তা করার লক্ষ্যে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের খবর দিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ দেন।

এ বিষয়ে দখলপুর বনায়ন সমিতির অন্যান্য সদস্যদের সাথে কথা হলে একজন সদস্য রেজাউল ইসলাম, পিতা মহিউদ্দিন মিয়া, গ্রাম-মহারাজপুর তিনি বলেন, দখলপুর থেকে মৃগেবাথান রাস্তায় গাছ লাগানোর সময় তিনি ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে এই সমিতি কোন সদস্যের সাথে সভাপতি মতবিনিময় করেন না। এর মাঝে সভাপতি আলী হোসেন অনেকবার গাছ কেটেছেন কিন্তু তাকে কখনো ডাকেনি। এই গাছগুলো কেটে সভাপতি কী করেছেন তা বলতে পারেননি তিনি।

তিনি আরো জানান, সমিতির সদস্য আছেন ঠিক কিন্তু এই সমিতির সব সিদ্ধান্ত সভাপতি একা নেন তাদের কাউকে কখনো ডাকেন না। এ পর্যন্ত তিনি একটি গেঞ্জি আর ২শত টাকা পেয়েছেন।আরেক সদস্য নান্নু পিতা: আবুল চেয়ারম্যান, গ্রাম: মহারাজপুর তিনি জানান, আমি ঐ কমিটির সদস্য আছি কিন্তু কত নং সদস্য তা তিনি জানেন না, এই সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল পিতা আকবর। সভাপতি আবুল হাসান । এসআই শামীম আক্তার গাছ কেটেছেন এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

তিনি পরে লোক মারফতে শুনেছেন। বনায়ন সমিতির পক্ষ থেকে তাকে কখনো কোন কাজে বা মিটিং-এ ডাকা হয়না। গ্রামের চৌকিদার মকবুল হোসেন জানান, তিনিও এই সমিতির সদস্য। তিনি বলেন, এর আগে অনেকবার গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু এ গাছ কেটে কি করা হয় তা তিনি জানেন না। গত ৫ মে মঙ্গলবার ঝড়ে একটি গাছ পড়ে গিয়েছিলো এলাকার কিছু লোক গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি এসআই শামীম আক্তার কে ফোন দিয়ে ছিলেন। তার ফোন পেয়ে শামীম আক্তার ঘটনাস্থলে আসে এবং গাছ গুলো নিয়ে যায়। তিনি জানান শামীম আক্তার গাছগুলো কাটেনি।

ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার সাইফুর রহমান (মিঠু) জানান, গাছ কাটার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। পরে শুনেছি এসআই সংবাদ পেয়ে ঝড়ে ভাঙ্গা গাছ গুলো তার হেফাজতে নিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে দখলপুর যাত্রীছাউনি থেকে মৃগেবাথান পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ খালের দু পাড়ের গাছ তারা জবরদখল করে নেয়। দখলপুর বনায়ন সমিতি গঠিত হয়েছিল কিন্তু সে সমিতি বিলুপ্তি হয়ে গেছে। কমিটির নাম ভাঙিয়ে সভাপতি আলী হোসেন বন বিভাগের সাথে চুক্তি করে একাই ভোগ করে খাচ্ছেন ।

এ পর্যন্ত অনেক গাছ কাটা হয়েছে।’স’মিলের মালিক হায়দার আলী জানান, গাছগুলো কে বা কারা রেখে গেছেন তা তিনি জানেন না। কিন্তু গাছগুলো ফাড়াই করার ব্যাপারে কিছু বলে যাননি। পরের দিন বন বিভাগের লোক এসে গাছগুলো নিয়ে গেছে।দখলপুর বনায়ন সমিতির সভাপতি আলী হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান, তিনি প্রথমে দেখা করতে রাজি হলেও পরবর্তীতে তিনি বলেন উপর মহলে যোগাযোগ করে তারপর কথা বলবেন। দেখা করতে চাইলে তিনি দেখা করেন না।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গাছগুলো এসআই কাটেনি। গাছগুলো ঝড়ে ভেঙ্গে যায় পরে কিছু লোক আকাশমনি গাছের গুড়ি কাটছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই শামীম আক্তার ঘটনাস্থলে গিয়ে কেটে রাখা পাঁচটি গুড়ি নিয়ে যান এবং সাধুহাটি মেইন রোড সংলগ্ন হায়দার আলীর ‘স’মিলের পাশে রাখেন।

সোনাতনপুর পুলিশ ক্যাম্পের বর্তমান (ভারপ্রাপ্ত) আইসি এ এস আই বায়েজিদ বলেন বর্তমান কোরনা ভাইরাসের কারণে আমাদের একটু কঠোর ভূমিকায় থাকতে হয়েছে। যে কারণে কিছু সুবিধাবাদী লোকের অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে এসআই শামিম রেজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ফাশানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যে গাছের জন্য এসআই শামিম আক্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেই গাছ থেকে ঊর্ধ্বে ১০ মন খড়ি হতো। তিনি এই ষড়যন্তকারীদের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছেন।

এসআই শামীম আক্তার জানান,ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে বনায়ন সমিতির সভাপতি আবুল হাসান সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। আমি গাছগুলো কোথাও লুকিয়ে রাখার জন্য নিয়ে আসিনি । ঘটনাস্থল থেকে চুরি হওয়ার হাত থেকে গাছ গুলো উদ্ধার করি এবং জানতে পারি গাছগুলো দখলপুর বনায়ন সমিতির গাছ তাই সমিতির সভাপতিকে গাছগুলো নিয়ে যেতে বলি। কিন্তু তিনি গাছগুলো না নিয়ে উল্টো আমাকে ফাঁসাচ্ছেন। তিনি এই ঘটনাকে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবী করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here