আদমদীঘিতে করোনার সম্যাসায় ভাল নেই মধ্যবিত্তদের পরিবার

সুপ্রভাত বগুড়া (শিমুল হাসান আদমদীঘি,বগুড়া): বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরে রেলগেটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছদ্ধনাম এনামুল হক। ভালোই চলে তার দোকান। দু’জন কর্মচারীও আছেন। তিন ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রেলওয়ে ইয়ার্ড কলোনীতে একটি পরিত্যক্ত রেলের জায়গায় টিনের বাড়ি বানিয়ে।

ব্যবসা থেকে যে আয় হয় তাতেই সংসারটা ভালোভাবে চলে যায়। কিন্তু তার কোনো সঞ্চয় নেই। গত ১০ বছর ব্যবসা করলেও এমন সংকটে কখনোই পড়েনি তিনি। ৪৫ দিন ধরে দোকান বন্ধ। হাতে কিছু জমানো টাকা ছিল তা দিয়ে ১০ দিনের বাজার করেছেন।

Pop Ads

করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠিন অনিশ্চয়তায় পড়ে অন্ধকার দেখছেন চোখে মুখে। কিভাবে দোকান ভাড়া দেবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন, সেই চিন্তায় ঘুম আসে না তার। মাঝে মধ্যে গভীর রাতে আঁতকে ওঠেন তিনি। কিন্তু কাউকে এমন কষ্টের কথা বলতেও পারছেন না।

অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেন, বড় লোকের টাকার অভাব নেই। গরিবরা ত্রাণ পায়। আর মধ্যবিত্তরা না খেয়ে চোখের পানি লুকায়। কাউকে প্রকাশ করতে পারে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি সান্তাহার ঢাকাপট্টি একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতো। বেশ ভালোই বেতন পেতেন।

এক ছেলে ও স্ত্রী কে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্তমানে কারখানা বন্ধ। এই অবস্থায় চিন্তায় তার মাথায় হাত। কী করবেন, কী করা উচিত, ভেবে উঠতে পারছেন না। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সারা দেশে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে গৃহবন্দি সাধারণ মানুষ।

নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য তুলে দিচ্ছেন অনেকেই। সরকারও গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে মধ্য বিত্তের পাশে নেই কেউ। ঘরে খাবার না থাকলেও মধ্য বিত্তরা লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। সারা দেশে লাখ লাখ মধ্যবিত্তের অবস্থাও প্রায় একই।

আদমদীঘির সদর এলাকায় কথা হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক। আবেগাপ্লত হয়ে বলেন, এটা কোনো জীবন হলো। সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষু লজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশ করা যায় না। ওই যে আমরা মধ্যবিত্ত। আমাদের কোনো কষ্ট নেই। আছে শুধু সুখ। কিন্তু এর আড়ালে আমরা যে কত কষ্টে জীবন যাপন করি, তা বোঝানো যায় না।

কেউ বোঝারও চেষ্টা করে না। করোনায় আক্রান্ত দু’জনের যাওয়ার ঘটনায় বগুড়া জেলাসহ সব এলাকা লকডাউন হয়ে আছে দীঘদিন ধরে। ফলে ঘরবন্দি লাক্ষো মানুষ। সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে প্রতিদিনই কেউ না কেউ খাবার বিতরণ করেন। কিন্তু মধ্যবিত্তরা আছেন বড় বিপদে।

ওই এলাকায় বসবাস করেন এমন একজন কসমেটিকস ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘নিম্ন বিত্তের লোকজন তো সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে, বে-সরকারি সহায়তা পাচ্ছে, কিন্তু মধ্যবিত্তের কী হবে? তার ঘরে খাবার শেষ হয়ে আসছে। এখন অল্প অল্প করে খাচ্ছেন। ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকালে বুকটা ফেটে যায়।

কারণ তারা কখনোই খাবারের কষ্ট করেনি। খাবার টেবিলে বসলে কান্না আসে। যারা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভর করেন, তারা পড়েছেন বেশি বিপদে। যেমন মহসিন আলী পেশায় আইনজীবী।

সান্তাহার ভাড়া বাড়িতে থাকেন তিনি। করোনা ভাইরাসের কারণে বগুড়া আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তার উপার্জন আপাতত বন্ধ। মাস শেষে তার নির্ধারিত বেতন নেই। তার ভরসা প্রতিদিনের কাজের ওপর, মামলার ওপর। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরো বাড়ি ভাড়া দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় তার পক্ষে।

মধ্যবিত্তদের দুর্দশার কথা কেউ কেউ ফেসবুকেও তুল ধরছেন। একজন লিখেছেন, সবাই গরিব নিয়ে ব্যস্ত, আপনার পাশের মধ্যবিত্তদের খবর নিয়েন, বাসায় বাজার সদায় আছে, নাকি মুখ চেপে না খেয়ে দিন পার করছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here