কাচালংয়ে মেঘলা চিতার দেখা

53
কাচালংয়ে মেঘলা চিতার দেখা

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে কাচালং সংরক্ষিত বন। গত জুলাই ও আগস্টে সেখানে বিশেষ ক্যামেরা স্থাপন করে এ দেশে অতি বিপন্ন মেঘলা চিতার টিকে থাকার প্রমাণ পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এই বনে ক্যামেরায় স্তন্যপায়ী অতি বিপন্ন ও বিপন্ন অন্তত ১১টি বন্য প্রাণী ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে সুন্দরবনের পর কাচালং বনেই বিপন্ন প্রাণীর আবাস বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, মেঘলা চিতা বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্তির পথে। গবেষকদের ধারণা, শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় এখনো টিকে আছে। তবে এবার ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে জানা গেল, কাচালং বনে মেঘলা চিতার অবাধ বিচরণ। একটি–দুটি নয়, বেশ কিছু মেঘলা চিতা রয়েছে এই বনে।

Pop Ads

গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘলা চিতার অস্তিত্ব পৃথিবীতে সংকটাপন্ন। আইইউসিএন মেঘলা চিতাকে বাংলাদেশে অতি বিপন্ন হিসেবে ঘোষণা করেছে। ইংরেজিতে প্রাণীটিকে বলা হয় ক্লাউডেড লেপার্ড। একেকটা মেঘলা চিতার ওজন ১৭ থেকে ২০ কেজি। লম্বা তিন ফুটের বেশি। এগুলো বৃক্ষচর।

গাছে চলাফেরার সময় লেজটি শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। মেঘলা চিতাকে কেউ কেউ গেছো বাঘ কিংবা লাম চিতা নামেও চেনেন। মেঘলা চিতার পিঠের দিকে জলপাই হলুদের ওপর গাঢ় বাদামি লম্বাটে ও গোলাকার বড় বড় চাকতির মতো রয়েছে। মুখে ও পেটে রয়েছে কালো ছোপ। বানর, কাঠবিড়ালি, ইঁদুর, গেছো ইঁদুর ও পাখি এই চিতার প্রধান খাবার। তবে মাঝেমধ্যে বন্য শূকর, হরিণ ও বন ছাগল শিকার করে।

কাচালং সংরক্ষিত বনে ক্যামেরায় মেঘলা চিতা ছাড়াও যে ১১টি অতি বিপন্ন ও বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী ধরা পড়েছে; সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্বেল চিতা, বন কুকুর, এশীয় কালো ভালুক, সাম্বার হরিণ, এশীয় হাতি, উলু বানর, উল্লুক, লম্বালেজি শজারু, পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ ও মথুরা।

২০২১ সালে কাচালং সংরক্ষিত বনে যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনিরুল এইচ খান। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে, কাচালং বনে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। সেখানে এখনো বেশ কিছু গয়াল রয়েছে বলে জানান তিনি। সেই বার গবেষক দলটির সঙ্গী হয়েছিলেন এই প্রতিবেদকও। গহিন বনে ছিলেন তিন দিন। দেখা মিলেছিল নতুন প্রজাতির আরও কিছু প্রাণীর।

তবে সংরক্ষিত বনে গবেষকদের পা পড়লেও বন কর্মকর্তাদের অনেকেই সেখানে যাননি। রাঙামাটি উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলছিলেন, ‘উত্তর বন বিভাগের অধীন কাচালং সংরক্ষিত বনটি শুধু মানচিত্রের মধ্যে দেখেছি। অনেক বড় এলাকাজুড়ে এখনো প্রাকৃতিক বন টিকে আছে, ভাবা কঠিন! জায়গাটি দুর্গম ও নিরাপত্তা–ঘাটতির কারণে আমরা সেখানে যেতে পারি না। তবে বন ও বন্য প্রাণী রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেক গবেষকের কাছে শুনেছি, সেখানে অতি বিপন্ন ক্লাউডেড লেপার্ডসহ বেশ কিছু বিপন্ন প্রাণী রয়েছে।’

কাচালং বনে বিশেষ ক্যামেরা স্থাপনে নেতৃত্ব দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাচালং সংরক্ষিত বনের অল্প কিছু জায়গায় আমরা ১৭টি বিশেষ ক্যামেরা স্থাপন করি। এর মধ্যে দুটি হারিয়ে গেছে, আর দুটি নষ্ট হয়েছে। ১৩টি ক্যামেরা সচল ছিল। এসব ক্যামেরায় অতি বিপন্ন মেঘলা চিতাসহ ১১টি বিপন্ন ও অতি বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী ধরা পড়ে। এ ছাড়া অসংখ্য সাধারণ বন্য প্রাণীও ধরা পড়ে।

গবেষক দলের ধারণা, পুরো বনে গবেষণা করা হলে আরও বিপন্ন, অতি বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির বন্য প্রাণীর দেখা মিলবে।