গায়ের জোরে ৫০ বছরের রাস্তায় প্রাচীর নির্মাণ, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ডাকাতি মামলা প্রভাবশালীর!

গায়ের জোরে ৫০ বছরের রাস্তায় প্রাচীর নির্মাণ,প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ডাকাতি মামলা প্রভাবশালীর! ছবি-আলমগীর

সুপ্রভাত বগুড়া (আলমগির ঠাকুরগাঁও): ৫০ বছর ধরে ব্যবহার করে আসা ৬টি পরিবারের একমাত্র চলাচলের রাস্তা দখলে নিতে প্রথমে ইট ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী, এরপর পাকাপোক্ত করতে নির্মান করেন প্রাচীর, স্থানীয়রা তা গুড়িয়ে দিলে সর্বশেষ কাঠ খড়ি রেখে তা আবারও বন্ধ করে রেখেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া নামক এলাকার মোশারফ হোসেন মুসা নামে এক ব্যক্তি।

শুধু কাঠ খড়ি রেখে বা চলাচলের রাস্তায় প্রাচীর নির্মান করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে থানায় মামলা না করে কোর্টে একটি মিথ্যা ডাকাতি মামলা করেছেন তিনি -এমন অভিযোগ করেন ভূক্তভোগি পরিবারের সদস্য মামুনসহ অন্যরা। বর্তমানে কোর্টে দায়ের করা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর নিকট তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান বালিয়াডাঙ্গী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো:
আব্দুস সবুর।

Pop Ads

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া নামক এলাকায় দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ব্যবহার করে আসা কয়েকটি পরিবারের চলাচলের একমাত্র পথটিতে গায়ের জোরে চলতি বছরের ২৭ জুন ইটের দেওয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেন মোশারফ হোসেন। এতে করে সেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা ৬টি পরিবার দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।তারা না পারছেন দৈনন্দিন কাজ সাড়তে বাইরে যেতে, না পারছেন বাজার-ঘাট করতে। ফলে চরম দূর্ভোগে দিনাতিপাত করছে সেই পরিবারগুলো।

মাঝে বর্ষার সময় কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে ভিন্ন পথ দিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন ভুক্তভোগি পরিবারের
সদস্যরা। বিষয়টি সুরাহার জন্য স্থানীয় চাড়োল ইউনিয়নে বেশ কয়েকবার সালিস বৈঠক করার কথা থাকলেও তাতে বসতে রাজি হননি সেই মোশারফ হোসেন। এছাড়াও বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ অভিযোগ পেয়ে তদন্তে গিয়েও সেই প্রভাবশালীর রোষানলে পড়েন। পরে উপায় না পেয়ে সুষ্ঠ সমাধানের আশায় অবরুদ্ধ পরিবারগুলো উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।কিন্তু জনপ্রতিনিধিদেরও কথা শোনেননি তিনি।

উপরন্তু গায়ের জোরে নিজের সেই প্রাচীর জিইয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা ফেওয়াজ সাদেক, নেওয়াজ সাদেক, সিদ্দিক হোসেন, আ:রশিদ, মোশারফ হোসেন, আল-মামুনসহ ৬টি পরিবারের যাতায়াত বন্ধ হয়ে তারা গত ৬মাস যাবৎ অবরুদ্ধ অবস্থায় দিনযাপন করছেন।
ভূক্তভোগি ফেওয়াজ সাদেক বলেন, আমার ভাই নেওয়াজ সাদেক তার ৫শতক জমি বিক্রিকালে আধাশতক জমি রাস্তার জন্য রেখে সাড়ে চারশতক জমি বিক্রি করে। আমরা দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছি। অথচ মোশারফ হোসেন এর পাশের বাড়ীর সাথে ঝগড়া-ঝাটি হওয়ায় আমাদের চলাচলের একমাত্র পথটি বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।

আমর জরুরী প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারছি না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে এ বিষয়ে সুরাহার জন্য বসার আয়োজন করা হলেও তিনি তা মানেন না। তিনি থানা-পুলিশও মানেন না। বিষয়টি জানতে চাড়োল ইউপি চেয়ারম্যান দিলীপ চ্যাটার্জীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মানুষ যে এতো নিষ্ঠুর ও অমানবিক হতে পারে তা সেই ঘটনা স্বচোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে আসা ৬টি পরিবারের একমাত্র চলাচলের পথটি হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়ে চরম অমানবিকার পরিচয় দিয়েছেন মোশারফ হোসেন। বহুবার বিষয়টি সমাধানের জন্য তাকে পরিষদে আসতে বলা হয়েছে।

তিনি কারোও কথা শোনেন না।শুনেছি সম্প্রতি তিনি ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যদের নামে ডাকাতি মামলা করেছেন। এ বিষয়ে ডাকাতি মামলার প্রধান আসামী ও ৬ মাস ধরে অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্য আল-মামুন জানান, আমার বিরুদ্ধে মোশারফ হোসেন মুসা যে অভিযোগ করছেন তা উদ্দেশ্য প্রনোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প।যেখানে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ স্বাক্ষী থাকে সেখানে এসব বানোয়াট গল্প ভিত্তিহীন। অসৎ উদ্দেশ্যে ৫০ বছরের চলমান রাস্তা অবৈধভাবে দখল করে সেখানে রাতারাতি প্রাচীর নির্মাণ করে ওই রাস্তা ব্যবহার করা ৬টি পরিবারকে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রেখে এই মুসা।

বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে সালিশ বৈঠক ডাকা হলেও তিনি কারো কথায় কর্ণপাত করেননি।দীর্ঘ ৬ মাস ধরে আমরা ৬টি পরিবারের মানুষেরা অন্যের জমি, খাল-খন্দ ও কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছি। যে রাস্তার জমি নিয়ে গন্ডগোল, সেই জমির সম্পুর্ণ মালিকও তিনি নন, অথচ দিনের পর দিন তিনি আমাদের মানবিক অধিকার হরণ করে আমাদের মানষিকভাবে
নির্যাতন করে চলেছেন। প্রথম দিকে ইটের প্রাচীর দিয়ে রাস্তাটি ঘেরা দিলেও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শে তা সম্প্রতি গুড়িয়ে দেয় এলাকাবাসি কিন্তু এখন সেখানে কাঠখড়ি দিয়ে আবারও রাস্তাটি পুণরায় অবরোধ করে রেখেছেন এই মুসা।

দিনরাত সেখানে নিয়মিত পাহাড়া দিচ্ছে তার সন্ত্রাসী বাহিনী, বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী এনে তার বাসাটি পরিণত করেছেন সন্ত্রাসীদের আস্তানায়। আমিসহ অবরুদ্ধ ৬টি পরিবারকে এলাকা থেকে উচ্ছেদসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলেছেন নিয়মিত। আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তাসহ বিষয়টি নিরসনে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মোশারফ হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারও জমিতে ব্যারিকেড দেইনি, আমার কেনা জমির উপর দিয়ে তারা যাতায়াত করতো, আমি আরসিসি পিলার দিয়ে বাড়ী করবো তাই জমিটি ঘিরে নিয়েছি। জমিটি তার কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জমিটির অর্ধেকের মালিক আমি ও বাকি অর্ধেক এর মালিক পার্শ্ববর্তী জমির মালিক লক্ষ্মী মাস্টার, তিনি আমাকে সেই জমিটি ব্যবহার করতে বলেছেন।

সিসি টিভির ফুটেজে দেওয়াল ভাঙচুরের ভিডিও দেখা গেলেও আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কোর্টে মামলা করেছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ডাকাতরা আমার দেওয়া দেওয়ালও ভাঙচুর করেছে এবং আমার বাসায় ঢুকে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ১০ লক্ষ টাকা ও ১৫ ভরি সোনার অলংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজন ছিলো আল মামুন। এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে পাঁচটায়

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত মোশারফ হোসেন এর বিরুদ্ধে লাহিড়ী হাটের সরকারি জমি জবরদখলের অভিযোগও রয়েছে।বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার জবরদখলকৃত প্রায় ২০ শতাংশ জমি উদ্ধারও করেছেন।