২০১৭ সাল থেকে স্কিপিং রোপ খেলা শুরু রাসেলের। স্কুলে থাকাকালীনই জেলা থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে স্কিপিং রোপে প্রথম হন। জাতীয় স্কিপিংয়ে অংশ নিলেও বাদ পড়ে যান সেবার। তখনই স্বপ্ন আঁটেন এই খেলায় বিশ্ব রেকর্ড গড়বেনই। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসেল এরপর বাসার আশেপাশে বিভিন্ন সড়কের ধারে যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন করেছেন স্কিপিং চর্চা। আত্মবিশ্বাস জন্মালে ২০১৯ সালে অনলাইনে আবেদন করেন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে। প্রথমে এক পায়ের দুটি ইভেন্টে চ্যালেঞ্জ করেন। একটি ৩০ সেকেন্ডের অন্যটি ১ মিনিটের । পারফরম্যান্স যাচাই করে গিনেস কর্তৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ করেন।
কথায় আছে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। তা আরও একবার প্রমাণ করলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার হরিহরপুর সিরাজপাড়া গ্রামের এক তরুণ। ২০ বছর বয়সী রাসেল ইসলামের বাবা কৃষক বজলুর রহমান। স্কিপিং রোপে অনন্য কীর্তি গড়ে চতুর্থবারের মতো গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে নাম লিখিয়ে এলাকাবাসীর গর্বে পরিণত হয়েছেন তিনি। গিনেস বুকে ‘এক পায়ের ৩০ সেকেন্ড স্কিপিং রোপে’ ১৪৪ লাফই এতোদিন ছিল সর্বোচ্চ। সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়ে রাসেল সম্পন্ন করেছেন ১৪৫ লাফ।
অন্য ইভেন্টে ১ মিনিটে এক পায়ে ২৫৬ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও তিনি সেই রেকর্ড ভেঙে করেছিলেন ২৫৮ বার। এই দুটি রেকর্ড গড়ে সনদপত্র (সার্টিফিকেট) হাতে পান ২০২১ সালের ২৯ জুলাইয়ে।তবে দুর্ভাগ্য রাসেলের, এক পায়ে ১ মিনিটে ২৫৮ বার লাফানোর রেকর্ড ভেঙে ফেলেন আরেকজন ভিনদেশী। কিন্তু হারতে সেখেনি যে তাকে হারানো কি এতো সহজ! আবারও চ্যালেঞ্জ করে নতুন করে রেকর্ড গড়েন এক পায়ে ১ মিনিটে ২৬২ বার লাফানোর।
এখানেই শেষ নয় অর্জন, এক জাম্পে দুইবার রশি ঘোরানো ইভেন্টে ৩ মিনিটে ৪৫৮ বার লাফিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন ২০২১ সালের ১০ মার্চে। আর এই দুইটি রেকর্ডের সার্টিফিকেট অর্থাৎ সনদপত্র ডাকযোগের মাধ্যমে পান রোববার (২৯ মে)। ফলে চতুর্থবারের মতো স্কিপিং রোপে গিনেস বুকে নাম লেখান রাসেল। রাসেল ইসলামের বিশ্ব রেকর্ডে বিস্মিত এলাকাবাসী। এই কৃতিত্বের খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হন রাসেল। তার এমন সফলতায় উৎফুল্ল তার পরিবারও।
রাসেল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রোপ স্কিপিং খেলায় চতুর্থবার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে রেকর্ড গড়ি। এজন্য ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি স্পোর্ট অফিসার এডি রায়হান স্যার, বাংলাদেশের রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসিফ হাসান, জেলা প্রশাসকসহ ঠাকুরগাঁওবাসীকে। যারা আমাকে সবসময় সহযোগিতা ও উৎসাহিত করেছেন।’
এবিষয়ে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান আসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘রাসেলের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ফেডারোশনের সভাপতির সাথে আলোচনা করা হয়েছে। সে যেন এই খেলাটি চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া রাসেলের কৃতিত্বের বিষয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করা হবে।’ অভিনন্দন জানিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামানও। তিনি বলেন, ‘রাসেলের এই খেলার বিষয়ে কোনোরকম সহযোগিতা লাগলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হবে।’
রাসেলের বাবা বজলুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, গরিব হওয়া সত্ত্বেও আমার ছেলেকে আমি সাধ্যমত সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। তার একান্ত চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলে আজ সে চারবার বিশ্ব রেকর্ড করেছে। এর থেকে খুশির খবর আর কি হতে পারে! আমার ছেলের এমন সফলতায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও খুশি। রাসেলের বড় ভাই আরিফ বলেন, প্রথমে বিশ্বাস হতো না রাসেল এত বড় কিছু অর্জন করতে পারবে।
প্রথমবার যখন সে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার দুইটি সার্টিফিকেট পায়, তারপর থেকে তার প্রতি আমার ধারণা চেঞ্জ হয়ে গেছে। সে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আশা করছি আরও বড় পর্যায়ে যেতে পারবে। তার প্রতিবেশি ও বন্ধুরা জানান, ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি খুব আসক্ত সে। তার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় কিছু করবে। আজ সেই সাফল্য অর্জন হয়েছে বলে মনে করেন তারা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রাসেল আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে বিশ্বাস তাদের।