জাপানকে অনন্য শিখরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে

জাপানকে অনন্য শিখরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে

২০০৬ সালে প্রথম জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শিনজো আবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। ৪ দফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া আবে জাপানের মুদ্রানীতিতে এনেছিলেন ব্যাপক পরিবর্তন। এ ছাড়া দেশটির প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করে জাপানকে অনন্য শিখরে পৌঁছানো ছিল আবের লক্ষ্য। শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারে বক্তৃতা দেয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শিনজো আবে।

পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে টোকিওর সম্পর্ককে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই রাজনীতিক ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার পাশাপাশি জাপানকে আবারো বিশ্ব শক্তিতে পরিণত করার পথে অনেকটা অগ্রসর হয়েছিলেন।

Pop Ads

স্বাস্থ্যগত কারণে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। শুক্রবার সকালে নারা শহরে এক নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার সময় আবেকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়, সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

তার কিছুক্ষণ পর দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জানান, আবের অবস্থা সংকটাপন্ন এবং চিকিৎসকরা তার জীবন বাঁচাতে লড়ছেন। এরও কয়েক ঘণ্টা পর জাপানি গণমাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর আসে।
তাকে গুলি করার ঘটনায় টেটসুয়া ইয়ামাগামি নামে ৪১ বছর বয়সী একজনকে আটক করা হয়েছে।

১৯৫৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর টোকিওর শিনজুকু শহরে জন্ম শিনজো আবের। তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরি। তার বাবা ছিলেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন আবের চাচা। ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো জাপানের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্য নির্বাচিত হন আবে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের (এলডিপি) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ২০০৩ সালে।

২০০৬ সালে আবে দলীয় সভাপতির দায়িত্ব পান এবং সেই সূত্রেই প্রথমবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন। সে সময় তার বয়স ছিল ৫২ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান আর এত কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী দেখেনি। এরপর ২০১২ থেকে ২০২০ সালে পর্যন্ত ৩ মেয়াদে দেশটির সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

দুই বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ‘আবেনোমিক্স’ বা ‘আবেতত্ত্ব’ দেশটির অর্থনীতিকে আরো বেশি চাঙ্গা করবে বলে ফের তিনি ক্ষমতায় আসেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আবের সরকার প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়। ২০১৪ সালে তার সরকারই সংবিধানে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনে।

তারপর উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগত আগ্রাসী ভাব, দেশের অর্থনৈতিতে ধস, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট নিয়ে জনগণের অসন্তোষে আবের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী হয়ে পড়লে ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং আবারো বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় ফেরেন।

টোকিওতে অলিম্পিক গেইমস নিয়ে আসার মূল কারিগরও ছিলেন তিনি। কোভিডের কারণে ওই গেইমস ২০২০ সালের বদলে ২০২১ সালে হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন আবে আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন না।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। শিনজো আবে কেবল দলের বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও প্রচারণাতেই নয়, সমসাময়িক বৈশ্বিক নানান বিষয় নিয়েও গণমাধ্যমে নিয়মিত বক্তব্য রেখেছেন।