জয়পুরহাটে আলু চাষে লোকসান গুনছেন সাধারন কৃষক

256
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  আলু চাষ করে লোকসানে মুখে পড়েছেন জয়পুরহাটের সাধারন আলু চাষিরা। দাম কম থাকায় আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। আর আলুর আমদানি বেড়ে যাওয়ায় লোকসান নয়, লাভ কমেছে কৃষকের, দাবি কৃষি বিভাগের।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালাই-ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া, সমশিরা,মাত্রাই, হোপ, ছোটতারা, কাচাকুল,আমানীপাড়া ,রোয়াইর, সদর, দুর্গাদহ,রাংতা-ঘোনাপাড়া, পাইকড়, পাচবিবি গোড়না, মাধায়নগর, হাটুভাংগা, সুন্দরপুর সদর আক্কেলপুর উপজেলার ভিকনি উত্তরপাড়া মাঠসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে চাষিরা মহিলা শ্রমিক নিয়ে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় জয়পুরহাটে এবার ৪০ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। অধিক লাভের আশায় কৃষকরা এবার আগাম আলু চাষ করেছে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। মৌসুমের শুরুতে দাম বেশি হলেও বর্তমানে আলুর বাজারে ধস নেমেছে।
জেলার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে গ্র্যানোলা জাতের আলু ১৫০, অ্যাস্টেরিক ও ক্যারেজ ৩৫০ এবং দেশি পাকরি জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা মণ দরে। আগাম চাষ করায় বিঘাপ্রতি ফলন হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ মণ। যার উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সার কীটনাশকের দাম বেশি হলেও আলুর দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা।
সাত বিঘা জমিতে আগাম জাতের স্টিক,ফ্রেশ আলু চাষ করেছেন ক্ষেতলাল উপজেলার কাচাকুল গ্রামের আলুচাষি ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, রোপণের ৬০ দিন বয়সে আমি আলু তোলার কথা। জমিতে ফলন হবে ৭০ মণ। ফসলের উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ১৫০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করলে সাড়ে ১০ হাজার টাকা হয়।
তাতে লোকশান হবে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। মাঠে আরও আলু আছে। দশ-পনেরো দিন পরে সেগুলো তুলতে হবে। কিন্তু বাজার দিন দিন যেভাবে কমে যাচ্ছে তাতে লোকসান গুনতে হবে আরও মোটা অঙ্কের। সেই চিন্তাই এখন আর রাতে ঘুম আসে না। সদর উপজেলার ইকরগাড়া গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, আলু রোপণ থেকে শুরু করে নিড়ানি, বাঁধানো এবং বহনসহ যাবতীয় কাজ করেছি আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন। বাহিরের শ্রমিককে নিতে হয়নি। তাই অন্যের থেকে বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ কম হয়েছে। এক বিঘা জমির আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৬৬ মণ। ৩১০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে হাজার দুয়েক টাকা লাভ হয়েছে। জয়পুরহাট নতুনহাটের আলু ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, বাজারে এখন আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। এসব আলু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে।
কাঁচা মালের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। তাই কখনো বাড়তে আবার কখনো কমতেও পারে। আমদানির ওপর তা নির্ভর করবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১০০ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ৭ হাজার হেক্টর, কালাইয়ে ১১ হাজার ১০০ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৯ হাজার হেক্টর এবং আক্কেলপুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েক হেক্টর জমিতে আলুর চাষ কম হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখন আলুর দাম তুলনামূলক কম কারণ গত বছরের যে সব আলু রয়েছে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে। এগুলো শেষ হলে আমরা আশা করি কৃষকরা যথাযথ আলুর দাম পাব।
সুপ্রভাত বগুড়া/ এম রাসেল আহমেদ