আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক
সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় নামাজ লজ্জাকর ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে”। (সূরাঃ আনকাবুত-আয়াতঃ৪৫) বাস্তবে নামাজের যাবতীয় নিয়ম-নীতির প্রতি যতœশীল হয়ে যথারীতি নামাজ আদায় করলে ক্রমশ নামাজি ব্যক্তি গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। তবে এটা আবশ্যক যে, নামাজ সুন্নাত তরীকা মুতাবিক যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।
দৈহিক ও আত্মিকভাবে সুস্থির ও বিন¤্র হতে হবে। এদিক-ওদিক তাকানো এবং অহেতুক নড়াচড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মোটকথা নামাজ যে পরিমান পূর্ণাঙ্গ হবে তার বরকত ও ফায়দাও সে পরিমান লাভ হবে। কোনো ইবাদতই আল্লাহ তায়ালার কাছে নামাজের চেয়ে অধিক প্রিয় নয়। অতএব যে ইবাদত সকল গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় তা অতি গুরুত্ব সহকারে আদায় করা এবং কখনো কাযা না করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক।
হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এমন নামাজ পড়ে, যে নামাজ তাকে নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না, সে নামাজ দ্বারা আল্লাহ তায়ালার কেবল দূরত্বই বৃদ্ধি পায়। (বেহেশতী জেওর) আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকিদের গুণাবলী এভাবে ব্যক্ত করেছেন যে, “যারা অদৃশ্যের উপর বিশ^াস স্থাপন করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে”। (সূরাঃ বাকারা-আয়াতঃ৩) নামাজ প্রতিষ্ঠা অর্থ শুধু নামাজ আদায় করা নয়, বরং নামাজে সকল ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব পরিপূর্ণভাবে আদায় করা।
এক কথায় শরীয়তের নিয়ম মত আদায় করা এবং এর সকল নিয়ম-পদ্ধতি যথার্থভাবে পালন করাকেই ‘ইকামতে সালাত’ বা নামাজ প্রতিষ্ঠা করা বোঝায়। সূরা মুমিনূনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে। যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-ন¤্র”। (আয়াতঃ ১-২) খুশু-খুজুর সাথে নামাজ আদায় করা জরুরি। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, নামাজের সময় আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি সর্বক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন যতক্ষণ না নামাজি অন্য কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ করে। যখন সে অন্য কোন দিকে ভ্রæক্ষেপ করে, তখন আল্লাহ তায়ালা তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন (আবু দাউদ)।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আচ্ছা বলতো, যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি নদী থাকে। এবং তাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে ময়লার কোনোকিছু বাকি থাকবে কি? সাহাবীগণ বললেন, তার ময়লার কিছুই বাকি থাকবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ এরূপই। নামাজের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহসমূহ মুছে দেন। (বুখারী ও মুসলিম) মিশকাত শরীফে রয়েছে, হযরত কাতাদাহ বিন রবী (রাঃ) হতে বর্ণিত, হুজুর (সাঃ) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি আপনার উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছি এবং অঙ্গীকার করেছি যে, যে ব্যক্তি উত্তমরুপে অজু করে সঠিক সময়ে গুরুত্ব সহকারে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, আমি তাকে মাফ করে দিব এবং নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশ করাব।
আর যে ব্যাক্তি তা না করবে তার ব্যাপারে আমার কোন প্রতিশ্রূতি নাই। (মিশকাত) অন্য বর্ণনায় আছে, হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ একবার শীতকালে বাইরে বের হলেন, তখন গাছের পাতা ঝরছিল। তিনি একটি ডাল ধরলেন, ফলে উহার পাতা আরোও বেশী করে ঝড়তে লাগলো, তখন তিনি আমাকে ডেকে বললেন হে আবু যর! মুসলমান বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দ্যেশ্যে তথা এখলাসের সাথে নামাজ পড়ে, তখন তার গুনাহসমূহ এমনভাবে ঝড়ে পড়ে যেমন গাছের পাতা ঝড়ে পড়ছে (মিশকাত শরীফ)। নিশ্চয় কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।
যদি নামাজের হিসাবে উর্ত্তীর্ণ হয়, তবে অন্যান্য হিসাবও উর্ত্তীর্ণ হবে। যদি নামাজের হিসাবে অকৃতকার্য হয়, তবে অন্যান্য আমলের হিসাবও অকৃতকার্য হবে। নামাজের ফজিলত যেমন বেশী নামাজের গুরুত্ব ও না পড়ার ভয়াবহতাও তেমনি বেশী। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাঃ বলেন, হুজুর সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজের এহতেমাম করে তার জন্য নামাজ কিয়ামতের দিন নূর হবে,হিসাবের সময় দলীল হবে এবং নাজাতের অসিলা হবে।
আর যে ব্যক্তি নামাজের এহতেমাম করে না, কিয়ামতের দিন নামাজ তার জন্য নূর হবেনা, বরং এইরুপ ব্যক্তির হাশর ফেরআউন, হামান ও উবাই ইবনে খলফের সাথে হবে। (মিশকাত) নামাজের মাধ্যমে প্রত্যেকে প্রকৃত মুমিন হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলে পরলৌকিক জীবনের পথকে সহজ ও সুগম করা অপরিহার্য।