পিল অফ মাস্ক ব্যবহারে হচ্ছে ত্বকের ক্ষতি

সুপ্রভাত বগুড়া ( ফ্যাশন ও রুপচর্চা): রুপচর্চা ও ত্বকের যত্নে নতুন যে প্রোডাক্টটি এখন খুব জনপ্রিয় তা হলো বিভিন্ন রকমের মাস্ক। ক্লে-বেজড মাস্ক, এক্সফোলিয়েটিং মাস্ক, পিল অফ মাস্ক কত কি!

এক এক মাস্কের কাজ এক এক রকম। কিছু মাস্ক ত্বকের জন্য খুব উপকারী হলেও কিছু মাস্ক আমাদের অজান্তেই করছে ত্বকের ভীষন ক্ষতি। পিল অফ মাস্ক তার মধ্যে একটি।

Pop Ads

এটি মূলত মুখের ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইট হেডস, জমে থাকা ময়লা ও অবাঞ্ছিত লোম দুর করে ত্বকে একটি সফট, ক্লিয়ার ও স্মুথ ভাব আনার জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এইসব দূর করতে গিয়ে আমরা ত্বকের কোন ক্ষতি করে ফেলছি না তো?

ইউটিউব ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে পিল অফ মাস্ক ব্যবহারের নানা রকম ভিডিও দেখা যায়। যাতে দেখা যায় মাস্কটি শুকানোর পর উঠানোর সময় অনেক ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়।

কিন্তু পুরোপুরি তুলে ফেলার পর দেখা যায় ত্বক আগের চেয়ে পরিষ্কার হয় এবং মাস্কের গায়ে অনেক ব্ল্যাকহেডস ও নানা রকম ময়লা লেগে থাকে।আসলে এসব কি শুধুই ব্ল্যাকহেডস? এই ব্যথা লাগার কারণ কি?

এইভাবে মাস্কটি উঠানোর ফলে কি ত্বকের কোন ক্ষতি হচ্ছে? এই ধরনের প্রশ্ন কি কখনও আপনাদের মাথায় এসেছে?

পিল অফ মাস্ক এমন একটি মাস্ক যা মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। মাস্কটি শুকিয়ে গেলে ধীরে ধীরে উঠাতে হয়। তখন এর সাথে মুখের ত্বকের সব রকমের ময়লা,

ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস, অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদি মাস্কের সাথে উঠে আসে। এটি আসলেই ভালো লাগার মতো যখন দেখবেন ত্বকে জমে থাকা সব ময়লা, ডেড সেল দূর হয়ে ত্বক সতেজ ও টানটান হয়ে গেছে।

যেমনটি পিল অফ মাস্ক প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে, ঠিক তেমন উপকারিতায় কিন্তু পাওয়া যায়। কিন্তু এর বাইরেও পিল অফ মাস্ক আরো কিছু কাজ করে থাকে এবং তা অবশ্যই আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর।

পিল অফ মাস্কে “পিভিএ গ্লু” নামে এক প্রকার গ্লু ব্যবহার করা হয়। যার কারণে এটি চামড়ার সাথে লেগে যায় এবং পিলিং অফের সময় ব্যথা অনুভব হয়।

এটি ডেড সেল, ব্ল্যাকহেডস ও ময়লার সাথে সাথে ত্বকের বাইরের লেয়ার বা এপিডার্মিসের সেলগুলো ও তুলে আনে। এই লেয়ারটিকে প্রোটেক্টিভ লেয়ার ও বলা হয়।

যা আপনার ত্বককে বাইরের দূষিত পদার্থ ও সূর্য্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন ডার্মাটোলজিস্টদের মতে,

পিল অফ মাস্ক ব্যবহারের পর ত্বকে যে স্মুথ ও সফট ভাব অনুভব হয় তা মূলত ত্বকের এই বাইরের আবরণ বা প্রোটেক্টিভ লেয়ার তুলে ফেলার কারণেই হয়ে থাকে। এই কারণেই পিল অফ মাস্ক উঠানোর পর জ্বালাপোড়া ও ব্যথা অনুভূত হয়।

আমাদের ত্বকের পোরসে তেল সৃষ্টি হয়ে থাকে যা আমাদের ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে, ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রেখে ত্বককে সুস্থ রাখে। ত্বকের এই প্রাকৃতিক তেল আমাদের ত্বকের উপর একটি কেমিকেল ব্যারিয়ার তৈরি করে যা ত্বককে বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণু থেকে রক্ষা করে।

পিল অফ মাস্ক ব্যবহারে শুধু ত্বকের এই তেলই দূর করে না, এটি এপিডার্মিস কিছু লেয়ারও তুলে নেয়। যার মানে হলো আপনি আপনার ত্বককে বাইরের এই ক্ষতিকর জীবাণুর জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন।

তাছাড়া মাস্কটি উঠানোর পর মাস্কে যে ব্ল্যাকহেডস উঠে এসেছে দেখেন তার সবই কিন্তু ব্ল্যাকহেডস নয়, তার মধ্যে অনেক গুলোই হলো “সিবেশাস ফিলামেন্টস” যা আপনার ত্বককে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে।

যারা ইতিমধ্যেই পিল অফ মাস্ক নিয়মিত ব্যবহার করছেন তারা কি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন? আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ, এই সিবেশাস ফিলামেন্ট ও ত্বকে সৃষ্ট তেল ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় তৈরি হয়।

কিন্তু নিয়মিত পিল অফ মাস্ক ব্যবহারে ত্বক এই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই একবার এই মাস্ক ব্যবহারের পর পুনরায় সিবেশাস ফিলামেন্ট তৈরি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বারবার মাস্কটি ব্যবহার করা যাবেনা। যেহেতু এই সময়টিতে ত্বক অতিরিক্ত সেন্সিটিভ থাকে তাই অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না এবং নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

তবে ত্বকের ব্ল্যাকহেডস ও ময়লা দূর করার জন্য নিয়মিত ক্লিনজিং ও এক্সফোলিয়েশন্সই যথেষ্ট। তাই যতটা সম্ভব পিল অফ মাস্ক এড়িয়ে যাওয়ায় উত্তম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here