বগুড়ার শাজাহানপুরে বধু হলো ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী !

বগুড়ার শাজাহানপুরে বধু হলো ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ! প্রতিকী-ছবি

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শাজাহানপুরে জরিমানা ও মুচলোকা দেয়ার পরও বধু হয়েছেন উপজেলার জালশুকা উত্তরপরাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়–য়া এক স্কুল ছাত্রী। আর বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় ভেস্তে গেছে মেয়েটির লেখাপড়া ও আগামীর সম্ভাবনাময় স্বপ্ন। এলাকাজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে, জরিমানা দিয়ে কি বাল্যবিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে ? ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জালশুকা উত্তরপাড়া গ্রামে। শুধু তাই নয়, এসব দেখে ওই এলাকায় আরও কয়েকটি বাল্যবিয়ে সম্পাদন হয়েছে।

শনিবার ২১ নভেম্বর উপজেলার জালশুকা এলাকায় গেলে এসব তথ্য জানান স্থানীয়রা। ঘটনার বিবরণে তারা জানান, কয়েকদিন আগে জালশুকা পশ্চিম পাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমানের ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়–য়া মেয়ে মীম (১১) কে অন্য এলাকায় নিয়ে গিয়ে একই গ্রামের হাফিজার রহমানের ছেলে নাঈম (১৯) এর সাথে গোপনে বাল্য বিয়ে সম্পন্ন করে উভয় পরিবারের লোকজন।

Pop Ads

এরপর বাড়িতে এনে একই ঘড়ে দুজনে বসবাস করতে থাকে। এসব দেখে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় ঘটনাট শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভিনকে জানালে তিনি বলেন,“এসব দেখার দায়িত্ব শুধু আমার না। এ উপজেলায় আরও কর্মকর্তা আছে তাদের বলেন এবং ঠিকানা দেন”। এরপর শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী ভুমি কমিশনার মোঃ আশিক খান, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজনীন আকতার ও থানার ওসি আজিম উদ্দিনের নিকট ঠিকানা দেয়া সহ বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু ঘটনার কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি।

বাল্যবিয়ে নিরোধের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক কে জানানো হলে, তিনি বলেন, অবশ্যই এবিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এরপরই নড়েচড়ে বসে শাজাহানপুর উপজেলা প্রশাসন। অবশেষে এ ঘটনায় ১৫ নভেম্বর রাতে সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় টাউটদের ইশারায় মুহুর্তেই সরিয়ে নেয়া হয় সদ্যপ্রাপ্ত স্বামী নাঈম এবং ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রী ও নববধু মীমকে।

ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বার্হী মেজিষ্ট্রেট শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি মোঃ আশিক খান বলেন, ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এ অপরাধে কনের ১৮ বছর পুর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বর ও কণে কে আলাদা রাখার নির্দেশ দিয়ে এ সংক্রান্ত মুচলেকা সহ ছেলের বাবাকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে অবুঝ মেয়েটিকে তার মা ও বাবা বাল্যবিয়ে দিলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। ছোট এ মেয়েটিকেও সেফ হোমে আলাদাও করা হয়নি।

দায়সাড়া এসব দেখে হতবাক হয়েছেন এলাকার সুশীল সমাজ। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজনীন আকতার বলেন, এতো কথা জানার দরকার কি? ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে এটাই বেশী। যা হয়েছে অনেক হয়েছে। এর বেশী করার দরকার নেই। প্রতিবেশীরা জানান, ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা দেয়ার পর ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ওই ছাত্রীকে নিয়ে স্ত্রী হিসেবে ঘড়ে নিয়ে বসবাস করছে। মুচলেকার শর্ত ভঙ্গ করলেও তথাপি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। তাই এলাকাবাসীর প্রশ্ন, জরিমানা দিয়ে কি- পুতুল খেলার বয়সেই বধু হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ুয়া ওই স্কুল ছাত্রীকে ? বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে এটাই কি ব্যবস্থা ?