বেসরকারি মেডিক্যালে মেলেনি জরুরি চিকিৎসাও

3
বেসরকারি মেডিক্যালে মেলেনি জরুরি চিকিৎসাও

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে কামাল উদ্দিন নামের এক বৃদ্ধের কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্বজনরা নগরের জিইসি মোড়ে বেসরকারি মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্দ্বীপ থেকে বোটে করে সাগর পার হয়ে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয় তাঁকে। এসে দেখেন হাসপাতালের প্রধান ফটকে তালা।

পৌনে এক ঘণ্টা অ্যাম্বুল্যান্সে অপেক্ষা করে অনেক অনুনয়-বিনয় করেও বৃদ্ধ কামাল উদ্দিনকে ভর্তি করানো যায়নি।

Pop Ads

স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ থাকায় জরুরি চিকিৎসাও মেলেনি, দুর্ভোগ

অবশেষে রোগীকে নিয়ে তাঁর স্বজনরা ওই অ্যাম্বুল্যান্সে করেই চলে যান। অ্যাম্বুল্যান্সে কামাল উদ্দিনের সঙ্গে থাকা তাঁর জামাতা মোহাম্মদ সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চিকিৎসক দিয়েও ফোন করিয়েছি। অনেক অনুরোধ করেছি আমার শ্বশুরকে ভর্তি করানোর জন্য, কিন্তু তারা অনুরোধ রাখেনি। রিসেপশন থেকে বলেছে, আজকে রোগী ভর্তি বন্ধ আছে।

তাই চলে যাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) প্রধান ফটকের সামনেই বেসরকারি ইপিক হেলথ কেয়ার। চমেক হাসপাতালের রোগীদের বড় একটি অংশের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় এখানে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে ইপিকের প্রধান ফটকও বন্ধ।

বিকেল সাড়ে ৩টায় ফটকের সামনে কয়েকজন রোগী ও স্বজন গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়।
এ সময় আবদুল হান্নান নামের এক রোগী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসক দেখিয়েছি। চিকিৎসক যেসব পরীক্ষা করাতে বলেছেন, তাতে কত টাকা লাগবে জানতে এসেছিলাম। কিন্তু তারা ঢুকতে দেয়নি।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে বাঁশখালী থেকে এসেছিলেন হৃদরোগী রশিদ আহমদ (৭৫)।

দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পৌনে ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর কাউন্টার থেকে বলা হয় ১৯০ নম্বর কক্ষে যাওয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখেন নোটিশে লেখা আছে ২৩.০৪.২৪ সকাল ৬টা থেকে ২৪.০৪.২৪ সকাল ৬টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি।
এভাবে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারসহ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেক রোগী ও তাঁদের স্বজনরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন। এমনকি জরুরি চিকিৎসাসেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গতকালের আগে করানো পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি।

নগরের হালিশহর থেকে মোহাম্মদ আলম তাঁর শিশুপুত্রের রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য মেহেদিবাগ এলাকার ম্যাক্স হাসপাতালের কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ছেলের প্রস্রাবের ইনফেকশনের রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য এসে দেখি কাউন্টারে কেউ নেই। তাই অপেক্ষা করছি।’

এ ছাড়া গতকাল নগরের ন্যাশনাল হাসপাতাল অ্যান্ড সিগমা ল্যাব, মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শেভরন, ট্রিটমেন্ট, পপুলার, সার্জিস্কোপ, চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন, ল্যাবএইডসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন হাজারো রোগী ও তাঁদের স্বজনরা। বিকেলে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে দেখানোর জন্য অনেকে সিরিয়াল নম্বর নিয়েছিলেন, কিন্তু চিকিৎসক আসেননি।

জরুরি চিকিৎসাসেবা বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে জরুরি রোগী গেলে তাদের চমেক হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে রেফার (স্থানান্তর) করার জন্য বলা হয়েছে।

রোগীদের ভোগান্তির বিষয়ে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের সেবার জন্যই আমাদের প্রাইভেট চেম্বারসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়েছে। এতে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়ে আমরা কর্মসূচি দিয়েছি।’

বিএমএ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসকদের প্রায় দুই হাজার প্রাইভেট চেম্বার রয়েছে। চিকিৎসকদের কর্মসূচির কারণে গতকাল চেম্বার বন্ধ থাকায় হাজার হাজার রোগী বিপাকে পড়েন।

চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে ডা. রক্তিম দাশের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি ও শহরে মেডিক্যাল সেন্টার হসপিটালে ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর ওপর হামলাকারীদের জামিন বাতিলের দাবিতে গত শনিবার থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখা। এর মধ্যে গত শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন।

আর গতকালের কর্মসূচি ছিল সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টা সব ধরনের প্রাইভেট প্র্যাকটিস (ব্যক্তিগত চেম্বার, হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নতুন রোগীর সেবা) বন্ধ থাকবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আগের দিনের ভর্তি রোগীর চিকিৎসাসেবা চলবে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আগের রোগীর রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া যাবে। তবে কোনো নতুন রোগী এন্ট্রি বা সেবা দেওয়া যাবে না।