ব্যাংক ও এমএফএস হিসাবধারী কমেছে

4
ব্যাংক ও এমএফএস হিসাবধারী কমেছে

বৈশ্বিক সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। সংসার চালাতে অনেকেই সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। যার ফলে ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) হিসাবধারীর সংখ্যা কমছে। সরকারি হিসাব বলছে, ২০২২ সালে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪৮.৫০ শতাংশ মানুষের আর্থিক হিসাব ছিল।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০২২ শীর্ষক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটিতে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়েছে তিন লাখের বেশি খানার (পরিবার) তথ্য। জরিপে যেসব ব্যক্তির ব্যাংক ও এমএফএস দুই ধরনের হিসাবই ছিল, তাদের একটি করে হিসাব ধরা হয়েছে। এবং যাদের শুধু ব্যাংক বা এমএফএস হিসাব ছিল তাদের একক হিসাব ধরা হয়েছে।

Pop Ads

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দরিদ্রতা, শিক্ষার অভাব ও সেবা সহজলভ্য না হওয়ার কারণে আর্থিক হিসাব কমছে। অনেক মানুষ আছে, যাদের সঞ্চয় করার অবস্থা নেই। তারা দিন আনে দিন খায়। অনেকের মনে ব্যাংক নিয়ে ভয় রয়েছে।

তাদের ধারণা ব্যাংকে টাকা রাখলে খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জরিপের তথ্য বলছে, বছরের ব্যবধানে মানুষের ব্যাংক হিসাব কমেছে। ২০২২ সালে দেশের ১৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ছিল ২৬.০২ শতাংশ। ২০২১ সালে যা ছিল ২৭.৯ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষের ব্যাংক হিসাব ২০২১ সালে ছিল ৩১.০৮ শতাংশ, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০.৯ শতাংশ।

নারীদের ব্যাংক হিসাব ২০২১ সালে ছিল ২৪.২ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২১.৬ শতাংশ।

ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি কমেছে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবও (এমএফএস)। ২০২১ সালে দেশের ১৫ বছরের বেশি জনসংখ্যার ৪২.৬ শতাংশ ব্যক্তির এমএফএস হিসাব ছিল। পরের বছর ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪১.৯ শতাংশে। এ সময়ে পুরুষের এমএফএস হিসাব কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫.৬ শতাংশে। এক বছর আগে যা ছিল ৫৭.৫ শতাংশ। পুরুষের এমএফএস হিসাব কমলেও বেড়েছে নারীদের। ২০২১ সালে নারীদের এমএফএস হিসাব ছিল ২৮.৫ শতাংশ, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮.৮ শতাংশ।

বিভাগভিত্তিক আর্থিক হিসাবের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ব্যাংক ও এমএফএস হিসাবধারী খুলনায় এবং কম সিলেট বিভাগে। খুলনায় ৫৫.৭০ শতাংশ মানুষের ব্যাংক হিসাব বা এমএফএস হিসাব রয়েছে। এর পরেই রয়েছে বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগে ৫২.৪৭ শতাংশ মানুষের ব্যাংক ও এমএফএস হিসাব রয়েছে। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। এই বিভাগের ৫২.৩৭ শতাংশ মানুষের ব্যাংক ও এমএফএস হিসাব রয়েছে। সবচেয়ে কম ব্যাংক ও এমএফএস হিসাব রয়েছে সিলেট বিভাগে। এই বিভাগের ৪০.১৯ শতাংশ মানুষের ব্যাংক ও এমএফএস হিসাব রয়েছে। রংপুর বিভাগের ৫১.৪৪ শতাংশ মানুষের ব্যাংক ও এমএফএস হিসাব রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের ৪৫.৩৮ শতাংশ মানুষের আর্থিক হিসাব রয়েছে। ব্যাংক ও এমএফএস হিসাবে তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা বিভাগের মানুষ। এই বিভাগের ৪৭.২ শতাংশ মানুষের আর্থিক হিসাব রয়েছে।

আর্থিক হিসাবধারী বাড়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাবধারী কমার বিষয়ে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশকারী বিবিএসের এসভিআরএস ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফরম প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে মানুষের ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নতুন করে হিসাব খোলেনি। তবে এ সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে ব্যাংক হিসাব কমে থাকতে পারে বলে আমার ধারণা। দেখা গেছে, একজনের কয়েকটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকলেও একটাই ধরা হয়েছে।’

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক মানুষ দিনমজুর। যাঁদের সংসার চালিয়ে অর্থ সঞ্চয় করার মতো অবস্থা নেই। এ ছাড়া শিক্ষার অভাবে অনেকেই ব্যাংক লেনদেন এড়িয়ে চলেন। ব্যাংকে টাকা রাখা নিয়ে অনেকের মধ্যেই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। ফলে ভয়ে টাকা অন্যত্র রাখতে চান না। এসব কারণেও আর্থিক হিসাবধারী কমতে পারে।’