পদোন্নতির পরও পদায়ন হয়নি ৪১৭৩ কর্মকর্তার

3
পদোন্নতির পরও পদায়ন হয়নি ৪১৭৩ কর্মকর্তার

শিক্ষা ক্যাডারের চার হাজার ১৭৩ কর্মকর্তা অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন কয়েক বছর আগে। কিন্তু শূন্যপদ না থাকায় পদোন্নতির পরও এসব কর্মকর্তাকে পদায়ন করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আগের কর্মস্থলে (ইনসিটু) ও সংযুক্তিতে কাজ করছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে সরকারি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম।

হতাশায় ভুগছেন শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

Pop Ads

শিক্ষা ক্যাডারের এমন নানা সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সভাকক্ষে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বৈঠকে শিক্ষা ক্যাডারের অনুমোদিত, বিদ্যমান ও কর্মরত জনবল এবং সরকারি কলেজের পদ সৃজনের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অধ্যাপক পদটি তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণের বিষয়েও শিক্ষামন্ত্রী জেনেছেন। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে অনেক ধরনের সমস্যা আছে, যার ফলে শিক্ষা খাতে ভালোভাবে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী সব সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আশা করি, শিক্ষা ক্যাডারে দ্রুত বড় ধরনের সংস্কার আসবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ১৪, ১৬, ১৭ ও ১৮ ব্যাচের আংশিক কর্মকর্তা অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া এক হাজার ৭৮ জন কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক পদে কাজ করছেন।

তাঁদের মধ্যে ৯৬৮ জন আছেন ইনসিটু হিসেবে। আর সংযুক্তিতে কাজ করছেন ১১০ জন। একইভাবে সহযোগী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৬ থেকে ২৫ ব্যাচের কর্মকর্তারা। সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া এক হাজার ৪৭৪ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন সহকারী অধ্যাপক পদে। তাঁদের মধ্যে এক হাজার ৮৪ জন কাজ করছেন ইনসিটু হিসেবে। আর সংযুক্তিতে আছেন ৩৯১ জন। সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২৯ থেকে ৩৪ ব্যাচের কিছু কর্মকর্তা। কিন্তু সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া এক হাজার ৬২৩ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন প্রভাষক পদে। তাঁদের মধ্যে এক হাজার ৮৪ জন আছেন ইনসিটু হিসেবে। আর সংযুক্তিতে কাজ করছেন ৫৩৯ জন। এ জন্য সরকারের আর্থিক ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের হতাশার কারণে সে অনুযায়ী ফল আসছে না।

পদোন্নতি পাননি তিন ব্যাচের ১৮৯৪ কর্মকর্তা

পদায়ন না পেলেও পদোন্নতি পেয়েছেন চার হাজার ১৭৩ জন কর্মকর্তা। কিন্তু যোগ্যতা অর্জনের পরও পদোন্নতিই পাননি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ২০, ২২ ও ২৪ ব্যাচের এক হাজার ৮৯৪ জন কর্মকর্তা। চতুর্থ গ্রেডে (অধ্যাপক) পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন ২০ ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০১৭ সালের ৩১ মে, ২২ ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ও ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০২১ সালের ২ জুলাই। এর পরও ২০ ব্যাচের ৯৫ জন, ২২ ব্যাচের ৫০০ জন ও ২৪ ব্যাচের এক হাজার ২৯৯ জন কর্মকর্তার এখনো অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হয়নি। তাঁদের পদোন্নতির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে একাধিকবার প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাঁদের সেই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদ সৃষ্টি করা দরকার। পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদগুলো নিয়মিত করতে পারলে কাজে শৃঙ্খলা থাকবে। তবে প্রশাসন ক্যাডারে যেহেতু দীর্ঘদিন পদ ছাড়া পদোন্নতি হচ্ছে, সেহেতু এতে অন্যায়ের কিছু দেখছি না। পদ ছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারে যেমন সমস্যা হয়, শিক্ষা ক্যাডারে তেমন সমস্যাও হবে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেক কলেজে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম আছে। যেমন, কিছুদিন আগে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগের প্রধান হিসেবে একজন প্রভাষক দায়িত্ব পালন করেছেন। বেশির ভাগ কলেজের এই অবস্থা। পদোন্নতিবঞ্চিতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে সময়মতো পদোন্নতি হলে বঞ্চিত হওয়ার সংখ্যা কমে আসবে। পদ ছাড়া পদোন্নতির বিধান সবার ক্ষেত্রে সমান রাখা উচিত।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব মো. শওকত হোসেন মোল্যা কালের কণ্ঠকে বলেন, পদোন্নতির পর পদায়ন না পাওয়ার চেয়ে পদোন্নতি না পাওয়া বড় সমস্যা। এ জন্য বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দ্রুত পদোন্নতি দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে প্রশাসন ক্যাডারের মতো সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত পদ সৃজন করতে হবে। ২০১৪ সালে শিক্ষা ক্যাডারের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।

৪৫৬৪ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পড়ে আছে মন্ত্রণালয়ে

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে ৩১টি কলেজের চার হাজার ৫৬৪টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এসব প্রস্তাবের মধ্যে ১১টি কলেজের এক হাজার ৪৫৮টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। এসব পদের মধ্যে শুধু অধ্যাপক পদ সৃষ্টির প্রস্তাব রয়েছে ২৪৮টি, সহযোগী অধ্যাপক ৪০১টি, সহকারী অধ্যাপক ৬৪৩টি ও প্রভাষকের ১৬৬টি। বাকি ২০টি কলেজের তিন হাজার ১০৬টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। এসব পদের মধ্যে শুধু অধ্যাপক পদ সৃষ্টির প্রস্তাব রয়েছে ৪৬২টি, সহযোগী অধ্যাপক ৮৩৭টি, সহকারী অধ্যাপক এক হাজার ৩০৪টি ও প্রভাষকের ৫০৩টি।

শূন্যপদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের এক হাজার ৭৬৫টি পদ ফাঁকা আছে। এর মধ্যে অধ্যাপক পদে শূন্য আছে ১০২টি, সহযোগী অধ্যাপক ৪৩২টি, সহকারী অধ্যাপক ৭০২টি ও প্রভাষকের ৫২৯টি পদ।

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, শূন্যপদ দ্রুত পূরণের জন্য শিক্ষামন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ শূন্যপদ পূরণে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করা হয়। এসব বিষয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে বলেন, আগামী বিসিএস পরীক্ষায় শূন্যপদগুলোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে চলমান বিসিএস পরীক্ষার মধ্যেও এসব পদের চাহিদা দেওয়া যেতে পারে।