শাজাহানপুরে নদীর পানি সেচে মাছ নিধন, ক্ষতির মুখে চাষাবাদ

শাজাহানপুরে নদীর পানি সেচে মাছ নিধন, ক্ষতির মুখে চাষাবাদ। ছবি-ওহাব

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি): বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা গোহাইল ইউনিয়নের ভাদাই নদীর প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার এপাশ- ওপাশ মাটির বাধে পানি প্রবাহ বন্ধ করে রাতের বেলায় ৮ থেকে ১০টি পাম্প মেশিনের মাধ্যমে নদীর পানি শুকিয়ে মাছ নিধন করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তাই আগামী একমাস পরেই শুষ্ক মৌসুমে ওই এলাকায় ইরি চাষাবাদ ব্যহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

এসব কারনে সেখানে জন সাধারণের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করায় ভয়ে পাম্প মেশিন গুলো রাতে চললেও দিনের বেলায় অদৃশ্য হয়ে যায়। মঙ্গলবার ৩ নভেম্বর ভাদাই নদী শুষ্ক দেখতে পাওয়ায় এলাকার জনসাধারন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা জানান, ভাদাই নদীর পানি দিয়ে দুপাড়ের জমিতে চাষাবাদ করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই পানির স্তর নীচে নেমে যায়।

Pop Ads

তারপর আবার নদীর পানি শুকিয়ে ফেলায় জমিতে ফসল করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই শুষ্ক মৌসুমে এই নদীর পানির চাহিদা ব্যপক। গোহাইল ভাদাই নদীর ব্রীজ এলাকা থেকে উত্তর দিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ মাছ নিধন চলছে।

কৃষকরা জানান, এলাকায় পানির চাহিদা ও কৃষি চাষাবাদের প্রতি গরুত্ব দিয়ে দু’বছর আগে রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী করণ প্রকল্পের আওতায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ভাদাই নদী সংস্কার ও নদীতে পানি সংরক্ষনের জন্য ব্যারেজ নির্মান করা হয়। ফলে ফসল চাষাবাদে পানির চাহিদা পুরণ হয় এবং জমিগুলো সর্বদা উর্বর থাকায় ফসলাদীও ভাল হয়। কিন্তু একদল সংঘবদ্ধ চক্র ওই ব্যারেজের মাঝখানে দুই স্থানে পাকা দেওয়াল ভেংগে নীচু করে দেয়।

ফলে নদীর বেশীরভাগ পানিই নিষ্কাষন হয়ে যায়। এরপর আবার শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই সংঘবদ্ধ চক্র নদীর পানি মেশিন দিয়ে সেচে ফেলে দিয়ে সকল প্রজাতির মাছ ধরে। গোহাইল গ্রামের আবজাল মিয়া জানান, এ গ্রামের ও পাশ্ববর্তী লটাগাড়ী গ্রামের এই সংঘবদ্ধ চক্রটি মাছ ধরার যাবতীয় সুবিধা দেওয়ার অংগীকার দিয়ে অর্ধলক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে মাছ ব্যবসায়ীদের নিকট চুক্তিবদ্ধ হয়। মাছ ব্যবসায়ীরা তখন এই চক্রের সহায়তায় রাতের আধারে নদীর পানি মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন করে ও সকল প্রজাতীর মাছ ধরে।

এমনকি কাঁদা-মাটির নীচে লুকিয়ে থাকা দেশী ভাদাই মাছ, গচি মাছ, শিং মাছ, শোউল মাছ, টাকী মাছ ও টেংড়া মাছ সহ সকল প্রজাতির মাছ গুলো নিধন করছে। এলাকার সচেতনরা জানান, কুচক্রী অর্থলোভীদের নির্বিচারে মৎস্য শিকারের ফলে মারা পড়ছে মা মাছ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন। আর বংশ বিস্তার করতে না পারায় বিলুপ্ত হচ্ছে অনেক প্রজাতির দেশীমাছ।

শুধু তাই নয়, এভাবে নদীর পানি শুকিয়ে ফেলায় এলাকায় চাষাবাদের ব্যপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিলেও প্রশাাসন এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে তারা অভিযোগ করেন। উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানাযায়, বাংলা কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস থেকে শুরু করে ফাল্গুন-চৈত্র পর্যন্ত নদী-জলাশয় শুকিয়ে যায়। তাই সরকারী উদ্যেগে এ সময়টাতে মাছের জন্য একটি অভয়াশ্রম তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এছাড়া মৎস্য আইন এবং নদী ও জলাশয় সংরক্ষন আইন অনুযায়ী এসবই দন্ডনীয় অপরাধ বলে জানাগেছে।
এবিষয়ে গোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু জানান, ভাদাই নদীর পানি দিয়েই এ এলাকার জমিগুলো উর্বরতা পায় ও ফসল হয়।

কিন্তু একদল দুর্বৃত্তের কাছে বিষয়টি জিম্মি হয়ে পড়েছ্।ে এদেরকে আইনের আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন। এ সম্পর্কে শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী ভুমি কমিশনার আশিক খান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তবে সরেজমিনে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।