সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয়

আবদুল ওহাব সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

সুপ্রভাত বগুড়া (স্বাধীন মতামত): একটি রাষ্ট্রের শান্তি, শৃঙ্খলা, অগ্রগতি, অবনতি, সর্বোপরি জাতী হিসেবে পরিচয় এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রথম ধাপ হচ্ছে সুশাসন। যে দেশে যত বেশী সুশাসন প্রতিষ্ঠিত সে দেশ বা জাতী ততটাই মর্যাদাশীল। শুধু তাই নয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সেই সরকার জনপ্রিয়তারও শীর্ষে উঠে। আবার জনগনেরও প্রধান দাবী সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই প্রতিটি সরকার সুশাসনের মাধ্যমে জনকল্যান করতে দেশে হাজারো অফিস, লক্ষ লক্ষ জনবল আর শত শত কোটি টাকা ব্যায় করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।

Pop Ads

আবার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ থেকে শুরু করে সকলেই সুশাষন প্রতিষ্ঠার কথা বললেও এ নিয়ে করণীয়ও ঠিক করা হচ্ছেনা কখনই। ফলে অপরাধ, অবিচার, দুর্নীতির মাত্রা হয়েছে সীমাহীন। যাকে দিয়ে দুর্নীতি মুক্ত করবে সেই দুর্নীতিগ্রস্ত। এভাবে আমাদের আর কতদিন চলবে ? শুধু কি নতুন নতুন অফিস, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, প্রশাসনিক ইউনিট বিভাজন বা বিয়োজন করলেই দেশের জনগন সুশাসন পাবে ? সকল প্রশ্নের উত্তর একটাই “না”। কিন্তু না উত্তর দিয়েও চুপ করে থাকা যায়না। কারন দেশের জনগন বারবার তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে দেশের কল্যান করার জন্য। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।

শুধু তাই নয়, সুশাসন বা জনকল্যান করতে কি করণীয় তা চিন্তা-ভাবনা করে আইনে পরিণত করার জন্যও দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে জনকল্যানকর অনেক আইন পাশ হলেও তা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেনা। যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার বড় অন্তরায়। তাই সময় এসেছে এনিয়ে ভাবনার। কিভাবে দেশে সুশাষন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনকল্যান করা যায়। অন্যথায় আগামী প্রজন্ম আমাদের শুধু ঘৃনাই করবে না, অপরাধী হিসেবেও বিবেচিত করবে। পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল সুনাগরিকের কর্ম রিসার্চ করলে দেখা যায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান কাজ হচ্ছে চারিত্রিক গুনাবলী সমৃদ্ধ সুশিক্ষিত দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি।

অথচ আমাদের দেশে তা করা হচ্ছে না। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন পর্যন্ত চারিত্রিক গুনাবলী ও আদর্শিক পন্থায় জীবন অতিবাহিত করার বাধ্যবাধকতা নেই। অপরদিকে আজকের যুবক-যুবতী, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেশীর ভাগই নেশা বা ধুমপান করছে দ্বীধাহীনভাবে। তথাপি এসব কর্ম থেকে নাগরিকদের বিরত রাখতে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় আইন ও ব্যাবস্থা নিচ্ছেনা। তেতুল বীজ বপন করলে সেখানে কাঁঠাল গাছ হবে না, তেতুল বৃক্ষই হবে এটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ যে জাতের বীজ সেই জাতের ফলনই হবে। তাই সুশাসন ও জনকল্যান প্রতিষ্ঠায় কয়েকটি করণীয় তুলে ধরা হল।

১। চারিত্রক গুনাবলী সমৃদ্ধ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে পাঠ্য বইয়ে আদর্শিক ও ধর্মীয় অনুভুতি সমৃদ্ধ বিষয় অন্তর্ভুক্ত সহ ছাত্রজীবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং কর্মজীবন সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তিতায় বাধ্য করে মানব কল্যান ও সুশাষনের জন্য ধুমপায়ী ব্যক্তিকে চাকুরীতে অযোগ্য করতে হবে। কারন ধুমপান সকল নেশা ও অপকর্মের প্রাথমিক স্কুল।

২। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যার্থতার জন্য তাৎক্ষনিক কঠোর ব্যাবস্থা সহ কর্মের হিসাব আক্ষরিকভাবে নিতে সরকারের নজরদারী দ্রæতগতি ও এসব বিচার সম্পন্ন করতে আলাদা বিচারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য সংবাদ পত্রের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

৩। প্রত্যাকের নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাষন মানতে উৎসাহ দেয়া যেতে পারে। কারন প্রত্যাকের ধর্মীয় মুল্যবোধ অপরাধ ও দুর্নীতিতে বাধাগ্রস্ত করে।

৪। কর্মজীবনে ধুমপান ও অপরাধমুক্ত মাসিক রিপোর্ট বিচার বিশ্লেষন করে গুড সার্ভিস-পে, বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধাগুলো ধুমপান ও দুর্নীতির উপর নির্ভরশীল করা যেতে পারে এবং চাকুরীশেষে একটি বাড়তি সুবিধা দেয়া যেতে পারে। সর্বপোরি মনে রাখতে হবে আইনের ফাক-ফোকরে যেসকল বেআইনি কর্মকান্ড হয় তা চারিত্রিক গুণাবলীর উপর নির্ভরশীল।

তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার পুর্ব শর্ত হল চারিত্রিক গুণাবলী সমৃদ্ধ সুশিক্ষিত এবং দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি। এর কোন বিকল্প নেই। আর বিকল্প চিন্তা করলে আমাদের দেশে শিক্ষা যেমন শুরু হয়েছে আগডুম, বাগডুম ও ঘোড়াডুম দিয়ে, রাষ্ট্রের শাসন ব্যাবস্থাও এগুবে ঘোড়া ডুমের মধ্যদিয়ে।