স্বার্থবাদীদের চক্রান্তে কোনঠাসা সিনিয়র নেতারা শাজাহানপুরে অস্তিত্ব সংকটে বিএনপি

স্বার্থবাদীদের চক্রান্তে কোনঠাসা সিনিয়র নেতারা শাজাহানপুরে অস্তিত্ব সংকটে বিএনপি।

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শাজাহানপুরে বিএনপি রাজনীতিতে বিগত দিনে যাদের কোন ভুমিকা ছিলনা তাদেরকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে উপজেলা আহব্বায়ক কমিটি। তারা আবার বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলনে মামলা হামলার শিকার ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাদের কোনঠাসা করে নাম সর্বস্ব বিএনপি গঠন করতে মড়িয়া হয়ে উঠেছেন।

শুধু তাই নয়, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আব্দুল হাকিম মন্ডল, যুগ্ম আহবায়ক বজলুর রহমান নিলু এবং উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী সদস্য এনামুল হক শাহীন এক জোট হয়ে নিজের স্বার্থে টাকার বিনিময়ে দলের ত্যাগি ও অর্ধডজন মামলা হামলার স্বীকার বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি, সেক্রেটারী, সাবেক আহবায়ক, যুগ্ন আহবায়ক ও যোগ্য নেতাদেরকে বাদ দিয়ে বা সাধারন সদস্য করে অযোগ্যদের নিয়ে ইউনিয়ন কমিটি দেওয়া হয়েছে টাকার বিনিময়ে।

Pop Ads

ফলে এ উপজেলায় বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে বিশৃংখলা। বিএনপির এমন আহব্বায়ক কমিটির আহব্বানে সাড়া দিচ্ছেনা দলের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাকর্মীরা। এমনকি কমিটি গঠনের অনিয়মের জেরে যে কোন সময় শাজাহানপুরের তিন শতাধিক নেতা পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে করে বিএনপি শুধু অস্তিত্ব সংকটে পড়বেনা, বগুড়ায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়বে। উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের বিএনপি ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তারা জানান, যাদের আন্দোলনে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত, বারবার মামলা হামলা খেয়ে জীবনকে বাজী রেখে পরিবার পরিজন থেকে মাাসের পর মাস অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছেন, জেলের ঘানী টেনে নিঃস্ব হয়েছেন। চোখের পানিতে দিন কাটলেও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থেকে জনগনের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন, বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভালবেসে দলীয় নির্দেশনা পালন করেছেন তারা আজ অবহেলিত।

অথচ যারা বিগত আন্দোলন সংগ্রামের সময় তাবলীগে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন, সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে মতামত তুলে ধরেছেন, রাজপথে থাকা তো দুরের কথা, ভয়ে বাড়ির মেঝেতেও ছিলনা। তারাই আজ বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে চলছেন। বিধায় এসব মেনে নিতে পারছেনা ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে এমন সব বিতর্কিত ও অভিযুক্তদের অনেকে ঠাঁই পেয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলছেন, দলের দুঃসময়ে হাল ধরা অনেক নেতা আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে দলটির বেশীরভাগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা বলছেন, ত্যাগী নেতারাই দলের একনিষ্ঠ কর্মীদের চিনে। এছাড়াও তারা অভিযোগ করেন, বগুড়া জেলা বিএনপির আহব্বায়ক ও বগুড়া -৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে বিগত আন্দোলনে রাজপথে দেখা যায়নি। তাই তার মতই দলের ঘুমিয়ে থাকা নেতাদের নি্েয় আহব্বাক কমিটির অনুমোদন করে এনেছেন তার সমর্থক দেখানের জন্য। তার্ওা আবার তাদের মতই যারা বিগত আন্দোলনে রাজপথে ছিলনা, মামলাও নাই, সংস্কারপন্থী মতাদর্শ ও ঘুমিয়ে থাকা নেতাদের নিয়ে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করছেন।

জানাযায়, উপজেলা বিএনপি সাবেক আহব্বায়ক আবুল বাশার, যুগ্ম আহব্বায়ক জাহেরুল ইসলাম, ফজলুল হক উজ্জল, আজিজুর রহমান বিদ্যুত, আলহাজ তমেজ উদ্দিন, ইউনুস আলী, ইদ্রিস আলী সাকিদার, মোখলেছার রহমান, মোজাফফর রহমান, ইমরান সরকার, সফিকুর রহমান ও তসলিম উদ্দিন সহ একুশ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটি ও প্রতিটি ইউনয়নের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকদের নেতৃত্বে আন্দোলন হয়েছিল।
এ প্রসংগে সাবেক যুগ্ম আহব্বায়ক আলহাজ তমেজ উদ্দিন বলেন, এসব নেতাদের মুল্যায়ন না করে বর্তমানে দলের নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে, যারা বিগত আন্দোলনে ছিলনা এবং যাদের বিরুদ্ধে একটা মামলাও নেই, তারাই এখন ত্যাগী নেতাদের উপর মাতব্বরী করছে।

তিনি বলেন, বর্তমান উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক হেেয়ছেন আবদুল হাকিম। তিনি বিগত দিনে রাজপথে আন্দোলন করা তো দুরের কথা, ১০-১২ বছর তার ছায়াও ছিলনা। আন্দোলন করার ভয়ে তিনি তাবলীগ জামাত করতেন। তাকে করা হয়েছে উপজেলা বিএনপি আহব্বায়ক। যুগ্ম আহব্বায়ক করা হয়েছে যুবদলের সভাপতি এনামুল হক শাহীনকে। সে উড়ে এসে জুড়ে বসে বিএনপি মুল দলের ত্যাগী নেতাদের উপর মাতব্বরী করছে। সে মুল্যায়ন না করে শুধু ঘুমিয়ে থাকা নেতাদেরকে দিয়ে ইউনিয়ন আহব্বায়ক কমিটি করছেন তাদের সমর্থক বাড়ানোর জন্য। এতে করে বিএনপির আগামী পথচলা অন্ধকারে নিমজ্জিত। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারনা করতে পারছেনা দলটির দিক নির্দেশনা প্রদানকারী সিনিয়র নেতারা।

দলের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, গোহাইল ইউনিয়ন কমিটির আহবায়ক বিগত ইউপি নির্বাচনে দুজনই আওয়ামীলীগের হয়ে নির্বাচনে মাঠে ছিল। যুগ্ন আহবায়ক আব্দুল মান্নান অতীতে বিএনপির সদস্য’ও ছিল না। শুধু টাকার বিনিময়ে আব্দুল মান্নানকে গোহাইল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক করা হয়েছে। অথচ নির্যাতিত ত্যাগী নেতা ও অসংখ্য মামলার আসামী বিগত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনী প্রার্থী আব্দুল মতিন কাজীকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি।

খরনা ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও সাবেক আহবায়ক ফজলুল হক উজ্জল, সাবেক সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আবু বক্কর ও সাবেক সদস্যগন সহ সিনিয়র, যোগ্য, ত্যাগী নেতাদের কমিটির অসম্মান জায়গায রেখে জুনিয়র নেতা আব্দুল হাই সিদ্দিকি রনিকে যুগ্ন আহবায়ক করে খরনা ইউনিয়ন বিএনপি কমিটি করা হয়েছে।আমরুল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক আহবায়ক ৪ মামলার আসামী আলহাজ্ব তমেজ উদ্দিনকে ৭ নং সদস্য করে রফিকুল ইসলাম নামে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে আহবায়ক করা হয়েছে।

চুপিনগর ইউনিয়নের আহবায়ক করা হয়েছে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তিকে সে বিগত ১৫ বছরে কোন রাজনীতিতে ছিলনা। অথচ সাবেক সভাপতি অর্ধ ডজন মামলার আসামী মোঃ এমরান হোসেন একজন ত্যাগী ও যোগ্য হওয়া সত্বেও তাকে নামমাত্র ৭ নং সদস্য করা হয়েছে। খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা সাবেক সভাপতি একাধিক মামলার আসামি যোগ্য, ত্যাগী নির্যাতিত নেতা মোঃ শফিকুল ইসলামকে ৬ নং সদস্য করে রেখেছে। আর যে কোনদিন বিএনপি করেনি সেই মতিউর রহমান মতি নামের একজনকে যুগ্ন আহবায়ক করা হয়েছে।

একই অবস্থা চলছে আড়িয়া ইউনিয়নে। সাবেক বিএনপি আহবায়ক ছাত্রনেতা ৩ মামলার আসামী মোহসিন আলী ও সাবেক সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক ফরহাদকে কমিটিতে পদ না দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। মাঝিড়া ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ডজন মামলার আসামী আজিজুর রহমান বিদ্যুত ও আশেকপুর ইউনিয়নের সাবেক আহব্বায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলীকে কমিটির অসম্মানজনক জায়গায় রাখার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এসবই অর্থের বিনিময় আর দলকে দুর্বল করার জন্যই ষড়যন্ত্র বলে উপজেলা ও তৃণমুল বিএনপির একাধিক সুত্র দাবী করেছে।

এসব কারনে শাজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে এবং দল ত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে তারা জানান। শুধু তাই নয়, ফেসবুকেও এনিয়ে একের পর এক ষ্ট্যাটাস দেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান উপজেলা বিএনপি আহব্বায়ক মোঃ আবদুল হাকিম এধরনের অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট উল্লেখ করে বলেন, ঠিকভাবেই এগুচ্ছে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। তবে অভিযোগ এবং মতামত যাই হোকনা কেন, দলের ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন করে সুসংগঠিত বিএনপির কমিটি উপহার দিতে ও সমাধানের পথ খুজে বের করতে দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকার বিএনপি পন্থী জনগন।