অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না: রাশেদা সুলতানা

4
অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না: রাশেদা সুলতানা

নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনিয়মের সঙ্গে থাকলে বরদাশত করা হবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লোভ, ভয়-ভীতি ও প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে পেশাদারি মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে, যেভাবে তাঁরা গত জাতীয় নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করেছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় রাশেদা সুলতানা এসব কথা বলেন।

Pop Ads

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘নির্বাচন যাতে একটা নিরপেক্ষ, উৎসবমুখর, সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, সেই দিকে কমিশনের নজর বেশি। এই নির্বাচনে সামান্য ব্যত্যয় দেখা গেলে, যার মধ্যেই দেখা যাক না কেন, অনিয়ম যিনি করবেন, সেই দায়ের সাজা ভোগ করতে হবে। আমরা যতগুলো নির্বাচন করেছি, সবগুলোই ভালো করেছি। আমরা উপজেলা নির্বাচনেও শিথিলের মধ্যে যাব না। এই বক্তব্য শুধু আমার নয়; এটা কমিশনের বক্তব্য।’ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে সেই পরিবেশ আপনারা নিশ্চিত করবেন। কোনোভাবেই কারও দ্বারা প্রভাবিত ও ভীতসন্ত্রস্ত হবেন না। ভালো কাজ করলে সঙ্গে আছি, মন্দ কাজ করলে সঙ্গে থাকব না। এটা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে গেলাম।’

অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুবিধা উল্লেখ করে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে যান, তখন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। অনলাইনে জমা দিলে এসব ঘটনা ঘটবে না। আমাদের দেশের মানুষ অনলাইন কার্যক্রম শিখে গেছেন। এ বিষয়ে যাঁরা বোঝেন, তাঁদের কাছে যেতে হবে, তাঁদের সহযোগিতা আপনারা নেবেন। আমরা অনুরোধ করব সম্ভাব্য প্রার্থী, যাঁরা নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে চান; তাঁরা প্রথম দিন থেকে অনলাইনে সাবমিট করার চেষ্টা করবেন।’

নির্বাচনে জামানত বাড়ানোর ব্যাপারে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীর জামানতের বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে এক লাখ টাকা জামানত। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৫ হাজার টাকা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের জামানত আগেরটাই রয়েছে। আগের জামানতের টাকা এখন আর বাস্তবসম্মত নয়। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য আড়াই শ ভোটারের স্বাক্ষর লাগত। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, একজন ভোটার কাউকে স্বাক্ষর দিলে উন্মুক্ত হয়ে যাবেন। প্রার্থী বা অন্যরা জেনে যাবেন, এটা তাঁর পক্ষের ভোট। গোপন রাখার স্বার্থে এটা রাখা ঠিক নয়। এ জন্য এই নিয়ম আমরা পরিবর্তন করেছি। পর্যায়ক্রমে এ ধরনের বিধিবিধানগুলো পরিবর্তন করা হবে।’

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের বিষয়ে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘ইভিএমে সবগুলো নির্বাচন করতে পারলে আমরা খুশি হতাম। কিন্তু আমাদের এত সক্ষমতা নেই। এখন যে ইভিএমগুলো আছে, তার মধ্যে যেগুলো কার্যকর আছে, সেগুলো দিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাজে লাগাতে চেয়েছি। প্রতিটি বিভাগে দুইটি করে জেলায় ইভিএম ব্যবহার করা হবে। রংপুর বিভাগে ইভিএম দরকার নেই। রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় ইভিএম ব্যবহার হবে। যেখানে ইভিএম থাকবে, সেখানে সব ধাপের নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহার করা হবে।’

মতবিনিময় সভার শুরুতে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন নির্বাচনের বিধিমালা তুলে ধরেন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কী কী বিধিনিষেধ রয়েছে, সরকারের কোন কর্মকর্তা, সংসদ সদস্যসহ অন্যদের ভূমিকা কেমন হবে, আচরণবিধিসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিনি নির্বাচনে বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করলে কী কী ধরনের শাস্তি হতে পারে, তা–ও উল্লেখ করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। মতবিনিময় সভায় রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার জেলা প্রশাসক, নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাসহ নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। সভায় তাঁরাও বক্তব্য দেন।