আসহাবে কাহফের বিষ্ময়কর গল্প শুধুই গল্প নয়

আসহাবে কাহফের বিষ্ময়কর গল্প শুধুই গল্প নয়। প্রতিকী-ছবি

আলহাজ¦ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): নিম্নের অবিশ্বাস্য ঘটনাটি সমগ্র মানবজাতির হেদায়েত গ্রন্থ আলকুরআনে বর্ণিত। বিধায় এর সাথে মুসলিমদের বিশ^াস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পবিত্র কুরআনের ১৮ নম্বর সূরা ‘সূরা কাহফে’ এই ঘটনাটি পুরোপুরি বয়ান করা হয়েছে। উক্ত সূরা ইহুদি পন্ডিতদের পরামর্শে কুরাইশদের প্রশ্নের জবাবে আল্লাহপাক নাযিল করেন।

Pop Ads

এই সূরার মাহাত্ম্য প্রকাশে সম্পূর্ণ সূরা এক সময়ে নাযিল করেন এবং ৭০ হাজার ফেরেশতা এর সঙ্গে আগমন করেন। ‘কাহফ’ এর শাব্দিক অর্থ বিস্তীর্ণ পার্বত্য গুহা। ‘আসহাবে কাহফ’ অর্থ গুহাবাসী। আসহাবে কাহফের স্থান সস্পর্কে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। তবে হাকীমুল উ¤œত হযরত আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বয়ানুল কুরআনে তাফসীরে হক্কানীর বরাত দিয়ে আসহাবে কাহফের স্থান ও কাল সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ধৃত করে বলেন, যে অত্যাচারী ও পৌত্তলিক রাজার ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আসহাবে কাহফ গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন,তার নাম ছিল ‘দাকইয়ানুছ’ আর সময়কাল ছিল ২৫০খৃষ্টাব্দ।

এরপর সেই মুকসালমিনা,তামলিখা,মারতুনুস,সানূনুস,সারিনুতুস,যুনুওয়াস, কায়াস্তারিয়ুনুস নামক যুবকগণ ৩০০বছর পযর্ন্ত ঘুমন্ত অবস্থায় থাকেন এবং ৫৫০খৃষ্টাব্দে জাগ্রত হন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্মের ২০বছর পূর্বে আসহাবে কাহফ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন। তাদের নিদ্রার স্থানটি এশিয়া মাইনর এলাকার ‘তরতূস’ অথবা ‘আফসূস’ শহর সাব্যস্ত করা হয়েছে। বর্তমানেও এই শহরের ধ্বংসাবিশেষ বিদ্যমান রয়েছে বলে উল্লেখ্য। তাদের জীবিত থাকার ব্যাপারে মতভেদ থাকলেও বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট কথা এই যে,তাদের মৃত্যু হয়েছে।

এই যুবকরা হযরত ঈসা (আঃ)-এর একনিষ্ঠ উম্মত ছিলেন। ইবনে ইসহাক বলেন, আসহাবে কাহফের জাগরণ,শহরে আশ্চর্য ঘটনার জানাজানি এবং জাগরণের সময়ের ন্যায়পরায়ন বাদশাহ বায়দুসীসের কাছে পৌঁছে সাক্ষাতের পর আসহাবে কাহফ বাদশাহর কাছে বিদায় প্রার্থনা করে। বিদায়ী সালামের সাথে তারা বাদশাহর জন্যে দুআ করে। আবার বাদশাহর উপস্থিতিতেই তারা নিজেদের শয়নস্থালে গিয়ে শয়ন করে এবং আল্লাহ তায়ালা তখনই তাদেরকে মৃত্যুাদান করেন। সারকথাঃ সাতজন ধর্মপরায়ন যুবক ২৫০খৃষ্টাব্দে পৌত্তলিক স¤্রাট দাকইয়ানুসের কোপানলে পড়লেন।

দরবারে তাদেরকে ডেকে বলা হলো,যদি তারা ধর্ম ত্যাগ না করে তবে হত্যা করা হবে। যুবকরা রাজদরবার থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নিল, তারা আত্মগোপন করে এক আল্লাহর ইবাদত করবে। আর খ্রীষ্টধর্মে বৈরাগ্যকে ধর্মের সর্বপ্রধান অঙ্গ মনে করা হয়েছিল। তাই যুবকগণ দ্বীনের হেফাযতের জন্যে এবং রাজার উৎপীড়ন-নির্যাতন থেকে নিজেদের ঈমান ও জীবন রক্ষার্থে একটি পাহাড়ের গর্তে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সেখানে কুদরতীভাবে ৩০০বছর ঘুমিয়ে রেখেছিলেন। আসহাবে কাহফকে এত দীর্ঘকাল নিদ্রায় অভিভূত রাখা সত্বেও তাদের দেহে নিদ্রার চিহ্নমাত্র ছিল না। বরং দর্শকরা তাদেরকে জাগ্রত মনে করতো। অধিকাংশ তাফসীরবিদ বলেন, তাদের চক্ষু খোলা ছিল। নিদ্রার কারণে দেহে যে শৈথিল্য আসে তাও তাদের মধ্যে ছিল না। বাহ্যতঃ এ অবস্থাও অসাধারণ এবং একটি কারামতই বটে।

এর কারণ ছিল তাদের হেফাযত করা-যাতে নিদ্রিত মনে করে কেউ তাদের উপর হামলা না করে অথবা তাদের আসবাবপত্র চুরি না করে। ঘুমের মধ্যে তাদেরকে পাশর্^ পরিবর্তন করানো হয়েছে, যাতে এক পাশর্^কে মাটি খেয়ে না ফেলে। তারা ৫৫০খৃষ্টাব্দে ঘুম থেকে উঠে এক সাথীকে মুদ্রা দিয়ে শহরে খাবার কিনতে পাঠায়। তিনি শহরে প্রবেশ করে দেখেন পুরো শহর সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে। দোকানী এত প্রাচীন মুদ্রা দেখে হতবিহŸল হয়ে গেল। এই যুবক কোন গুপ্তধন পেয়েছে মনে করে তার কাছে মুদ্রার উৎস সম্পর্কে জানতে চায়। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত তৎসময়ের রাজদরবার পর্যন্ত গড়ায়।

ধর্মপ্রাণ বাদশাহ বায়দুসীস যুবকদের কাহিনী শুনে বিষ্মিত হলেন। অতঃপর তাদের সঙ্গে সভাসদসহ গুহার কাছে গেলেন এবং দুআর আবেদন জানালেন। দুআর পর বিদায়ী সালাম শেষে নিজেদের গুহায় ঘুমিয়ে পড়েন এবং আল্লাহপাক তাদেরকে মৃত্যুদান করেন। আসহাবে কাহফের সাথে ‘কিতমির’ নামক একটি পালিত কুকুরও ছিল। যে কুকুর তাদের সাথে এসেছিল এবং গুহার বাইরে দুই পা বিস্তর করে পড়েছিল।

এখানেই সেটির মৃত্যু হয়। সূফী বুযুর্গগণ বলেন, সৎলোকদের মুহাব্বতের গুণে তুচ্ছ জীবও যে অমূল্য হয়ে উঠতে পারে, সেদিকে ইঙ্গিত করার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ সেই কুকুরের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। কুরআনে তার কথা উল্লেখ করেছেন এবং শেষে বেহেশতের অনন্ত সুখের আলয় পর্যন্ত পৌঁছাবেন।

একটি কুকুর যখন সৎলোকদের সংসর্গের কারণে এই মর্যাদা পেতে পারে তবে অনুমান করুন, যেসব ঈমানদার তাওহীদী লোক আল্লাহর ওলী ও সৎলোকদের ভালোবাসে তাদের মর্যাদা কতটুকু হবে? তাই আমাদের উচিত সৎলোকদের সোহবত গ্রহণ করা এবং তাদেরকে মনেপ্রাণে ভালোবাসা। [দেখুন, সূরা কাহাফ, আয়াতঃ ৯-২৬]