ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য

4
ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য

ইসলামে সচেতনতার গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি। ইসলামে সচেতনতা একজন মুসলিমের জীবনের মানবিক প্রস্তুতি, আত্ম-পরিচয়, আর দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিকে সঠিক ধারণা ও সচেতনতা উন্নত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘদিনের খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি হযরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব?

আমার উটনীটি ছেড়ে দিয়ে, না বেঁধে রেখে? রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথমে তোমার উটনীটি বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর। (জামে তিরমিজি ২৫১৭)

Pop Ads

কোরআনে সচেতনতা, আত্ম-পরিচয় সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত রয়েছে, যা মুসলিমদের জীবনকে পথ প্রদর্শন করে। তাদেরকে দীনি ও দুনিয়াভিত্তিক সচেতনতা তৈরিতে উৎসাহিত করে।

কোরআনে আল্লাহ বলেন, যিনি তার প্রতিটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন, কাদা মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন। (সুরা সাজদা ৭) এই আয়াতে মানুষের সৃষ্টির বিষয়ে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করে সচেতনতা তৈরিতে উৎসাহিত করেছেন।

কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে যখন বলা হয়, ‘মজলিসে স্থান করে দাও’, তখন তোমরা স্থান করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞানদান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত। (সুরা মুজাদালা ১১)

এ আয়াতে কর্মদ্যোমতা ও সচেতনতার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। অলসতা ও অকর্মণ্যতা ইসলাম পছন্দ করে না। তারা সবসময় কর্মসচেতন থাকবে। আলোচ্য আয়াতে মুমিনদের সতর্ক ও সচেতন জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ সতর্কতা মুমিনের পার্থিব ও অপার্থিব উভয় জীবনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মুমিন যেমন পাপের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে নিজেকে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, তেমনি বৈষয়িক ব্যাপারেও সে মানুষের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকবে।

একইভাবে মুমিন মানুষকে প্রতারিত করবে না। রসুলুল্লাহ সা. বলেন, (ইসলামে) ক্ষতি করা ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ ২৩৪১) নিজেও ক্ষতির শিকার হবে না। কাউকে ক্ষতিও করবে না। সচেতনতাই একমাত্র পথ। চোখ কান খোলা রাখা মুমিনের গুণ।

আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, আমি এখন তওবা করছি এবং তওবা তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা, যাদের জন্য প্রার্থনা করেছি মর্মন্তুদ শাস্তি। (সুরা নিসা ১৭-১৮)

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন, ‘মুমিন হবে বিচক্ষণ ও সচেতন। তার ভেতর কোনো প্রকার অসচেতনতা থাকবে না, যাতে সে বারবার প্রতারিত না হয়। কেউ কেউ বলেন, মুমিন দুনিয়ায় কোনো অপরাধ করার পর শাস্তি হলে তাকে পরকালে শাস্তি দেওয়া হবে না। আমি বলি, ব্যাপকার্থে এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করা সম্ভব। তবে মূল উদ্দেশ্য অসচেতনতা থেকে সতর্ক করা এবং স্বভাবজাত বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা ব্যবহার করা। (ফাতহুল বারি : ১০/৫৩০)

প্রাত্যহিক জীবনে সচেতনতা ঈমানের দাবি। মুমিন তার ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জীবনের ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন। সে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন তোমরা যদি মুমিন হও তবে কখনো অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি কোরো না। (সুরা নুর ১৭)

সুতরাং মুমিন সেসব স্বভাব-চরিত্র পরিহার করবে, যা তার ভেতর অসচেতনতা তৈরি করে। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘ধৈর্য ও স্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে (তিরমিজি ২০১২) অন্য বর্ণনায় এসেছে, পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিই সহনশীল ও ধৈর্যশীল হয় এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান হওয়া যায় না। (সুনানে তিরমিজি ২০৩৩)

সুতরাং একজন সচেতন মুমিনের জন্য অপরিহার্য সর্বপ্রথম নিজে একজন সচেতন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। এরপর সব ধরনের শিক্ষা অর্জন করা। সচেতন থাকার জন্য প্রথম কাজ হলো শিক্ষা বা আত্ম-উন্নতির জন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করা।

এরপর সমাজে অবদান রাখার মাধ্যমে অন্যকে সচেতন করার চেষ্টা করা। বিশেষ করে মানুষকে জাহান্নামের আগুনের বিষয়ে, পরকালীন শাস্তির বিষয়ে সচেতন করা। এরপর সচেতন মানুষ হিসেবে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা। নিজের ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য পর্যায়ক্রমে কাজ করে যাওয়া।

সবশেষে নিজেকে সৎ ও দানবীর করার চেষ্টা করা। ইসলামের অনুশাসনে নিজেদেরকে পারিবারিক সামাজিক রাষ্ট্রীয় সব ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ ও পদ্ধতি জানা। মুমিন কখনো ধোঁকা দেয় না ও ধোঁকা খায় না, এ বিষয়টা মাথায় রাখা। তাহলেই সচেতনতার জীবন যাপন করা সহজ হবে।