ঈসালে সাওয়াবের পদ্ধতি

ঈসালে সাওয়াবের পদ্ধতি
আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘কুল্লু নাফসিন যা-ইকাতুল মাওত…’মানে প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে, আর তোমাদের প্রতিদান তোমাদের পূর্ণমাত্রায় কিয়ামতের দিনেই দেওয়া হবে। তখন যাকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দেওয়া হবে এবং জান্নাতে দাখিল করা হবে,সেই হলো সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থাৎ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্য ও বাহ্যিক সৌন্দর্য ধোঁকায় ফেলার বিষয়,যাতে
বিমোহিত হয়ে অধিকাংশ নির্বোধ পরকাল সম্পর্কে উদাসীন হয়ে যায়। (সূরাঃ আল ইমরান,আয়াতঃ১৮৫) মৃত্যু মানুষের সুনির্দিষ্ট ও অবধারিত বিষয়।

মৃত্যুর সাথে সাথে আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়। তবে জীবদ্দশায় সদকায়ে জারিয়া করলে,ইলমে দ্বীনের প্রচার-প্রসার করলে অথবা নেক সন্তান রেখে গেলে মৃত্যুর পরও সাওয়াব জারি থাকে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন,যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়,তখন তার আমলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায। তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না। (১) সদকায়ে জারিয়া,(২) ঐ ইলম যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয়,(৩) নেক সন্তান যে তার জন্য দুআ করে। (সহীহ মুসলিম,হাদীস নং -১৬৩১) প্রত্যেকেরই জীবিত অবস্থায় এসব আমল করা উচিত।

Pop Ads

আর মৃত্যুবরণ করলে তার জন্য ঈসালে সাওয়াব করা কর্তব্য। নফল ইবাদত যেমনঃ নফল নামায-রোযা,দান-সদকা,যিকির-তিলাওয়াত ইত্যাদি করে তার সাওয়াব মৃতকে পৌঁছে দেওয়া এবং মাইয়েতের জন্য দুআ করাকে ঈসালে সাওয়াব বলে। ঈসালে সাওয়াব দ্বারা আমলকারীর সাওয়াব কমে না বরং আল্লাহ তায়ালা নিজ দয়া ও অনুগ্রহে আমলকারী ও মাইয়েত উভয়কেই পূর্ণ পরিমাণ সাওয়াব দিয়ে থাকেন। দান-সদকা দ্বারা ঈসালে সাওয়াব করা সর্বোত্তম। এর মধ্যে কয়েকটি স্তর রয়েছে। যথাঃ (ক) নগদ টাকা- পয়সা দান করা সবচেয়ে ভালো।

এরূপ অর্থ সদকায়ে জারিয়ার কাজে ব্যয় করলে আরো উত্তম হবে। (খ) তারপর কাঁচা খাবার (পাকানো ছাড়া) প্রদান করা। (গ) এরপর খাবার রান্না করে তা খাওয়ানো। ঈসালে সাওয়াবের জন্য কোনো দিন তারিখ নির্ধারণ করা এবং ঐ নির্দিষ্ট দিনে ঈসালে সাওয়াবের অনুষ্ঠান করা বিদআত। অতএব তা পরিতাজ্য। নির্দিষ্ট দিনের অনুসরণ ছাড়াই ঈসালে সাওয়াব করা উচিত। (আহসানুল ফতুয়া) ঈসালে সাওয়াবের জন্য কবর যিয়ারত
করা ভালো। যদিও দূরে বা কাছে সব জায়গা থেকেই ঈসালে সাওয়াব করা যায়।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,কিন্তু এখন
থেকে তোমরা কবর যিয়ারত করবে। কেননা কবর যিয়ারত দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি করে এবং পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (ইবনে মাজাহ) প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার কবর যিয়ারত করা সুন্নাত বা মোস্তাহাব। জুমআর দিন কবর যিয়ারত করা অধিক উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি প্রতি শুক্রবারে পিতা-মাতার কবর যিয়ারত করে তার গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং সে পিতা-মাতার অনুগত সন্তান হিসেবে তার
আমলনামায় লিখে দেওয়া হয়। (বায়হাকী)

বৃহস্পতিবার,শনিবার এবং সোমবারেও কবর যিয়ারত করা ভালো। (আহকামে মাইয়েত) এছাড়া যেকোনো দিন যেকোনো সময় কবর যিয়ারত করা যায়। তবে কবর তাওয়াফ করা এবং তাতে চুমু দেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ,চাই যতবড় মহান ব্যক্তির কবরই হোক না কেন। হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূল (সাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি কবরস্থানে গমন করে ১১বার সূরা ইখলাস পড়ে মৃতদের রূহের উপর সাওয়াব পৌঁছিয়ে দেয় তাকেও মৃতদের সমপরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হয়।

অপর হাদীসে আছে,যে ব্যক্তি কবরস্থানে গমন করে, সূরা ফাতিহা,সূরা ইখলাস ও সূরা তাকাছুর পড়ে কবরস্থ মৃতদের রূহে পৌঁছায়,তার জন্য মৃতরা সুপারিশ করে। আরেক হাদীসে আছে, যখন কোনো ব্যক্তি কবরস্থানে সূরা ইয়াসীন পাঠ করে তখন আল্লাহ তায়ালা মৃতদের আযাব শিথিল করে দেন এবং পাঠকারীকে মৃতদের সংখ্যা হিসেবে সাওয়াব লিখে দেওয়া হয়।(দেখুনঃ বেহেশতী যেওর) কবর যিয়ারতের নিয়ম হলো,কবরস্থানে প্রবেশ করে প্রথমে সমস্ত কবরবাসীর উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করা। সালামের পর কিবলার দিকে পিঠ এবং কবরের দিকে মুখ করে যথাসম্ভব কুরআন মাজীদ

তিলাওয়াত,বিভিন্ন সূরা ও দুআ-দরূদ পড়ার পর কিবলামুখী হয়ে অর্থাৎ কবরের দিকে পিঠ করে দুআ করা। জীবিতদের বখশিশ করা আমল মৃতদের জন্য কল্যাণকর হওয়া আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর কাছে একটি স্বীকৃত বিষয়। হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,একলোক রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন,কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয়,তিনি যদি কথা বলতে পারতেন,তাহলে সদকা করে যেতেন। আমি তার পক্ষ থেকে সদকা করলে কি তিনি এর সাওয়াব পাবেন। রাসূল (সাঃ) বললেন,হাঁ। (সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-১০০৪) (শব্দঃ৫৯৮)