কতটা নিরাপদ আছে আপনার সন্তানের জীবন?

কতটা নিরাপদ আছে আপনার সন্তানের জীবন? ছবি-সংগ্রহ

সুপ্রভাত বগুড়া (জীবন জীবীকা): সম্প্রতি কোন ব্যাপারটা খুব বেশি বেড়ে গেছে বলুন তো? – শিশু যৌন নির্যাতন বা Child sexual abuse। হোক ৫ বছরের শিশু কিংবা ১ বছর বয়সের কোলের বাচ্চা,

হোক ছেলে কিংবা মেয়ে; যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেকেই। বয়স্ক, কিশোর কিংবা মধ্যবয়স্ক কোন অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের যৌন উদ্দীপনার শিকার হচ্ছে এই শিশুরা।

Pop Ads

‘বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত ৬ মাসে প্রায় ৪৭৭ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ৩৫১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

ভাবা যায়? আপনার সন্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে তাই আজকের আয়োজনে রইল শিশু যৌন নির্যাতন নিয়ে কিছু কথা।

শিশু যৌন নির্যাতন কীরকম?

বিভিন্নভাবে অ্যাবিউজ করা হয় শিশুদের। তার আগে স্পর্শ বা ছোঁয়া নিয়ে বলতে হয়। স্পর্শের একটা ব্যাপার থাকে। সবার ছোঁয়া কিন্তু এক নয়।

মা-বাবা ও ভাই-বোনের ছোঁয়ায় থাকে স্নেহ-মমতা। তাতে থাকে এক অগাধ বিশ্বাস এবং নিরাপত্তার আবেশ। অন্য কোন খারাপ মানুষের ছোঁয়ায় কিন্তু তা থাকে না!

খারাপ উদ্দেশ্যের মানুষেরা ছোঁয় ব্যথা দিয়ে এবং প্রাইভেট বডি পার্টগুলোতে হাত দিয়ে। বাচ্চাকে কোলে নেয়ার নাম করে তাকে অ্যাবিউজ করাতো আজকালকার খুব রেগ্যুলার একটা শোনা ঘটনা। বাচ্চারা কিছু বোঝে না ভেবে তাদের সাথে হয়ে চলেছে কতো অন্যায়, তাই না?

কিন্তু বাচ্চারা কিন্তু সবই বোঝে! তারা শুধু বোঝে না যে আসলে তাদের সাথে কী করা হচ্ছে এবং কেনই বা এমনটা করা হচ্ছে।

শুধু অ্যাবিউজ করেই ক্ষান্ত থাকে না এই বোধহীনেরা, রেইপ বা ধর্ষণ করছে যাচ্ছেতাইভাবে! এই অবুঝ শিশুদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে তাদের ফুলের মতো নিষ্পাপ সুন্দর জীবনটাকে করে তোলে বিষাক্ত।

শিশুর জীবনে প্রভাব

এই শিশু যৌন নির্যাতন একটি শিশুর জীবনে ক্ষণস্থায়ী থেকে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, আত্মমর্যাদাবোধ হারানো, অনিদ্রা, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস

ডিসঅর্ডার, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি প্রভাবগুলো দেখা দিতে পারে নির্যাতিত শিশুটির মধ্যে। এই বিষাদময় ঘটনাগুলো বড়ো হওয়ার পরও মানুষটাকে কুরে কুরে খেতে থাকে। অনেকে সুইসাইডাল অ্যাটেমপ্টও নেয়।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, ব্যাপারটা কতটা ভয়াবহ এবং কষ্টদায়ক। তাই এসব পাশবিক ঘটনাগুলো না ঘটতে দেয়ার জন্য সেই পাষণ্ড মানুষগুলোকে চিনে নেয়াটা এবং এদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়াটা অত্যন্ত জরুরি।

কথা হবে পেডোফাইলদের নিয়ে

যাদের যৌন উদ্দীপনার জন্য শিশুদের উপর আকর্ষণ থাকে এবং এজন্য যারা শিশু যৌন নির্যাতন চালায়, তাদের বলে পেডোফাইল। এরা হতে পারে পরিবারের বাইরের কেউ বা আত্মীয়স্বজনের ভেতরে কেউ।

আপনি খুব বিশ্বাস করে হয়তো এদের কাছে সন্তানকে তুলে দিবেন, কিন্তু দিনশেষে এরাই আপনার সন্তানের জন্য কাল হয়ে উঠতে পারে! কিভাবে বুঝবেন কে পেডোফাইল? কারো গায়েতো লেখা থাকে না! তাহলে?

এক্ষেত্রে বাবা-মা, ভাইবোনের দায়িত্ব

পেডোফাইলদের কখনো চেনা যায়, তো কখনো না। আপনার শিশু সন্তানটি যখন আপনার কাছে এসে এমন কিছু (সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট) সম্পর্কে আপনাকে জানাবে,

তখন অবশ্যই তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে না দিয়ে খুবই সিরিয়াসলি নিন ব্যাপারটাকে। সবার আগে বাচ্চাকে কয়েকটা ব্যাপারে শিক্ষা দিন-

১. অপরিচিত কারো কাছে যেমন আপনার পারমিশন ছাড়া যাবে না তেমন পরিচিত কারো কাছে যাওয়ার আগেও আপনার পারমিশন নিবে।

২. বাচ্চার সাথে যদি কেউ কোন ধরনের অন্যরকম ব্যবহার করে তা অবশ্যই যেন আপনাকে জানায়।

৩. বাচ্চাকে যদি কেউ আঘাত করে তবে সে যেন চিৎকার দেয়।

৪. অপরিচিত কোন জায়গায় যেন সে না যায় বাবা-মাকে না জানিয়ে।

৫. শরীরের কোন স্থানে অন্যায়মূলকভাবে যদি কেউ স্পর্শ করে, তবে অবশ্যই আপনাকে জানাবে।

৬. কেউ ডাকলে বা কিছু খেতে দিলে যেন কাছে না যায় বা না খায়।

৭. সন্তানকে বাবা-মা, ভাইবোনের স্নেহমাখা স্পর্শ এবং অন্য স্পর্শের মধ্যকার তারতম্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিন।

বাবা-মা ও ভাইবোনের করণীয়

১) সন্তানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। সে কী বলতে চায় তা মন দিয়ে অনুধাবনের চেষ্টা করুন।

২) হয়তো আপনি খুব ব্যস্ত থাকেন। আপনার এই ব্যস্ততার সুযোগ যেন কেউ না নিতে পারে সে ব্যবস্থা নিন।

৩) সন্তান যদি সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড হয় এবং আপনাকে এসে বলে তবে তা চেপে না গিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।

যদি সেই অ্যাবিউজ করা ব্যক্তিটি পরিবারেরও কেউ হয়, পদক্ষেপ নিন। চিন্তা করবেন আপনার সন্তানের জীবনের কথা।

) কখনোই কারো কাছে সন্তানকে অন্ধ বিশ্বাস করে ছেড়ে দিবেন না। আপনি জানেন না কে কখন পাশবিক হয়ে উঠবে!

তাই যখনই কারো কাছে সন্তানকে দিচ্ছেন, নিজে সামনে উপস্থিত থাকবেন। ব্যক্তির মুভমেন্টে খেয়াল রাখবেন।

৫) যেখানে সেখানে বাচ্চাকে যে কারো সাথে যেতে দিবেন না।

৬) বাচ্চাকে কখনো কারো সাথে একলা থাকতে দিবেন না।

৭) যেকোনো বিপদে ৯৯৯-এ কল করতে ভুলবেন না।

৮) ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করুন।

৯) কোন পেডোফাইলকে প্রশ্রয় দিবেন না।

১০) সন্তানকে ভয়না দেখিয়ে বরঞ্চ জীবনমুখী শিক্ষাগুলো দিয়ে তাকে সচেতন করে গড়ে তুলুন।

দুর্ঘটনা কখনো বলে-কয়ে আসে না! তাই সচেতন থাকাটা অবশ্যই দরকার। দিন যত আচ্ছে, বেঁচে থাকাটাও হয়ে উঠছে চ্যালেঞ্জিং।

আর আপনার সন্তানের কিছু হলে আপনাকেই ভোগ করতে হবে। আশেপাশে হাহাকার ও আফসোস করার মানুষের অভাব নেই, কিন্তু আপনার কোন বিপদে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে কয়জন বলতে পারেন?

আপনার সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্বটা আপনার হাতেই। তাই এখনই সচেতন হন। শিশু যৌন নির্যাতনবন্ধ করতে সোচ্চার হন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here