কাটছাঁট হচ্ছে বাজেটে

9
কাটছাঁট হচ্ছে বাজেটে

দেশের আর্থিক খাতে সৃষ্ট টানাপড়েনের কারণেই চলতি অর্থবছরের বাজেটে বড় আকারের কাটছাঁট করা হচ্ছে। যদিও সরকার অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে আগে থেকেই কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটছে। বর্তমান বাস্তবতায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আয় না হওয়ায় বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। চলমান পরিস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যয় ৬০ হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বাজেটে বড় কাটছাঁট হচ্ছে

Pop Ads

জানা যায়, এবার রাজস্ব আয় কম। তবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ও মূল্যস্ফীতির হার বাড়তি। এই অবস্থায় মূলত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে না পারার কারণেই ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে আর্থিক চাপ থাকবে, তা আগেই ধারণা করা হয়েছিল।

বৈশ্বিক এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা কারণে অর্থনীতি সংকুচিত হবে বলে আভাস দিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। তার পরও উচ্চাভিলাষী বাজেট দেয় সরকার। তাই এখন মধ্য মেয়াদে এসে সংশোধিত বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁটের উদ্যোগ নিতে হচ্ছে।
একই সঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দাভাব শিগগিরই কাটছে না, এমন পূর্বাভাস থেকেই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়নের পথে হাঁটছে সরকার।

এদিকে চলমান ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে অর্থনীতিবিদরা মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও এখনই তা কার্যকর করতে পারছে না সরকার। মুদ্রা বিনিময় হার ক্রলিং পেগ পদ্ধতি হবে এমন ঘোষণা রয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অংশে কমানো হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং পরিচালন ব্যয় অংশে ৩২ হাজার কোটি টাকা কমবে। চলতি বাজেটে এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এই টার্গেট সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে।

সংশোধিত বাজেটে চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। যদিও আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে এডিপি বরাদ্দ ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা কমানোর কথা বলা হয়। সার্বিক অর্থনীতি ও বাজেট ব্যবস্থাপনা মূল্যায়নে চলতি অর্থবছর প্রথমবার ওই সভা গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ বাজেট কাটছাঁট হবে সংশোধিত বাজেটে। আগামী মার্চ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির সভায় বাজেট সংশোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কাটছাঁট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তাই চূড়ান্ত পর্যায়ে আরো বেশি হতে পারে। এতে ভর্তুকি, সুদ পরিশোধসহ বাজেট বাস্তবায়ন চাপের মুখে পড়বে—এমন আশঙ্কা অর্থ বিভাগের। বৈশ্বিক সংকট ও সার্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার কারণেই মূলত রাজস্ব আয় কাটছাঁট করা হচ্ছে। যদিও এর আগের অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ে কাটছাঁট করা হয়নি। এবার বিদেশি সহায়তাও কমে আসছে। এসব কারণে বাজেট বাস্তবায়নও কম হবে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭.৫ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১ শতাংশ হ্রাস করে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হবে ৬.৭৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হওয়া এবং বিদেশি ঋণ ও অনুদান কম আসায় ব্যয় কমিয়ে সাত লাখ দুই হাজার টাকা করা হবে। আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে আট লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ১৩.৩৮ শতাংশ বেশি।

প্রসঙ্গত, বাজেট ঘোষণার পরপরই পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি হবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে। এর কারণ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করা দুরূহ হবে, এমন মনে করা হয়েছিল।

সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক তখন বলেছিলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই বাজেটে ঘাটতি অনেক বেশি। বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে কাটছাঁট করতে হবে। তাঁর মতে, এবারের বাজেটে মোটা দাগে তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জ তিনটি হলো—প্রথমত, রাজস্ব নীতি; সরকার যে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, মুদ্রানীতি। তৃতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এই তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতায় এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে সরকার বাজেট কাটছাঁট করছে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।