দিনভর খুঁজে খুঁজে বই কেনা কিনেছে ক্রেতা-পাঠক

9
দিনভর খুঁজে খুঁজে বই কেনা কিনেছে ক্রেতা-পাঠক

বিপুলসংখ্যক ক্রেতা, দর্শনার্থী ও লেখকের উপস্থিতি নিয়ে ১০ দিন পার করেছে অমর একুশে বইমেলা। এরই মধ্যে বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়েছে ৮২৩টি নতুন বই। যদিও কাঙ্ক্ষিত অনেক নতুন বই এখনো আসা বাকি। গতকাল শনিবার দিনভর খুঁজে খুঁজে বই কিনেছে ক্রেতা-পাঠক।

গত দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিপুল জনসমাগম হয়েছে মেলায়। বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বইমেলার সাতটি প্রবেশপথ দিয়ে শুধু শুক্রবারেই এক লাখ ৬৯ হাজার ৫১৩ জন মানুষের পা পড়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। এই পরিসংখ্যান বাংলা একাডেমি পেয়েছে ফটকগুলোতে বসানো আর্চওয়ে গেট মেটাল ডিটেক্টর থেকে।

Pop Ads

গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবারের মতো উপচে পড়া ভিড় ছিল না।

তবে ব্যাপক পাঠক উপস্থিতি ছিল বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। তাঁরা বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলার মাঠ হয়ে উঠেছিল জনারণ্য। তবে উপস্থিতির তুলনায় বিক্রি কম ছিল। শনিবার সে তুলনায় অতটা ভিড় না হলেও রেকর্ড বেচাকেনা হয়েছে।

গতকাল মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে তালিকা ধরে ধরে বই কিনেছে অনেকে। খুলনা থেকে আসা কয়েকজন ক্রেতা খুঁজে খুঁজে কিনছিলেন গল্প, উপন্যাস, গবেষণা ও প্রবন্ধ-নিবন্ধের বই। হাতের তালিকার বাইরে গিয়ে খুব একটা কেনেননি। তাঁরা কালের কণ্ঠকে জানান, খুলনার পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার থেকে এসেছেন সবাই। প্রশিক্ষণকেন্দ্রের পাঠাগারের জন্য বই কিনছেন।

নির্বাচিত বিষয় ও প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই কিনছেন।

কথাপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে কথা হয় এর জ্যেষ্ঠ বিক্রয় নির্বাহী ইউনুস আলীর সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, অন্যান্য দিন ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও মেলার প্রথম ১০ দিনের মধ্যে শনিবার সবচেয়ে বেশি পাঠক সমাগম হয়েছে। এদিন ঘোরাফেরার চেয়ে বই কেনায় বেশি মনোযোগ দেখা গেছে। ইউনুস আলী বলেন, বই নিয়ে শনিবারই সবচেয়ে বেশি পাঠক আগ্রহ দেখা গেছে। বিক্রিও হয়েছে বেশি।

দশম দিনে বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়েছে ১৫২টি নতুন বই। সময় প্রকাশন এনেছে মুনতাসীর মামুনের ‘কী চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু’। এতে ছয়টি প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বৈচিত্র্যময় দিকগুলো তুলে এনেছেন লেখক। কথাপ্রকাশ এনেছে হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস ‘উপেক্ষিতা সীতা’। এত দিন মহাভারত নিয়ে উপন্যাস লিখলেও লেখকের এই বই রামায়ণ নিয়ে লেখা। অনন্যা প্রকাশ করেছে শাহআলম সাজুর কিশোর রোমাঞ্চ ‘পাঁচ গোয়েন্দা দুর্গম পাহাড়ে’। আজব প্রকাশ করেছে মিলু আমান ও হক ফারুকের সংকলন ও সম্পাদনায় ‘গুরু আজম খান’।

মূল মঞ্চের আয়োজন

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সুচিত্রা মিত্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আহমেদ শাকিল হাসমী এবং অণিমা রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মফিদুল হক।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘লোকজীবনের মাঝেও সদর্পে অভিজাতের শিল্পকে বরণ করে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন সুচিত্রা, তবে তা অবশ্যই পরিমিত মাত্রায়। দৃঢ়তাই ছিল তাঁর ব্যক্তিচরিত্র ও শিল্প চরিত্রের বড় পরিচয়।’

সভাপতির বক্তব্যে মফিদুল হক বলেন, ‘সংগীত ও সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়েই এই মহীয়সী শিল্পীকে খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁর সাংস্কৃতিক মানস ও অকুতোভয় আদর্শ আমাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি দিলারা হাফিজ, চঞ্চল আশরাফ ও রনজু রাইম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অনিমেষ কর, কাজী বুশরা আহমেদ তিথি, মিজানুর রহমান সজল এবং মুস্তাক আহমেদ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুঁথি পাঠ করেন ফকির আবুল হাশেম।