চিকিৎসার বাইরে ৯২ শতাংশ গ্লকোমা রোগী

4
চিকিৎসার বাইরে ৯২ শতাংশ গ্লকোমা রোগী

বিশ্বজুড়ে মানুষের অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো চোখের গ্লকোমাজনিত সমস্যা। প্রথমটি ছানি রোগ। ছানি রোগের অন্ধত্ব সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা যায়। কিন্তু গ্লকোমাজনিত অন্ধত্ব নিরাময় করা যায় না।

দেশে চোখের রোগ গ্লকোমায় ভুগছেন, এমন মানুষের অনুমিত সংখ্যা ২৫ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা নিলেও ৯২ শতাংশ রোগী জানেন না তিনি গ্লকোমা রোগে ভুগছেন।
চিকিৎসার বাইরে ৯২% রোগী

Pop Ads

বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহ-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমণ্ডির এক হোটেলে বাংলাদেশ গ্লকোমা সোসাইটি (বিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান। ওয়ার্ল্ড গ্লকোমা অ্যাসোসিয়েশন এ বছর বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহের (১০-১৬ মার্চ) প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করছে—‘একসঙ্গে হাত ধরি, গ্লকোমামুক্ত বিশ্ব গড়ি’।

গ্লকোমায় চোখের অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও চোখ অন্ধ হয়ে যায়। গ্লকোমা অনেক প্রকারের হয়। যেমন : ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লকোমা, ক্লোজড অ্যাঙ্গেল গ্লকোমা, নরমাল টেনশন গ্লকোমা। এরিস্টোফার্মা লিমিটেডের সৌজন্যে ও সোসাইটির উদোগে আয়োজিত আলোচনাসভায় সোসাইটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শেখ এম এ মান্নাফ গ্লকোমা নিয়ে করা এক জরিপের ফল প্রকাশ করেন।

শেখ এম এ মান্নাফ বলেন, ‘২০২১-২২ সালে আমরা সারা দেশে ৬৫ উপজেলায় একটি জরিপ করি। এতে ৩৫ বছরের বেশি ৫২ হাজার মানুষ এই জরিপে অংশগ্রহণ করেন। জরিপে দেখা গেছে, ৩.২ শতাংশের গ্লকোমা রয়েছে।’

তিনি বলেন, জরিপে দেখা গেছে, গ্রামের তুলনায় শহরে গ্লকোমার প্রবণতা বেশি। দুই ধরনের গ্লকোমা প্রবণতা বেশি।

নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ন্যারো-অ্যাঙ্গেল গ্লকোমায়। পুরুষদের মধ্যে ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লকোমার হার বেশি। নারীদের ন্যারো-অ্যাঙ্গেল গ্লকোমার হার ৬ শতাংশ ও পুরুষদের এই হার ১.৫ শতাংশ। ন্যারো-অ্যাঙ্গেল গ্লকোমা মূলত চোখের ছানি এবং দূরদর্শিতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লকোমা পুরুষদের ৫ শতাংশ ও নারীদের ২.৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১০ শতাংশ মানুষ গ্লকোমা প্রবণতায় রয়েছে।
চিকিৎসকরা বলেন, মূলত চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চ চাপের কারণে গ্লকোমা হয়। এই রোগে একবার দৃষ্টি যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা আর ফিরিয়ে আনা যায় না। চোখে গ্লকোমা হলে রোগীকে সারা জীবন চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতে হয়।

রোগটির পারিবারিক ইতিহাস, বয়স ৪০-এর বেশি হলে, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড সেবন করলে, চোখের অন্যান্য রোগ ও জন্মগত চোখের ত্রুটি থাকলে গ্লকোমার ঝুঁকি বাড়ে।

দীর্ঘদিন গ্লকোমা রোগে ভুগছেন, এমন দুজন রোগী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। একজন সোবান মিয়া। তিনি জানান, তাঁর ৩০ বছর বয়সে গ্লকোমা শনাক্ত হয়। এরপর দুই চোখে অপারেশন করতে হয়। নিয়মিত ওষুধ সেবনে এখন রোগটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এ বিষয়ে ডা. শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, এই রোগী কত বছর বয়সে তিনি গ্লকোমা আক্রান্ত হয়েছেন, এটি তিনি জানেন না। এটি দুটি কারণে হতে পারে। এক, অতিরিক্ত ওষুধ সেবন ও বংশগত। যেভাবেই হোক না কেন, আমাদের মনে রাখতে হবে গ্লকোমা কখনো ভালো হয় না। রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই যত দ্রুত শনাক্ত হবে, নিয়ন্ত্রণ তত সহজ।

অন্য রোগী সারিয়া বলেন, ‘আমাদের বংশগতভাবে গ্লকোমা রোগটি ছিল। কিন্তু কোনো উপসর্গ না থাকায় আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। যখন বুঝতে পারলাম, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এর পরও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কারণে আমার চোখগুলো বেঁচে গেছে। এখন রোগটি নিয়ন্ত্রণে আছে।’

ঢাকা আই কেয়ার হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, উন্নত বিশ্বে ৫০ শতাংশ রোগী জানেন না তাঁর গ্লকোমা হয়েছে।

ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, গ্লকোমা প্রতিরোধে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত করা জরুরি। যদি কারো রোগটি শনাক্ত হয়, কোনোভাবে চিকিৎসার বাইরে থাকলে বা নিয়মিত ড্রপ ব্যবহার না করলে অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হবে।

আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন গ্লকোমা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা সহীদ। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ, এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অফ অফথালমোলজির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন, অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (ওএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, ওএসবির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ, বাংলাদেশ গ্লকোমা সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান ও অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম প্রমুখ।