জেলা পর্যায়ে মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া ফল বিক্রেতার মেধাবী কন্যা’র দায়িত্ব নিলেন মুশফিক!

জেলা পর্যায়ে মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া ফল বিক্রেতার মেধাবী কন্যা'র দায়িত্ব নিলেন মুশফিক! ছবি-সংগ্রহ

সুপ্রভাত বগুড়া (শিক্ষা-সাহিত্য): ফুটপাতে ফলবিক্রেতার মেধাবীকন্যা তাইরিনা সাবরিন তোরা। এসএসসি পরীক্ষায় বগুড়ার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। শুধু তা-ই নয়; জেলা পর্যায়ে মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছে তাইরিনা।

তাক লাগানো এই ফলের পরও অর্থাভাবে তার কলেজে ভর্তি নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। খবর পেয়ে মেধাবী এই শিক্ষার্থীর পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম।

Pop Ads

বগুড়ার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১ হাজার ২৬৬ নম্বর পেয়ে জেলা পর্যায়ে মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া তাইরিনা সাবরিনের বাবা তোফায়েল আহমেদ বগুড়া শহরের ফুটপাতে ফল বিক্রি করে জীবিকা চালান।

পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে তাক লাগানো ফল করেও ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ খবর পেয়ে তাইরিনার পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা তাঁর পরিবারকে জানান বগুড়ার সন্তান মুশফিকুর রহিম।

প্রথম ধাপে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে কলেজে ভর্তি, পোশাক ও বই কেনার জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা পাঠান মুশফিক। শনিবার মুশফিকুর রহিমের পক্ষ থেকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন এই অর্থ তাইরিনার হাতে তুলে দেন।

বগুড়ার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে এই সহায়তা প্রদানের সময় অন্যদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন এবং মুশফিকুর রহিমের শৈশবের বন্ধু মাসুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানান, মুশফিকুর রহিম ভর্তি ছাড়াও বই-খাতা কেনার জন্য ২০ হাজার টাকা তাইরিনার হাতে তুলে দিয়েছেন। প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার বৃত্তি ওর ব্যাংক হিসাব নম্বরের মাধ্যমে দেবেন মুশফিক। মেয়েটা যত দিন পড়াশোনা করতে চায় তত দিন ওর পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন বগুড়ার কৃতি সন্তান মুশফিক।

তিনি আরও বলেন, এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১২৬৬ নম্বর পেয়ে জেলায় প্রথম হয়েছে তাইরিনা সাবরিন। তৃতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসেও মেধাবী ছাত্রী ছিল। অভাব, অনটন দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে পড়াশোনা করছে জেনে সব সময় ওর পাশে আমরা ছিলাম। শত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সাফল্য অর্জন করেছে মেয়েটি।

তাইরিনা সাবরিনের বাবা তোফায়েল আহমেদ বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় কবি নজরুল ইসলাম সড়কে ফুটপাতের মৌসুমি ফল বিক্রেতা। মাথা গোঁজার মতো নিজেদের থাকার মতো একটা ঘরও নেই।

শহরের সূত্রাপুর এলাকায় পাঁচ হাজার টাকার বাড়িতে ভাড়া থাকেন তারা। ভাইবোনের মধ্যে সাবরিন বড়। মা শামিমা আহমেদ গৃহিণী। তাইরিনা সাবরিন বলে, তার সাফল্যের নেপথ্যে বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। রাতদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফুটপাতে বসে মৌসুমি ফল বিক্রি করছেন।

সেই উপার্জনে পরিবারের সবার মুখে ভাত জুটছে, তার পড়াশোনার খরচ চলছে। এখন বাবার স্বপ্নপূরণ করাটাই তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ও বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হতে চায় সে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here