নওগাঁর নিয়ামতপুরে মন্দিরের জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ

সুপ্রভাত বগুড়া (এমরান মাহমুদ প্রত্যয়): নওগাঁর নিয়ামতপুরে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের মন্দিরের জায়গা দখল করে দিলকার বর্মন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।অভিযোগে জানা যায়, ঐ মন্দিরের পশ্চিম ও পূর্ব পার্শ্বের খোলা জায়গা দখলে নিয়ে পূর্বদিকে বাড়ী নির্মান এবং পশ্চিম দিকে প্রাচীরের দরজা কেটে বারান্দা নির্মাণের কাজ শুরু করায় স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি (আদিবাসী) সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

আরো জানা গেছে, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের গন্ধশাইল মৌজার সিতেস্বরী নামে ছোট্ট একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (আদিবাসী) বসবাস।  দীর্ঘ ১২ বছর পূর্বে সেখানে ২২টি পরিবার একটি খাস সম্পত্তির উপর বসবাস শুরু করে। তাদের ধর্মীয় কার্য পরিচালনার জন্য পাড়ার মাঝখানে একটি ছোট্ট মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।

Pop Ads

যাদের সামর্থ রয়েছে তারা বাইরে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় বর্তমানে সেখানে ৭টি পরিবার রয়েছে। কিন্তু গত ৫ বছর পূর্বে মিলন এর নিকট হতে জেলার পোরশা উপজেলাবাসী ( গন্ধশাইল শ্বশুড়বাড়ী) দুলুর ছেলে দিলকার বর্মন মন্দিরের পশ্চিম পার্শ্বের বাড়ীটি কিনে নেয়। কিন্তু বাড়ীর প্রাচীরের পূর্বদিকে মন্দিরের কাছে একটি দরজা কেটে বারান্দা করে জয়গা দখলের চেষ্টা করছে।

পাশাপাশি মন্দিরের পূর্বদিকেও বাড়ী নির্মান করে মন্দিরের জায়গা দখল করে।গত শুক্রবার  সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, দুলুর ছেলে দিলকার বর্মন বেশ কিছুদিন মন্দিরের পশ্চিম পার্শ্বের জায়গা দখলের জন্য মাটি ফেলে রেখেছে এবং পূর্ব  পার্শ্বে টিন দিয়ে বাড়ী নির্মান করেছে দিলকার বর্মনে শ্যালক মনোরঞ্জন ।

এতে করে মন্দিরের পূজারী, ভক্তবৃন্দ ও দর্শানার্থীদের খোলা চত্বরে বসার স্থানটিও আর রইল না। শুধু তাই নয়, অবশিষ্ট রইল না মন্দিরে পাশ দিয়ে পাড়ার ভেতরে প্রবেশের একমাত্র রাস্তাটিও।এ বিষয়ে পাড়ার মাতব্বর পলিতের ছেলে অর্মল্য এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা বিডিও এর মাধ্যমে ২০০৮ সালে ২২টি পরিবার এখানে খাস জায়গার উপর বসবাস শুরু করি।

জায়গা খুব কম হওয়ায় আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই যে, যাদের সামর্থ রয়েছে তারা বাইরে চলে যাক। পর্যায়ক্রমে সামর্থ পরিবারগুলো বাইরে চলে যাওয়ায় বর্তমানে আমরা ৭টি পরিবার রয়েছি। পাড়ার মাঝখানে একটি মন্দির রয়েছে। কিন্তু একটি পরিবার যারা ৫ বছর পূর্বে এসেছে আমাদের সাথে বনিবনা হয় না। মন্দিরের জায়গা দখল করে বাড়ী নির্মান করে। এ নিয়ে মাঝে মাঝেই গোলমাল হয়।

যে কোন মূহুর্তে বড় রকমের ঘটনা ঘটেও যেতে পারে। আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের কাছেও অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারী সার্ভেয়ার এসেছিল জায়গাটি দেখার জন্য কিন্তু দিলকার সেই সার্ভেয়ারের সাথেও খারাপ আচরণ করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দিলকার বর্মন বলেন,  আমি মন্দিরের কোন জায়গা দখল করেনি। আমি মিলনের কাছ থেকে যে পজিশনের জায়গা কিনে নিয়েছি সেই পজিশনেই আছি। আমার বাড়ীর পিছনে বিদ্যূতের খুটি পর্যন্ত পজিশন। আমি দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে বাড়ীসহ পজিশন কিনেছি। আমার তো বসবাস করতে হবে। তাই মাটি তুলেছি বাড়ী মেরামতের জন্য। আমার বাড়ী মন্দিরের আগের।

মন্দির তৈরীতো মাত্র ৩ বছর হলো। তিনি আরো বলেন,  আমি একটু ভালো আছি তাই তাদের সহ্য হচ্ছে না। আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে আমাকে উচ্ছেদ করার জন্য। মন্দিরের পূর্ব দিকের বাড়ী আমার শ্যালক মনোরঞ্জনের। সেই বাড়ীও মন্দির নির্মানের আগের। আমিও তো হিন্দু সম্প্রদায়ের। মন্দিরের প্রতি আমারও তো দায়িত্ব রয়েছে। কেন আমি মন্দিরের জায়গা দখল করবো। 

স্থানীয় পাড়ইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুজিব গ্যান্দা বলেন,  বিষয়টি নিয়ে আমি পরিষদে সালিশ করেছি।  সমাধানও করে দিয়েছি। কিন্তু কেই কাউকে মানে না তাই সমস্যার সমাধান হয় না। সমস্যা লেগেই থাকে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়া মারীয়া পেরেরা বলেন, বিষয়টি থানায় জানানোর কথা। কেউ কিছু করতে পারবে না। যে যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায় থাকবে। করোনার কারণে আমাদের অনেক কাজ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় পাওয়া যাচ্ছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here