ফুটবল লিগটা হয়ে গেছে ঢাকাকেন্দ্রিক

11
ফুটবল লিগটা হয়ে গেছে ঢাকাকেন্দ্রিক

তখনো উপমহাদেশের ফুটবলে পেশাদার প্রথা চালু হয়নি। ঘরোয়া ফুটবলের কাঠামোয় পেশাদারিত্ব আনতে চাওয়ায় অনেকেই নাক সিটকিয়ে বলেছিলেন ভারত এত বড় দেশ হয়ে যেটা পারছে না আর বাংলাদেশ শুরু করবে পেশাদার লিগ। ফিফা এবং এএফসি থেকে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়েছিল ভিশন এশিয়া প্রকল্প, কিন্তু এই উপমহাদেশে সেটি বাস্তবায়ন করার সাহস কারো ছিল না। ঘরের মানুষের বাধার মুখেও বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল সেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর ২০০৭ সালে প্রথম বার দেশের ফুটবলে শুরু হয় পেশাদার লিগ। প্রথমে এটি বি (বাংলাদেশ) লিগ নামে শুরু হলেও পরবর্তীকালে সেটি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নামে চলতে থাকে। দেশের ফুটবলে নতুন এই ডায়মেনশন এনে দেন হেলাল।

পেশাদার লিগ প্রবর্তন করতে গিয়ে আনোয়ারুল হক হেলালকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছিল। বাধার মুখে চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেকটাই একা চলতে হয়েছিল। তার শুরু করা সেই পেশাদার ফুটবল লিগ আজ দেশের ফুটবলের হৃদপিণ্ড। একমাত্র এই একটি লিগ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ ফুটবলে আর কোনো উজ্জ্বলতা নেই। বর্ষীয়ান এই সংগঠকের হাতে গড়া লিগ এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। পেশাদার লিগের এবার ষোলোতম আসর শুরু হয়েছে।

Pop Ads

কেমন চলছে পেশাদার লিগ? আনেয়ারুল হক হেলাল জানালেন, ‘সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই লিগটা একবারও বন্ধ হয়নি। এই লিগ যখন শুরু হয় তখন উদ্দেশ্য ছিল সারা বাংলাদেশে খেলাটা হবে। প্রথম আসরে চট্টগ্রাম, খুলনার দল খেলেছে। ঢাকার দল ওই দুই শহরে গিয়ে খেলেছে। এখন ৫ ভেন্যুতে ১০ দল খেলতে যাচ্ছে কিন্তু ৫ ভেন্যুর কোনো ক্লাবই নেই। ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সব ক্লাবই ঢাকার। চট্টগ্রাম আবাহনী থাকলেও তারা ঢাকায় অবস্থান করে। চট্টগ্রামে পেশাদার লিগের খেলা হচ্ছে না।

একটা জাম বাগানের ভেতরে যদি একটাই আমগাছ থাকে তাহলে সেটাকে কেউ আমবাগান বলবে না। জামবাগানই বলবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে অনেকটাই ঢাকা লিগের মতো। ঢাকার দল বাইরে গিয়ে খেলছে। যেখানে যাচ্ছে সেখানকার কোনো দল না থাকলে স্থানীয় দর্শকের আগ্রহ হবে না।’ তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের জন্য একটা পরিকল্পনা নিতে হবে যেন রাজশাহী , বরিশাল, খুলনা ক্রমান্বয়ে ফুটবল দল গঠন করে লিগে নাম লেখায়। তাহলে হবে কি, বরিশালে খেলা হলে বরিশালের সমর্থকরা মাঠে যাবে। দর্শক তৈরি হবে। ফ্যানবেজ দরকার। এ কারণেই লিগের নামকরণ হয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। সবই হবে। চেষ্টা করতে হবে।’

হেলাল বললেন, ‘আমার সময়ের পরবর্তী যারা এসেছে তারও আগের সিস্টেমে লিগ চালিয়েছে। পেশাদারিত্বের যে কাঠামো সেটা এত দিনেও আসেনি। তখন এএফসি থেকে বলা হয়েছিল ক্লাবকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। ক্লাবের আয় থাকতে হবে। খেলাটাকে বাণিজ্যে পরিণত করতে হবে।

এত বছরেও সেটা হয়নি। ক্লাবগুলোর ডোনেশনে না চালিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এটা এখনো হয়নি। এখন কী কোনো ক্লাব আছে, যারা প্রফিট করতে পারে ? এটা এক দিনে হবে না। করতে হবে। কিন্তু ওই যে আগের সিস্টমে রয়ে গেছে। আগে তো আমরা গেট সেলও দেখেছি। এখন কি সেটা আছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্লেয়ারদের পেমেন্ট দেওয়ার সিস্টেম বদল করতে হবে। বলছি না এখনই শুরু করতে হবে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে করতে হবে। আমরা বলেছিলাম মোহামেডান এবং আবাহনীর ভেন্যু হবে ঢাকায়। কারণ ওদের সমর্থক আছে।’

একটা ক্লাবেরও বয়সভিত্তিক দল নেই। হেলাল বললেন, ‘তখন সিস্টেম ছিল প্রত্যেক ক্লাবের বয়সভিত্তিক দল থাকতে হবে। সেটা এখনো দেখা যাচ্ছে না।’ কার খেলা দেখতে মাঠে যাবে দর্শক? হেলাল বললেন, ‘এখন স্টার কারিশমা নেই। এটা তৈরি করে সাপোর্টার এবং মিডিয়া। মিডিয়া কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। যে কারণে স্টার হচ্ছে না। কিন্তু জাতীয় দলের দিকে যদি দেখি তাহলে বলব খুব খারাপ না।

হয়তো অনেক সময় রেজাল্ট পায় না, সেটা ভিন্ন। আগে জাতীয় দলের ক্যাম্প হতো এক মাস দেড় মাস। এখন হয় সাতদিন। এটাই সমস্যা। কারণ এখন ক্লাবকে আইন-কানুনের মধ্যে থাকাতে হচ্ছে। এটা হয়েছে লিগের কারণে। ক্লাবগুলোকে উন্নতি করতে হবে। সেখানে উন্নতি হলে ওভারঅল ফুটবল উন্নতি হবে। ন্যাশনাল টিমে এসে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে হবে না। এটাই সমস্যা রেজাল্ট পাচ্ছে না ন্যাশনাল টিম।’

ফুটবলাররা যোগ্যতার চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছে? হেলাল প্রতিবাদী কণ্ঠে বললেন, ‘টাকা বাড়লে, টাকার মানও তো কমেছে। সেইটা হিসাব করেন। আমরা কায়সার হামিদকে ২০/২২ লাখ টাকা পেমেন্ট দিয়েছি। তখনকার ২০ লাখ টাকা এখনকার আমলে ৫ কোটি টাকা হবে। তখন ২০ লাখ টাকার জমির এখন মূল্য কত? ১৯৮৬, ১৯৮৭, ১৯৮৭ সালে তখন এক ডলারে কত পাওয়া যেত, ১৮ বা ১৯ টাকা। এখন ১১০ টাকা। ৯-১০ গুণ বেড়েছে। যদি ১০ গুণ বেড়ে যায় তাহলে সেই তুলনায় এখন ফুটবলাররা অর্ধেক টাকাও পায় না। তারপরও বলব বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী এখন যা পাচ্ছে খারাপ না।’ হেলাল বললেন, ‘ভারতের ফুটবলারদের মানের তুলনায় আমাদের খেলোয়াড়রা ভালো টাকাই পান।’