বগুড়া সান্তাহারে মাস্ক বেচে সংসার চালাচ্ছেন ১ হাত হারানো ফারুক

বগুড়া সান্তাহারে মাস্ক বেচে সংসার চালাচ্ছেন ১ হাতা হারানো ফারুক। ছবি-শিমুল হাসান

সুপ্রভাত বগুড়া (শিমুল হাসান, আদমদীঘি,বগুড়া): এক হাতের ওপর ভরসা করে করোনা মহামারির মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌর এলাকার হাত হারানো ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তি।

করোনায় কর্মহীন হয়ে বেশ কয়েকদিন বাড়িতে থাকলেও পেটের তাগিদে বাধ্য হয়েই এক হাতের ওপর ভর করে নামতে হয় ফেরি করতে। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাস্ক নিয়ে ছুটছেন পৌর শহরের বিভিন্ন অলিগলি।

Pop Ads

জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী ফারুক হোসেন  জানান, গত এক যুগ আগেও স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সংসার জীবন ভালোয় চলছিল। ২০০৮ সালে ব্যবসায়িক কাজে সান্তাহার থেকে ট্রেনযোগে হিলিতে যাওয়ার পথে ট্রেনের একটি বগির দরজা থেকে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

শেষ সহায়-সম্ভল দিয়ে দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও হাতটি আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর থেকে সংসার চালাতে এক হাতের ওপর ভর করেই শুরু করেন ট্রেনে-ট্রেনে ব্রাশ, চিরুনি, রুমালসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র ফেরি করতে। আবার কখনো-কখনো রেললাইনের পাশে বসে মৌসুমি ফলও বিক্রি করেন।

সবমিলিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার ভালোই চলছিল। হঠাৎ মহামারি করোনার থাবায় সব থেমে যায়। কিন্তু থেমে থাকেনি ফারুকের পরিবারের সদস্যদের পেটের ক্ষুধা। বাবাকে সাহায্য করতে খাবার হোটেলে কাজ করা ফারুকের বড় ছেলেও কর্মহীন হয়ে পড়ে।

ফলে লকডাউনের মধ্যে মহাবেকায়দায় পড়ে পুরো পরিবার। দিশেহারা হয়ে পড়েন ফারুক। অবশেষে তিনি কিছু টাকা সংগ্রহ করে কঠোর পরিশ্রমকে পুঁজি করে নিজের প্রচেষ্টায় শুরু করেন মাস্ক বিক্রি করা।

দিনভর সান্তাহার রেলগেট, হাটখোলা, কাঁচাবাজার, রেলস্টেশন এলাকা ঘুরে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে সন্ধ্যায় চাল, ডাল কিনে বাড়ি ফেরেন। এভাবেই তার কাটতে থাকে করোনাকালী। তিনি বলেন, আগের মতো আর সব কাজ করতে পারি না।

তারপরও মনের জোরে আর সংসারের তাগিদে ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হচ্ছে। ইচ্ছা ছিল ছোট একটি ব্যবসা করার কিন্তু টাকার অভাবে স্থায়ী দোকান দিতে পারিনি। তবে সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসতেন, তাহলে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনবেলা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারতাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here