বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়াতে হবে

6
বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়াতে হবে

আত্মহত্যা অতীতেও ছিল, তবে এখন মিডিয়ার কল্যাণে মানুষের মধ্যে জানাজানি বেশি হচ্ছে। তবে কম বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দৃশ্যত বেড়েছে। হতাশা, যন্ত্রণা, কষ্ট ও ব্যর্থতা, প্রেমে বিচ্ছেদ, পরকীয়া, মাদক—এসব নানা কারণে মনোজগতে সংকট তৈরি হয়। তখন কেউ সামাল দিতে পারে, কেউ পারে না।

যারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে না তারা শিশুকাল থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল না। তাদের ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা থাকে। পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মানসিকতা তৈরি হয় না। তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

Pop Ads

এ ছাড়া যারা বেশি আবেগপ্রবণ তারাও বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
দেখা যাচ্ছে অনেক কিশোর-তরুণ মান-অভিমান করে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। এই বয়সে অনেকে প্রেমে পড়ে, এতে পরিবার বাধা দেয়, তাতেও অনেকে আত্মহত্যা করে। এ ক্ষেত্রে পরিবারকে কৌশল অবলম্বন করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রেমে ব্যর্থতা হতে পারে, পরীক্ষায় ভালো ফলে ব্যর্থতা আসতে পারে। বিশেষ করে কেউ হয়তো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারল না। অথচ বন্ধু-বান্ধবরা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ছে। এই অবস্থায় অনেকের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়। এই হতাশা থেকে বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়, আর তার জেরেই হয়তো সংশ্লিষ্ট কিশোর-তরুণটি আত্মহত্যা করে ফেলে।

আবার প্রেম ভেঙে যাওয়ার কষ্টও সামাল দিতে পারে না অনেকে। বিবাহিত জীবনে দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন পরকীয়ার মতো ঘটনা জানাজানি হয়, তখন অন্যপক্ষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। বিষয়টি তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠলে বিষাদ থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যা করে ফেলে। অন্যদিকে আমরা দেখছি অনেক বৃদ্ধ মানুষের কাছে তাদের ছেলেমেয়েরা কাছে থাকে না। বিদেশে থাকে কিংবা যে যার মতো প্রতিষ্ঠিত হতে ব্যস্ত। এ অবস্থায় বৃদ্ধ মা-বাবাও শূন্যতাবোধ করেন। এমন পরিণতিতে তাঁদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করেন। আবার অনেকে বেকারত্ব বা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ার কষ্টও সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।

আত্মহত্যার প্রবণতা আছে—এমন ব্যক্তি অনেক সময় মাদক সেবন করলে ঝোঁকের বশে (ইমপালসিভ) আত্মহত্যা করে বসে। তারা তাৎক্ষণিক তাড়না সামাল দিতে পারে না। এ ছাড়া কারো কারো মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক কিছু রোগ আছে। এগুলোতে আক্রান্ত হলে অনেকের পরিণতি হয় আত্মহত্যা। যে কারণেই মানুষ আত্মহত্যা করুক, মূলত দুই ধরনের আত্মহত্যা আমরা বেশি দেখে থাকি। একটি হলো পরিকল্পিত আত্মহত্যা, আরেকটি ইমপালসিভ আত্মহত্যা। পরিকল্পিত ঘটনার মধ্যে আত্মহত্যাকারী কষ্টের কথা বর্ণনা করে চিরকুট লিখে বা ফেসবুকে পোস্ট দেয়। বেঁচে থেকে কী হবে—এমন মন্তব্য করে। এরা অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে হলে তাদের সচেতনভাবে মোকাবেলা করে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আনতে হবে। প্রেমে ভাঙন, পরীক্ষায় ব্যর্থতা, চাকরি চলে যাওয়া, মামলা-মোকদ্দমাসহ যেকোনো বিপদের ক্ষেত্রে বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

আত্মহত্যার কারণের শেষ নেই। যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছে আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য। এটা মানুষকে বোঝাতে হবে। আত্মহত্যার চিন্তা যার মধ্যে দেখা যায় তার স্বজন, বন্ধুদের এগিয়ে আসতে হবে। মনোচিকিৎসা সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সমস্যায় পড়া ব্যক্তির পাশে বন্ধুর মতো দাঁড়াতে হবে, সহমর্মিতা দেখাতে হবে। একই সঙ্গে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে তাকে আত্মহত্যার পথ থেকে সরিয়ে আনা যাবে।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পারিবারিক মূল্যবোধগুলো শাণিত করতে হবে। শিশুকাল থেকে সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে, যাতে সে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে। যে পরাজয়কে মেনে নিতে পারে সেই হলো মনের দিক দিয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েরা জয়ের ও পাওয়ার নেশায় মশগুল। এ কারণে চাহিদা পূরণ না হলেই তারা বিষণ্নতায় ভুগে একসময় আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটায়।

কেউ বিষণ্নতায় ভুগলে সময়মতো চিকিৎসা করলে তা ভালো হয়ে যায়। এ জন্য চিকিৎসক-মনোবিজ্ঞানীর কাছে যেতে হবে। কাউন্সেলিং করাতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধ খেতে হবে। কারণ দেহের যেমন অসুখ হয়, তেমনি মনেরও অসুখ হয়। পরিবারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।