বাংলাদেশের ভাগ্যেই মারণবাঁশি ?

10
বাংলাদেশের ভাগ্যেই মারণবাঁশি ?

এএফসি কাপে বাংলাদেশের কোনো ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব জাতীয় দলের চেয়ে কোনো অংশে কম আমেজ তৈরি করে না। আর বসুন্ধরা কিংসের মতো ক্লাব, যারা মোহনবাগানের মতো ক্লাবকে পেরিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হতে চায়, তাদের ওপর তো চোখ থাকে সবার। আর তাই পরশু ওড়িশা এএফসির বিপক্ষে আসরর গফুরভকে রেফারির লাল কার্ড দেখানোর ঘটনা ঝড় তুলেছে। এই ঘটনায় বাংলাদেশের বারবার বঞ্চনার বিষয়টিই থাকে উচ্চকিত।

সাধারণ ফুটবল সমর্থকদের সঙ্গে সোচ্চার সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়রাও। সুশান্ত ত্রিপুরার ফেসবুক পোস্টের কথা উল্লেখ করতেই হয়, ‘তারা বদলাবে না, কারণ এটা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায়ও নেই।’

Pop Ads

সুশান্ত এই মৌসুমে রহমতগঞ্জে খেলছেন, তার আগে ছিলেন আবাহনীতে। বসুন্ধরা কিংস থেকেই তিনি কিংসের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীতে যান।

২০২১ সালে কিংসের হয়েই এই এএফসি কাপে গফুরভের মতো তিক্ততার স্বাদ হজম করতে হয়েছিল তাঁকে। সেটিও ছিল গ্রুপসেরা নির্ধারণী ম্যাচ। প্রতিপক্ষ মোহানবাগান। কিংস তখন ১-০ গোলে এগিয়ে।

কিন্তু এমনই বিতর্কিত এক লাল কার্ডে সুশান্তকে মাঠ ছাড়তে হয়। সেই ম্যাচ পরে ড্র করে মোহনবাগান উঠে যায় পরের পর্বে। এবার প্রতিপক্ষ বদলালেও কিংসের ভাগ্য অপরিবর্তিত, আবারও বঞ্চনার শিকার হতে দেখে ক্ষুব্ধ সুশান্ত।জাতীয় দলে খেলা আরেক ফুটবলার তকলিছ আহমেদ লিখেছেন, ‘ভারতে জাতীয় দল খেলতে যাওয়া মানে ১৪ জনের বিপক্ষে খেলা। এটা মনে রাখতে হবে বাংলাদেশিদের।

আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে সনি নর্দেকে লাল কার্ড দিয়ে আমাদের দল শেখ জামালকে ঠিক একইভাবে হারানো হয়েছিল।’
২০১৪ সালে আইএফএ শিল্ডের সেবারের আসরে সেরা খেলোয়াড় ছিলেন নর্দে। কিন্তু ফাইনালেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। কলকাতা মোহামেডানের বিপক্ষে সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যায় শেখ জামাল। তকলিছ চাইলে আরো একটা ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিতে পারতেন, যা মনে করিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম, ‘গোয়ায় ভারতের বিপক্ষে (জাতীয় দলের) প্রীতি ম্যাচ ছিল সেটি। আমাদের ৩-২ গোলে জেতার কথা। কিন্তু তকলিছের গোলটা বাতিল করে দেন রেফারি। উনি বাজান ফাউলের সিদ্ধান্ত। অথচ সেটা আমাদের অ্যাডভান্টেজ দেওয়ার কথা ছিল। তিনি তা না করে তকলিছের গোল বাতিল করে ফাউলের সিদ্ধান্তটাই ধরে রাখেন।’

যদিও রেফারিংয়ে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশি ক্লাবের বিরুদ্ধে ঢালাও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মানতে রাজি নন মামুনুল, ‘বাংলাদেশে রেফারিরা অনেক ট্যাকল হয়তো এড়িয়ে যান, যেটা আন্তর্জাতিক ম্যাচে হলে সরাসরি হলুদ কার্ড দেখতে হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশের রেফারিংয়ের অনেক নিয়ম আমরা জানি না। আমাদের রেফারিরা আমাদের হয়তো বলেন এক রকম, কিন্তু মাঠে গিয়ে সিদ্ধান্ত দেন আরেকটা। তো, এই ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য আমাদের রেফারিংয়ের মানও বাড়াতে হবে।’

মামুনুলের মতো প্রায় একই মত আরেক সাবেক ফুটবলার আলফাজ আহমেদের, ‘ভারতে বা আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে আমরা সব সময় বঞ্চিত হই, বিষয়টা এমন না। আসলে আমরা আমাদের ঘরোয়া ফুটবল এবং আন্তর্জাতিক ফুটবলের পার্থক্যটা বুঝি না। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হলে আমাদের আরো সতর্ক ও পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলতে হবে। অনেক ফাউল আছে, রেফারি চাইলে (লাল কার্ড) দিতে পারেন, আবার না-ও দিতে পারেন, দিলে বলার কিছু নেই। ঘরোয়া ফুটবলে যদি এতে অভ্যস্ত হওয়া যেত, তাহলে এই সমস্যাটা হতো না।’

যত ঘটনা

■ পরশু এএফসি কাপে ওড়িশা এফসির বিপক্ষে গ্রুপসেরা নির্ধারণী ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের আসরর গফুরভের সরাসরি লাল কার্ড।

■ ২০২১ সালের এএফসি কাপে মোহনবাগানের বিপক্ষে কিংসের সুশান্ত ত্রিপুরার ‘বিতর্কিত’ লাল কার্ড। পিছিয়ে থাকা সেই ম্যাচ পরে ড্র করে পরের রাউন্ডে যায় মোহনবাগান।

■ ২০১৪ সালে আইএফএ শিল্ড ফাইনালে শেখ জামালের সনি নর্দের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ লাল কার্ড। সেই ম্যাচটি টাইব্রেকারে হেরে যায় বাংলাদেশের ক্লাবটি।

■ ২০১৪ সালেই গোয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রীতি ম্যাচে তকলিছ আহমেদের জয়সূচক গোল বাতিল করেন রেফারি ‘অ্যাডভান্টেজ’ না দিয়ে। ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ২-২ ড্র হয়।