বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতে “নৈস্বর্গিক স্বর্গ উদ্যান” এর সন্ধান মিলেছে

বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতে “নৈস্বর্গিক স্বর্গ উদ্যান” এর সন্ধান মিলেছে। ছবি-সংগৃহীত

দেশীয় পর্যটন খাতে আশার আলো :

সুপ্রভাত বগুড়া (প্রচ্ছদ): মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের গভীর জঙ্গলের দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় সদ্য নামকরণকৃত শ্রীমঙ্গলের নৈস্বর্গিক স্বর্গ উদ্যানে পাওয়া গেছে হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি হওয়া প্রাচীন কয়েকটি গিরিখাত। যার একটিকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছেন নিস্বর্গ গিরিখাত, একটি উল্কা গিরিখাত ও আরেকটি ব্যাকুল গিরিখাত। একই সাথে খুজে পাওয়া গেছে কয়েকটি ছোট ছোট জলপ্রপাত ও ঝর্না। সম্প্রতি পাহাড়ী এলাকায় পর্যটনের রিপোর্ট করতে গিয়ে এ প্রতিবেদকের ক্যামেরায় উঠে আসে পৃথক স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্যে এ গিরিখাত গুলোর চিত্র।

যা বিশ্বের অনান্য গিরিখাতের চেয়ে আকর্ষনীয়, অনেক সুন্দর ও রোমাঞ্চকর বলে জানান প্রকৃতিপ্রেমীরা। আর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, এটি অবিকল গিরিখাতের মতো। এ গুলোকে নেনো স্লট গিরিখাত বলা যেতে পারে। তবে দূর্গমতা ও এর প্রকৃতি রক্ষার স্বার্থে এই মুহুর্তে পর্যটকদের এখানে আসা ঠিক হবে না বলে জানান তিনি।

Pop Ads

যেভাবে এটি পাওয়া যায় মাসাধিকাল আগে শ্রীমঙ্গলে ক্ষুদ্র নৃ-ত্বাত্তিক জনগোষ্টির শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমন্বয়কারী তাজুল ইসলাম জাবেদ জানান, শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ের গভীর অরণ্যে খুব সুন্দর কিছু জায়গা রয়েছে। তিনি ক্ষুদ্র জাতি গোষ্টিকে নিয়ে কাজ করার সময় একবার গভীর জঙ্গলে গিয়ে তা দেখে তার কাছে খুব ভালো লাগে। বিষয়টি এ প্রতিবেদককে জানালে এবং সে স্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি সম্মত হন। দিন ঠিক করে প্রথম দিন মোটর সাইকেল নিয়ে পাহাড়ী এলাকা অতিক্রম করে সিন্দুরখান সীমান্তবর্তী ওই এলাকার সবচেয়ে কাছের জনপদে যাই।

সেখান থেকে দুইজন আদিবাসী সন্তান আমাদের সঙ্গী হন। আমাদের টিমে আরো দুইজনসহ মোট ৬ জন মিলে সেখানে রওয়ানা হই। প্রথমে উচু টিলা পরে পাহাড়ী নদী। স্থানীয়ভাবে পাহাড়ী ছড়া বলে। ছড়া দিয়ে হাটতে হাটতে যখন গভীর বনে প্রবেশ করি তখন বনের নিস্তব্ধতা অনুভুত হয়। দু পাশে ঘন জঙ্গল। পথ পদর্শক দুই আদীবাসী সন্তান বারবার বলছিলো সাবধান। এখানে সাপের ভয় রয়েছে। বিভিন্ন পোকাসহ অন্যান্য জীবযন্তুও মাঝেমধ্যে দেখা যায়।

আমরা যত ভিতরের দিকে যাচ্ছিলাম ততই ঝির ঝির শব্দ বাড়ছিলো। আর ছড়ার তলদেশে পায়ের নিচে এক সময় বালির পরিবর্তে পাওয়া যায় পাথর। ডানে বায়ে বিভিন্ন স্থানে অনান্য জলপ্রাপাতের ন্যায় পাহাড়ের গা পাথরে পরিনত হয়েছে একটু একটু করে পানিও নিচে নেমে আসছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়ায় গাছও মরে পড়ে আছে। কোথাও কোথাও গাছের অংশ পানিতে থাকতে থাকতে ফসিল হয়েগেছে। মাঝে মধ্যে পাখিরও ডাক শোনা যায়। চলার রাস্তাটা এতো রোমাঞ্চকর এর চার পাশ দেখতে দেখতে এবং ছবি উঠাতে উঠাতে অনেক সময় চলে যায় পথেই।

হাটতে হাটতে এক সময় চোখে পড়ে গিরিখাত স্বদৃশ্য দু দিকে পাথরের দেয়াল এবং এর তল দেশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সরু পথের দিকে যেতে চাইলে গাইড বাঁধা দেয়। তারা বলে এদিকে যাওয়া ঠিক হবেনা। সামনে মুল জায়গা যে জায়গা আমাদের দেখাতে নিয়ে এসেছেন। আমি বললাম এর শেষ কোথায় কোন দিক থেকে এসেছে আর এটা এটাতো দেখতে হুবুহু গিরিখাতের মতো। তাজুল ইসলাম জানান, আমি যেটা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি সেটা এরকমই আরো সুন্দর। এ সময় ধারণা হলো এটা গিরিখাতের শেষ অংশ। ছড়া থেকে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। এক সময় এই গিরিখাতের উপরে চলে যাই। সেখানে গাছ দিয়ে পাহাড়ীরা গিরিখাত পাড় হওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছেন।

গিরিখাত পাড় হয়ে একটি জঙ্গলাকৃত পাহাড় অতিক্রম করতে হবে জানান তাজুল ইসলাম। বৃষ্টিতে ভেজা মাটি। তার উপর পাতা লতা পড়ে সার হয়ে আছে ওই পাহাড়ের পদস্পর্শের অংশ। এটি অতিক্রম করতে অনেকটা ভয় করছিলো। তাজুল ইসলাম জানান, মুল জায়গা দেখতে হলে এটা অতিক্রম করতে হবে। এতো কষ্ট করে এসে সেটা দেখবো না তা মেনে নিতেও পারছিলামনা। শেষমেশ মনকে স্থির করলাম উপরওয়ালা ইচ্ছা জঙ্গলাকৃত এই পাহাড় অতিক্রম করে আমরা সেখানে যাবই।

আদিবাসী সন্তান দুজন গেলেন না আমরা চারজন পাহাড় অতিক্রম করলাম। পাহাড়ের শেষ প্রান্থে যাওয়ার পর আমাদের চক্ষুতো ছানাবড়া! খাড়া পাথরে আবৃত নিচের অংশ। নিচের দিকে তাকালে অজানা ভয়ের সঞ্চার হয় মনে। তাজুল ইসলাম জানান, নিচে না নামলে ভালোভাবে দেখা যাবেনা। ক্যামেরায় ছবি তুলতে গেলে আলোর সংকট দেখাদেয়। নিচে যাওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ে। একসময় খাড়া পাহারের পাথরের দেয়ালে ধরে ধরে আস্তে আস্তে আমরা নিচে নামি। আমরা যেখানে নামি এই স্থানটি একটু চওড়া। এর ডানে বায়ে দুই পাশই সরু গিরিখাত।

ঢালের দিকে প্রবাহমান পানি। আমরা যেখানে নামি এর বা দিকে ঢাল। উপরের দিকে গিরিখাতে গাছ ও ডাল পালা পড়ে তা কিছুটা ভরে গছে। পানি প্রবাহে পাহাড়ের গায়ে পাথরের কারুকাজের সৃষ্টি হয়েছে। দিনের বেলা হলেও ওই জায়গাটি বেশ অন্ধকার। আলো খুব কম পৌছায় সেখানে। সেখানে জীব জন্তু ও সাপের ভয়ের চেয়ে বড় ভয় হলো যে কোন সময় পানি প্রবাহ নেমে আসতে পারে।

আর তখন দ্রুত উপরে না উঠতে পারলে নিশ্চিত বিপদ। আসার পথে আদিবাসী সন্তান বাবু সুরং জানায়, পানির স্রোতে সে নিজেও একবার মরতে মরতে বেঁচে গেছে। আমাদের সংগীয় অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী জানান, প্রকৃতির সবটুকু সৌন্দর্যই যেন এখানে আড়াআড়ি ভাবে দাড়িয়ে আছে।

জায়গাটির অবস্থান
জায়গাটির অবস্থান ঢাকা থেকে প্রায় ২১৫ কিলোমিটার, মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুুরে। যার অবস্থান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী সিন্দুরখান ইউনিয়নের ঘন জঙ্গলাকৃত পাহাড়ী এলাকায়। প্রথমে জীপ বা মটর সাইকেল নিয়ে তার পর পায়ে হেঁটে কয়েক কিলোমিটার। হাটার পথ পাহাড়ী ছড়া ও জঙ্গলাকৃত খাড়া পাহাড়।

গিরিখাতের সৃষ্টি
প্রাকৃতিকভাবে দুটি পাহাড়ের ঢালে জলধারা প্রবাহে মাটি ক্ষয় হয়ে গিরিখাতের সৃষ্টি হয়। আর হাজার হাজার বছর জলধারা প্রবাহিত হয়ে এর দু পাশ খাড়া পাথরে পরিনত হয়। এই পানির ক্রমাগত ধারায় পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয় মনমাতানো কারোকাজ। যা দেখতে হুবুহু বিশ্বে আবিস্কৃত অনান্য গিরিখাতের মতো। গিরিখাত হিসেবে এটি আবিস্কারের পর গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য একটি নামের প্রয়োজন হয়।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিণ ও স্থানীয় বনবাসীদের সাথে আলাপ করে নামকরণ করি নিস্বর্গ গিরিধারা। গিরি শব্দের অর্থ পাহার বা পর্বত। আর ধারা হচ্ছে পর্বতের দেহ ক্ষত করে বয়ে চলা জলধারা বা পানি প্রবাহ। যা সৃষ্টি হয় পানি প্রবাহের ক্ষয়ষ্ণু প্রকৃয়ায়। এই জলধারা কোথাও কোথাও সৃষ্টি করে জলপ্রপাত কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয় ঝর্ণা।

এই পানি প্রবাহের নিচের অংশকে পাহাড়ী ছড়া বলে আর ক্রমাগত নিচের অংশ পরিনত হয় নদীতে। আবার কখনও কখনও অধিকরত বড় ও ¯্রােতম্বী নদীতে গিয়ে পতিত হয়। তাই বলা যেতে পারে গিরিখাত নদীর ক্ষয় প্রকৃয়ায়ও সৃষ্ট হয়।

নিস্বর্গ গিরিধারার অনুভুতি
নিস্বর্গ গিরিধারায় যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য সেখানে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। সেখানে যেতে হবে পাহাড়ী ছড়ায় ছড়ায় ও খাড়া পাহাড় বেয়ে। আর এর নিকটতম পাহাড়ী বাসিন্দা বিপ্লব পট নায়েক ও অতুল রাজভল্লব জানান, সেখানে যাওয়ার পথে রয়েছে সাপ ও জীবযন্তুর ভয়ও। মাঝেমধ্যে তারা মাছ ধরতে গেলে এক সাথে কয়েকজন যান। দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে যাওয়ার পর মনে হবে যেন অন্য কোন জগতে পৌছেছেন।

দুপাশে প্রায় শত ফুট উচ্চতার পাথরের দেয়াল, পানির ছলছল শব্দ এবং প্রকৃতির ঝির ঝির ডাক নিমিশেই ভুলিয়ে দেয় আপনার নিজের জগতের কথা। আর শুধু মুল জায়গা নয় এর যাওয়া পথটাও রোমাঞ্চকর। উপরে পাহাড়ের চূড়ায় ঘন জঙ্গল থাকায় সেখানে আলো পৌছায় খুবই কম। দিনের বেলায় থাকে সন্ধ্যার রুপ। সেখানে কিছুক্ষন অবস্থান করলে আপনাআপনি গাঁয়ে ঝিম ঝিম ভাব চলে আসে।

উল্কা গিরিখাত
এক দিন করে অবসর নিয়ে টানা ১৫ দিন ভ্রমনে এই এলাকায় আবিস্কার হয় একাধিক গিরিখাত, ঝর্না ও ঝর্না সদৃশ্য জলপ্রপাত। পাহাড়ীদের কাছ থেকে আমরা সন্ধান পাই, এই অরণ্যে, এ রকম আরো জায়গা রয়েছে। ২য় দিন আমরা যাই আরেকটি গিরিখাতের সন্ধানে। প্রথম দিন পাহাড়ী ছড়ার পানি পথে হাটতে হাটতে পা সাদা হয়ে গিয়েছিলো। আমরা জুতা রেখে গিয়েছিলাম। আর পাহাড় অতিক্রম করায় ওই দিন রাতে শরীরে বেশ ব্যাথা অনুভব হয়।

তাই দ্বিতীয় দিন মোটর সাইকেল রেখে একটি জীপ গাড়ি নেই। জীপ গাড়িতে প্রথম দিন যে পাশে গিয়েছিলাম তার বিপরীত পাশের আরেকটি পাহাড়ী জনবসতিতে গিয়ে সেখানে গাড়ি রেখে হাটতে শুরু করি। তবে ওই দিন পায়ে জুতা পড়ে যাই। আবারও শুরু হলো হাঁটা, শেষ মাথায় গিয়ে প্রায় ৬শত ফুট উচু পাহার থেকে ক্রমশ নিচে নামি। প্রথমে স্বাভাবিক ঢাল ছিলো পরে খাড়া ঢাল। খাড়া ঢালে পাহাড়ীরা পা রাখার মতো ছোট ছোট কুপ করে রেখেছেন এই কুপ গুলো পাথরে পরিনত হয়েছে। নিচের দিকে তাকালে ভয়ের সঞ্চার হলেও শেষমেশ নিরাপদে নামতে পারায় মনে আসে যেন বিজয়ের তৃপ্তি।

আমাদের ওই দিনের টিমেও ছিলো দুজন পাহাড়ী জনগোষ্টীর সন্তান এবং আমরা ৪ জন। বা দিকে একটু সামনে এগুতেই আমরা প্রবেশ করি যেন সেই পস্তরযুগে। দু পাশে খাড়া পাহাড় পাথরে পরিনত হয়েছে। বৃষ্টি নেই তবুও অনবরত টোপ টোপ করে পানির বড় বড় ফোঠা পাথরের গা থেকে নিচে পড়ছে। এটি নিস্বর্গ গিরি ধারার চেয়ে অনেকটা প্রসস্ত ও এর দু পাশের পাহাড়ের উচ্চতাও অনেক।

সূর্যের আলো এখানে লোকচুরি খেলে। একবারে নিচের বা ভিতরের অংশে সূর্যের আলো পৌছার সুযোগ নেই। যার সুন্দর্য প্রাণকে আচমকাই ব্যাকুল করে তুলে। স্থানীয়রা এটিকে উল্কা বলে ডাকেন। তাই আমরাও এটিকে উল্কাগিরি খাত বলে অভিহিত করি।

ব্যাকুল গিরি ও ঝর্না সদৃশ্য জলপ্রপাত
পরবর্তী আরো ১২ দিনে তাজুল ইসলাম জাবেদকে সাথে নিয়ে এ অরণ্যের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়াই। আর ওই সময়ে এর ভিতরে খুজে পাই আরো বেশ কয়েকটি ঝর্না, ছোট ছোট জলপ্রাত ও মনকে ব্যাকুল করা আরো একটি গিরিখাত। যে গিরিখাতটির পাথরের গায়ে রয়েছে ছোট ছোট গর্ত। এর ভিতরেই সৃষ্টি হয়েছে একটি ছোট ঝর্না। যা দেখা মাত্র প্রকৃতির প্রতি মনটাকে ব্যকুল করে তুলে। আমরা এই গিরিখাতটির নাম দেই ব্যাকুল প্রাণ গিরিখাত।

এই গিরিখাত অতিক্রম করে আমরা আমরা বেশ কয়েকটি ছোট ছোট জলপ্রপাত দেখতে পাই। বড় একটি জলপ্রপাত এর পাশে তাজুল ইসলাম জাবেদ আবিস্কার করেন ছোট অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত আরো একটি ঝর্না সদৃশ্য ছোট জলপ্রপাত। প্রায় একঘন্টা মড়া ডাল পালা সরিয়ে এর পানি প্রবাহের সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করার পর এ থেকে প্রচুর বেগে পানি আসতে শুরু করে। সংগীয় একজন পাহাড়ী বলেন এটি জাবেদ ঝর্না হয়ে গয়েছে আজ থেকে।

গিরিখাত নিয়ে পাহাড়বাসীর কথা
গিরিখাত গুলোর কোনটা এক কিলোমিটার কোনটা এর চেয়ে কম বলে জানান, স্থানীয় পাহাড়বাসী এডিসন তারিয়াং ও ফেরলি সুরং। এ সময় তারা বলেন, বহুবছর ধরে বংশানুক্রমিকভাবে তারা ওই এলাকায় বসবাস করছেন। এই গিরিগুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন স্থানে পড়েছে।

সেখানে তাদেরও খুব একটা যাওয়া হয়না। আর সেখানে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। নিচে নামলে হঠাৎ যদি উপর থেকে পানি নামে তাহলে কিছু কিছু জায়গা আছে খাড়া পাথরের পাহাড়। উপড়ে উঠার কোন পথ থাকেনা। এতে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে তারা বলেন গিরিখাত শব্দের সাথে তারা পরিচিত ছিলেন না। এটিযে গিরিখাতের সদৃশ্য তা তারা প্রথম জানলেন।

গিরিখাত নিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ভাবনা
শ্রীমঙ্গলে গিরিখাতের অবস্থান সর্ম্পকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি জানান, বিষয়টি তার জানা নেই তবে তিনি তা দেখতে চান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে অবগত করার দুইদিনপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নজরুল ইসলামকে স্বস্ত্রীক গিরিখাতদ্বয়ের একটিতে নিয়ে যাই। তিনি অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত এ জায়গাটি দেখে অভিভুত হন।

এটি পরিদর্শন করে তিনি জানান, এটি বিশ্বের অনান্য গিরিখাতের মতোই। এটিকে নেনো স্লট গিরিখাত বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, আজ (ভ্রমনের দিন) থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পর্যটনের নতুন একটি দ্বার উন্মোচিত হলো। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এরকম গিরিখাতের সন্ধান এখন পর্যন্ত নেই সে ক্ষেত্রে এটাই প্রথম।

বিষয়টি তিনি সরকারের উর্ধতন পর্যায়ে এবং পর্যটন কর্পোরেশনকে জানাবেন। যেহেতু এটি দুর্গম এলাকা রাস্তাঘাটও নেই সে ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি ব্যাতিরেখে এখানে পর্যটকদের আসা উচিৎ হবে না বলে তিনি জানান।

জেলা প্রশাসকের কথা
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিনের সাথে যোগাযোগ করলে এবং উনাকে গিরিখাতের ছবি পাঠালে তিনি এটি দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং খুব শ্রীঘ্রই এটি দেখতে যাবেন বলে জানান। এ সময় তিনি এর সুন্দর একটি নামকরণের ইচ্ছা পোষন করেন। তিনি বলেন, প্রকৃতি নিয়ে কবি গুরু রবিন্দ্র নাথ ঠাকুরের দেয়া সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে।

সেটা দেখে একটি নামকরণ করতে এবং নিস্বর্গ শব্দটি সংযুক্ত করতে। আমরা প্রথম আবিস্কৃত গিরিখাতের নামকরণ করি নিস্বর্গ গিরিখাত। কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর প্রকৃতিকে স্বর্গ উদ্যান বলে অভিহিত করেন। আর যেহেতু সবগুলো গিরিখাত ও ঝর্না এবং ঝর্না সদৃশ্য জলপ্রপাত প্রায় একই বনে পড়েছে তাই এই বনাঞ্চলকে আমরা নামকরণ করি শ্রীমঙ্গলের “নৈস্বগিক স্বর্গ উদ্যান” বলে।

পৃথিবীর অনান্য গিরিখাতের মতো সরকারের বা সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে এক সাথে সর্বোচ্চ ৪/৫জন করে দিনে নির্দিষ্ট পরিমানে পর্যটককে সরকারের নিয়ন্ত্রনে তা দেখার সুযোগ করা যেতে পারে বলে অভিমত প্রকৃতি প্রেমীদের। তবে বনের বাহিরে যাতায়াতের রাস্তারও বেহাল দশা। বনের বাহিরের অংশ পর্যন্ত ৩টি কাঁচা রাস্তায় প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার অন্তত পাকাকরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রকৃতি প্রেমীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here