আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক
সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): ইসলাম মানুষের যৌনচাহিদাকে উত্তম পন্থায় চরিতার্থ করার জন্য বিবাহের মত এক সুশৃঙ্খল সুন্দর বিধান দিয়েছে । ইসলামে কোন বৈরাগ্যতা নেই । উসমান ইবনে মাযউন (রা) বিবাহ না করা এবং নারীসঙ্গ ত্যাগ করার অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার এই প্রস্তাবকে নাকচ করে দেন । কেননা এর ফলে মানবপ্রজন্মের ধারা নষ্ট হয়ে যাবে ।
সাহাবী (রা) বলেন, রাসূল (সাঃ) যদি এর অনুমতি দিতেন, তাহলে অবশ্যই আমরা নপুংসক হয়ে যেতাম । (মিশকাত ) নারী পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর (আল্লাহর) একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে পরম শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারো । (সূরাঃ রুম , আয়াত ঃ ২১)
পুরুষের যত প্রয়োজন নারীর সাথে সম্পৃক্ত সবগুলোর সারমর্ম হচ্ছে মানসিক শান্তি ও সুখ । বৈবাহিক জীবনের এই উদ্দেশ্য যে পরিবারে বর্তমান আছে , সেই পরিবারে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সফল । যেখানে মানসিক শান্তি অনুপস্থিত, সেখানে আর যাই থাকুক বৈবাহিক জীবনের সাফল্য নেই ।
একথাও বলাবাহুল্য যে ,পারস্পারিক শান্তি তখনই সম্ভবপর যখন নারী ও পুরুষের সম্পর্কের ভিত্তি শরীয়তসম্মত বিবাহের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে । যেসব দেশ ও জাতি এর বিপরীত হারাম রীতি-নীতি প্রচলিত করেছে, জন্তু-জানোয়ারের ন্যায় যৌনচাহিদা চরিতার্থ করে তাদের জীবনে কোথাও শান্তি নেই। আর দাম্পত্য জীবনের লক্ষ্য তথা মনের সুখ-শান্তি তখনই সম্ভবপর, যখন উভয়পক্ষ একে অপরের অধিকার সম্পর্কে সজাগ হবে এবং তা আদায় করে নিবে।
নবী করীম (সাঃ) বিবাহের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, বিবাহ করা আমার সুন্নাত ও আদর্শ। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত ও আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। (বেহেস্তী জেওর) বুখারী শরীফে আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, নবীজি (সাঃ) বলেছেন, মেয়েদের বিবাহে সাধারণত চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করা হয়। যথাঃ মেয়ের সহায়-সম্পদ, তার বংশ ঐতিহ্য, তার রুপ-লাবণ্য এবং তার ধর্মপরায়ণতা। তবে তুমি ধর্মপরায়ণা স্ত্রী পেয়ে ধন্য হও।
বিবাহের ক্ষেত্রে নারীর ধর্মপরায়ণতার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত এবং দ্বীনদার নারীকে বিবাহ করা উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো মহিলাকে তার ইজ্জত-সম্মানের কারণে বিবাহ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার যিল্লাতি ও অপদস্থতা বাড়িয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করবে তার ধন-সম্পদের কারণে, আল্লাহ তায়ালা তার দারিদ্রতাই কেবল দিনে দিনে বাড়িয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করবে বংশ মর্যাদা দেখে, আল্লাহ তায়ালা তার তুচ্ছতা আরো বাড়িয়ে দিবেন।
আর যে ব্যক্তি কোনো মহিলাকে শুধু এ উদ্দেশ্যে বিবাহ করবে যে, সে তার চক্ষুকে অবনত রাখবে এবং লজ্জাস্থনকে হেফাজতে রাখবে অথবা (আত্মীয়তার মধ্যে হলে) আত্মীয়তা রক্ষা করবে, তাহলে আল্লাহপাক সে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জীবনেই বরকত দান করবেন। (ফাতহুল কাদীর) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, হে যুবক সম্প্রদায়!
তোমাদের মধ্যে যে (শারীরিকভাবে সক্ষমও) সামর্থ্যবান সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে অবনমিত করে দেয় এবং লজ্জাস্থানকে (অপকর্ম থেকে) সংরক্ষণ করে। আর যে সামর্থ্যবান নয়, (অথচ শারীরিকভাবে সক্ষম) তার উচিত রোজা রাখা । কেননা, রোজা কামস্পৃহাকে দূর্বল করে। (বুখারী,মসুলিম) অর্থাৎ পুরুষের কামস্পৃহা যদি পরিমিত ও স্বাভাবিক থাকে এবং স্ত্রীর ব্যয়ভার বহন করতে সমর্থ হয় তবে তার জন্য বিবাহ করা সুন্নাত।
আর যার কামস্পৃহা অত্যাধিক প্রবল হয় তবে তার জন্য বিবাহ করা ওয়াজিব। কিন্তু কামস্পৃহা প্রবল হওয়া সত্বেও স্ত্রীর ব্যয়ভার বহন করতে অক্ষম হয় তবে সে বেশি বেশি রোজা রাখবে। তারপর যখন স্ত্রীর ভরণ-পোষণে সমর্থ হবে তখন বিবাহ করবে। এক হাদিসে আছে, স্বামী যখন স্ত্রীর দিকে এবং স্ত্রী স্বামীর দিকে ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকায় তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের উভয়ের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। (বেঃ জেওর) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, দুনিয়ার সবকিছুই ভোগের সামগ্রী ।
আর দুনিয়ার সর্বোৎকৃষ্ট ভোগের সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যবতী নারী। (মুসলিম) অন্যত্র বলেন, যে বিবাহে মোহর সহজ ও খরচ কম হয় সেই বিবাহে অধিক বরকত নাযিল হয়। (তাবারানী) বিবাহ কঠিন হলে যেনা ব্যভিচার সহজ হবে তখন দুনিয়াতে মহা ফেতনা ও মহা বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। বিবাহ শাওয়াল মাসে, জুমুআর দিনে এবং মসজিদে সম্পন্ন করা উত্তম।