হজ্ব পালনকারী রহমানের খাছ মেহমান

হজ্ব পালনকারী রহমানের খাছ মেহমান। - আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): ইসলামী শরীয়তের আরকানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি রোকন হলো হজ¦। হজ¦ হলো শারীরিক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত ইবাদত। এজন্য হজে¦র গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অনেক বেশি। হজে¦র মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ ও সুস্বাস্থের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। তাই হজ¦ ফরজ হওয়া সত্তে¡ও হজ¦ আদায় না করা আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতার নামান্তর।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, হজ¦ তাড়াতাড়ি আদায় কর। কেননা, তোমাদের কারও জানা নেই যে, পরবর্তীতে সে কোন পরিস্থিতির সুম্মখীন হবে। (মুসনাদে আহমদ) তাই যাদের উপর হজ¦ ফরজ হয়েছে, সব রকম দিধা-দ›দ্ব ছেড়ে দিয়ে, সব রকম ভ্রান্ত ধারণা ছেড়ে দিয়ে, তাদেরকে হজে¦র পাকা- পোক্ত নিয়ত করতে হবে। হজ¦ ফরজ হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে সেই বৎসরই হজ¦ করা ওয়াজিব-বিনা ওজরে বিলম্ব করা গোনাহ।

Pop Ads

ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়ে বা বাড়ি তৈরি করে অথবা শেষ বয়সে হজে¦ যাব এরূপ ধারণা করা মহাভুল। বরং বয়স থাকতে হজে¦ গেলে হজে¦র কাজ কর্ম ভালোভাবে আদায় করা সহজ হয়। আর সেই হজে¦র স্বাদ, মজা ও অনুভূতিই আলাদা। যা শুধু হজ¦পালনকারীই অনুভব করতে পারে কিন্তু বর্ণনা দিতে অক্ষম।

হজ¦ ফরজ হওয়া সত্তে¡ও যে হজ¦ না করে মৃত্যুবরণ করে, তার জন্য হাদিসে ভীষণ আযাবের সংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, হজ¦ ফরজ হওয়ার পরেও বিনা ওজরে হজ¦ না করে যে মারা যায়, সে ইয়াহুদী হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক তাতে আমার কোন পরওয়া নেই। (মিশকাত) হজে¦র অসংখ্য ফযীলত রয়েছে।

মহানবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য এমনভাবে হজ¦ করে যে, সেই হজে¦ না কোন অশ্লীল কথা বলে, না শরীয়ত বিরোধী কাজ করে, তবে সে হজ¦ হতে মায়ের পেট থেকে সদ্য ভুমিষ্ট সন্তানের মত নিষ্পাপ ও নিঃকলুষ হয়ে ফিরে আসে। (বুখারী) তিরমিজি শরীফের বর্ণনায় নবীজি (সাঃ) বলেন, তোমরা লাগাতার হজ¦ ওমরাহ করতে থাক-একের পর এক হজ¦ ওমরাহ করতে থাক।

কেননা, এটা গোনাহ ও দরিদ্রতাকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয় যেমন আগুন লোহার
ময়লা দূর করে দেয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, আমি মীনার মসজিদে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন আনসারী ও একজন সাকাফী ব্যক্তি নবীজির খেদমতে সালাম করে হজ¦ সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন করিল।

রাসূল (সাঃ) বললেন, হজে¦র উদ্দেশ্যে ঘর হতে বের হওয়ার পর তোমাদের (বাহন) উটনী যে কদম রাখে বা উঠায় এতে তোমাদের আমলনামায় একটি করে নেকী লেখা হয়। এবং একটি করে গোনাহ ক্ষমা করা হয়। আর তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজের সওয়াব একটি আরবী গোলাম আযাদ করার সমান। আর সাফা মারওয়ার মধ্যে সায়ী করার সওয়াব সত্তরটি গোলাম আযাদ করার সমতুল্য।

আরফার ময়দানে যখন লোকজন সমবেত হয় তখন আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করে ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, আমার বান্দাগণ আমার রহমতের আশা করে দূর-দূরান্ত হতে এলোমেলো চুল নিয়ে এসেছে। যদি তাদের গোনাহ ধূলিকণার সমান হয় বা বৃষ্টির ফোটা পরিমাণ বা সমুদ্রের ফেনা পরিমানও হয় তথাপি আমি মাফ করে দিলাম।

হে আমার বান্দাগণ! যাও ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাও, তোমাদের গোনাহও মাফ হরে দিলাম আর তোমরা যাদের জন্য সুপারিশ করবে তাদেরকেও মাফ করে দিলাম। অতঃপর রাসূল (সাঃ) বললেন, শয়তানকে কংকর মারিলে, প্রতি কংকরে এমন একটি বড় গোনাহ মাফ হয়ে যায় যা তোমাকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট ছিল। আর কুরবানীর নেকী আল্লাহর নিকট রক্ষিত সম্পদ হিসাবে থাকে।

ইহরাম খোলার জন্য মাথা মুন্ডনের সময় প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি নেকী দেওয়া হয় এবং একটি পাপ মোচন করা হয়। অতপর এমন অবস্থায় তওয়াফে যিয়ারত করে যে, একজন ফিরিশতা তার উভয় কাঁধের মাঝে হাত রেখে বলে, আগামীতে নতুন করে আমল কর, তোমার পিছনের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে গেছে (তারগীব) সুবহানাল্লাহ। বিভিন্ন হাদিসের আলোকে জানা যায়, আল্লাহ তায়ালা হজে¦ মাবরুর আদায়কারীকে চারটি বিশেষ পুরস্কার দান করবেন।

তা হলো : (১) সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করবেন। (২) হাজী কখনো ফকীর হবে না। ৩) বিনা হিসাবে জান্নাত দিবেন। (৪) হাজীর সুপারিশ চারশত লোকের জন্য কবুল করিবেন। (তারগীব)

তাছাড়া হাদিসের ভাষায় হজ¦ পালনকারীকে আল্লাহ তায়ালার মহা গুণবাচক নাম রহমানের মেহমান বলে সম্বোধন করা হয়েছে, যা হাজী সাহেবের জন্য বিরাট প্রাপ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here