কৃষি বিপণন অধিদফতরের বেঁধে দেয়া দামের কোনো প্রভাব নেই রাজধানীর বাজারে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কারওয়ান বাজারেই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার ওপরে। খুচরা বিক্রেতাদের সাফ কথা, ‘বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারব না’। আর প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলছে, উৎপাদন খরচের চেয়ে খুচরা মূল্য কম নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মুরগির দোকানগুলোতে টানানো মূল্য তালিকা অনুযায়ী এক কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়। অথচ কৃষি বিপণন অধিদফতর খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে ১৭৫ টাকা। সোনালির দাম নির্ধারণ করেছে ২৬২ টাকা। রাজধানীর সবচেয়ে সস্তা বাজারখ্যাত কারওয়ান বাজারেই তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকায়।
ক্রেতারা জানান, নিয়মিত বাজার মনিটরিং না হওয়ায় কার্যকর হচ্ছে না নির্ধারিত দাম। ফলে বাধ্য হয়ে মুরগির মাংস কিনতে হচ্ছে বাড়তি টাকায়।
তবে কেনো বেঁধে দেয়া দামে মুরগি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে পাইকারি পর্যায়েই মিলছে না মুরগি। যার ফলে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
আর সরকার নির্ধারিত পাইকারি মূল্যে কেনো খুচরা বিক্রেতারা মুরগি কিনতে পারছেন না জানতে চাইলে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বিপিএ জানায়, বাচ্চার দাম ৫২ টাকা হলে এক কেজি ব্রয়লার উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। অথচ কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাব — উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকা ৭৫ পয়সা।
নিজেদের সেই হিসাব ধরে খামার পর্যায়ে ব্রয়লারের মূল্য ১৫১ টাকা ৮১ পয়সা নির্ধারণ করেছে বিপিএ। খামারিরা বলছেন, অযৌক্তিক দাম চাপিয়ে দেয়ায় বাজারে কার্যকর হচ্ছে না সরকারি সিদ্ধান্ত।
বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, কৃষি বিপণন অধিদফতরের বেঁধে দেয়া দাম অযৌক্তিক। কারণ মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ায় বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচও।
এদিকে, বাচ্চার দাম ৫২ টাকা হলেই যেখানে দামের পার্থক্য হচ্ছে আকাশ-পাতাল, সেখানে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের এ নির্ধারিত দামে কি বাচ্চা কিনতে পারছেন খামারিরা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সময় সংবাদের হাতে আসে জয়পুরহাটে বাচ্চা বিক্রি সিন্ডিকেটের এক ব্যবসায়ীর ফোনালাপ। তাতে পরিষ্কারভাবে খামারিকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, একেকটি বাচ্চার দাম পড়বে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সে হিসেবে একটি মুরগির উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় ২০০ টাকা। যা কৃষি বিপণন অধিদফতরের বেঁধে দেয়া সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে ২৩ টাকা বেশি।
এ পরিস্থিতিতে ক্রেতাকে স্বস্তি দিতে দায়সারাভাবে দাম নির্ধারণ না করে যৌক্তিক মূল্যে ভোক্তার হাতে পণ্য দেয়ার সুশৃঙ্খল বিপণন কাঠামো নিশ্চিত করার দাবি বাজার সংশ্লিষ্টদের।