মহানন্দার শীতল পানিতে জীবিকার লড়াই

11
মহানন্দার শীতল পানিতে জীবিকার লড়াই

গত দু’সপ্তাহ ধরে শীতের তাণ্ডবে তেঁতুলিয়া উপজেলার পাথর ও চা শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অব্যাহত শীতের কারণে শ্রমজীবী এই মানুষগুলো ঘর থেকে বের হতে পারছে না। প্রতিবছর শীত মৌসুমে জেলায় তাপমাত্রা ৬ থেকে ৭ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় হিমালয় ঘেঁষা এই জনপদের মানুষের জীবন যাত্রায় নেমে আসে অভাবনীয় দুর্ভোগ। সরকারিভাবে শীতবস্ত্রসহ সামান্য পরিমাণ খাদ্য সরবরাহের যোগান দিয়েও এসব মানুষের কষ্ট লাঘব সম্ভব হয় না।

তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা পাড়ে বাড়ি আবু বক্কর, সাবিরুল ইসলাম ও সুরুজ আলীর। হাতে লম্বা লোহার রড়, মোটর গাড়ির ফুলানো টিউব, ঢাঁকি এবং পাথর চালনি। মহানন্দার ঠাণ্ডা পানিতে শরীরের সমস্ত অংশ ডুবিয়ে সংগ্রহ করে নুড়ি পাথর। সকালে সূর্য উঠার খানিক পরেই তারা মহানন্দায় নেমে পড়ে পাথর সংগ্রহের কাজে। ১৫ থেকে ২০ জনের দল নিয়ে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত সংগ্রহ করে দেড় থেকে ২ ট্রলি পাথর। কাজ শেষে ভাগে পড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই চলে তাদের সংসার। পৌষের শুরু থেকে কাজে এসে নদীর পাড়ে অপেক্ষায় থাকে বেলা বাড়া এবং সূর্যের তাপের জন্যে। কিন্তু তাদের এই অপেক্ষা হতাশা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না। তীব্র শীতে নদীতে নামার সাহস যোগাতে না পেরে দু’সপ্তাহ ধরে ধার দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে এদের অনেককেই।

Pop Ads

মহানন্দার পাড়ে এমন হাজারো মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে পাথর সংগ্রহের কাজ করে আসছে বছরের পর বছর। কঠিন এই বাস্তবতায় জীবনের নুন্যতম তাগিদ ছাড়া আর কোনোই স্বপ্ন নেই এই মানুষগুলোর।

দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার উপর দিয়ে বয়ে গেছে মহানন্দা নদী। ভারতের একতরফা নির্মিত বাঁধের কারণে মহানন্দার বাংলাদেশি অংশ এখন শুধুই বালুচর। তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধার বিপরীতে ভারতের ফুলবাড়িতে মহানন্দার উপর নির্মাণ করা হয়েছে স্লইচ গেট। ভারতীয়রা তাদের প্রয়োজনের পর গেইট খুলে দিলে পানি আসে বাংলাদেশে। এই নদীর হাঁটু পানিতে ভেসে আসা নীল নুড়ি পাথর সংগ্রহ করেই জীবন জীবিকা চালায় এই উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। বছরের পুরো সময়েই চলে পাথর সংগ্রহের কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহানন্দার বুক চিরে কোথাও কমর পানি কোথাও হাঁটু পানিতে গাঁ ভাসিয়ে এই মানুষগুলো জীবন জীবিকার সঙ্গে লড়ছে। ভারি কোনো শিল্প না থাকায় পাথর সংগ্রহ করেই তারা চালায় তাদের জীবন জীবিকা। মোটা ভাত এবং মোটা কাপড় হলেই তাদের চাহিদা শেষ।

ভৌগলিক অবস্থার কারণে এখানকার মাটি এবং আবহাওয়া কৃষি ক্ষেত্রের জন্য সম্পন্ন বৈরী। তাই জীবন বাঁচার জন্যে জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে পাথর সংগ্রহের কাজ। সারা বছরজুড়েই চলে এই পাথর সংগ্রহের কাজ। কিন্তু শীতকাল এলেই এসব মানুষকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। শীত মৌসুমের প্রায় ৪ মাস কাজ হারিয়ে খাদ্য সংকটে পড়ে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।