মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগির অডিও ফাঁস

7
মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগির অডিও ফাঁস

ময়মনসিংহের নান্দাইলে ধুরুয়া দারুস সুন্নাহ (ডিএস) দাখিল মাদ্রাসায় আয়া, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছনতাকর্মী পদে নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগির একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ৩৬ দিন আগে মাদ্রাসায় এ নিয়োগ হলেও গত দুই দিন আগে অডিও রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মাদ্রাসার বিদ্যুৎসাহী সদস্য শাহ আলম মাদ্রারাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদির ও সুপার তাজুল ইসলাম- এই তিনজনকে অডিও রেকর্ডটিতে কথা বলতে শোনা যায়।

Pop Ads

অডিওতে রেকর্ডটিতে শোনা যায়, আব্দুল কাদিরকে শাহ আলম বলেন, ‘নানা (সভাপতি) আমরারে তো টেহা পয়সা দিলাইন না।

একলাই খাইয়ালবাইন নাহি? ১৩ লাখ টেহা তো নিছুইন খরচ করলাইন কই, হিসাববো দিলাইন না। ওয়াব ভুইয়া (মাদ্রাসার দাতা সদস্য) তো আমারে তাগাদা করছে, হেইলার দস্তখত (স্বাক্ষর) নিলাইন না, টেহাও দিলাইন না।’
শাহ আলমের এমন কথার পর ফোনের অপর প্রান্ত থেকে আব্দুল কাদির বলেন, ‘হ টেহা তো নিছিই। তুই তো সুপারের কাছ থেইক্যা ৫০ হাজার টেহা নিছস।

আর কত দিতো।’ তখন শাহ আলম বলেন, ‘আমিও দেইখ্যা দিয়াম।’
এ ছাড়া মাদ্রাসা সুপার তাজুল ইসলামকে শাহ আলম বলেন, ‘আপনে কইন টেহা দিতো। না দিলে বেজাল অইবো।

’ শাহ আলমের এমন কথার জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তোমরা নানা নাতির বিষয়, আদায় করো। আমার কোনো আপত্তি নাই।’ এভাবে দুইজনের সঙ্গে প্রায় ২০ মিনিট কথা হয় শাহ আলমের।
ঘটনার বিষয়ে জানতে মাদ্রাসার সামনের একটি দোকানে বসে কথা হয় মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ২২ ডিসেম্বর মাদ্রাসায় আয়া, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এর মধ্যে আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে প্রায় ১৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে শুনেছি। এ নিয়ে পরিচালনা কমিটির সভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু সভাপতির কাছ থেকে কোনো উত্তর পাইনি। নিয়োগ অনুমোদনে আমার স্বাক্ষরও নেওয়া হয়নি।’
পরিচালনা পর্ষদের দাতা সদস্য আবদুল ওয়াহাব ভূঁইয়া বলেন, টাকা লেনদেনের বিষয়টি শুনেছি। কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদির টাকা লেনদেনের কথা আমার কাছে স্বীকার করেছেন। কিন্তু মাদ্রাসার ব্যাংক হিসেবে কোনো টাকা জমা পড়েনি।

মাদ্রসার সুপার (তত্ত্বাবধায়ক) মো. তাজুল ইসলাম নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, আমি বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছি। তাই পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সদস্যরা যেভাবে বলেছেন, সেটা আমি অনুমোদন করেছি ‘ তিনি কোনো লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেন।

পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মো. আব্দুল কাদির বলেন, আমি একটি পদের জন্য, মাদ্রাসা সুপার তাজুল ইসলাম একটি পদে ও এলাকার বাসিন্দা এক নেতা একটি পদের জন্য নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করায় চাকরি হয়েছে। নিয়োগে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

এই তিনপদে নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আপনি কথা বলছেন- এমন একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘এইসব সাজানো মিছা কথা।’

ধুরুয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামসহ ১০-১২ জন বাসিন্দার দাবি, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ গুরুতর বলে বিবেচনা করতে হবে। তাঁরা আশা করেন, কর্তৃপক্ষ একটি সুষ্ঠু তদন্ত করে নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা মোফাখারুল ইসলাম বলেন, ‘সব তো ঠিক মতোই হয়েছে জানতাম। এখন এমন প্রশ্ন কেন উঠেছে, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’