লুপ্ত খেলা কুতকুত

4
লুপ্ত খেলা কুতকুত

বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো কুতকুত। এই খেলারই আরেক নাম এক্কাদোক্কা, সাধারণত বর্ষকালে ভেজা-নরম মাটিতে দাগ কেটে এই খেলা হয়। প্রথমে একটা আয়তক্ষেত্র, তারপর সেই আয়তক্ষেত্রের ভেতর মোট ছয়টি ঘর করা হয়। শুধু ঘর হলেই তো চলবে না, দরকার গুটিরও।

মাটির ভাঙা পাতিল হলো এই খেলার আদর্শ গুটি। একে অঞ্চলভেদে খাপড়া বা চাড়া বলে। গুটি চৌকোনা অথবা গোল হতে হবে।
মোটামুটি দুজন খেলোয়াড় হলেই কুতকুত খেলা চালিয়ে নেওয়া যায়।

Pop Ads

খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঘরগুলো কিনে ফেলা। যে যত বেশি ঘর কিনতে পারে সে-ই জয়ী হয়। ঘর কেনার জন্য খেলোয়াড় প্রথম ঘরের সামনে দাঁড়ায়। তারপর প্রথম ঘরে গুটি ছুঁড়ে মারে।

গুটি যদি প্রথম ঘরেই পড়ে, তবে সে ঘর কেনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। গুটি যদি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তবে দান চলে যায় অন্য খেলোয়াড়ের কাছে। তখন সে চেষ্টা করে প্রথম ঘরটা কেনা যায় কি না।
প্রথম ঘরে গুটি ছুঁড়ে মারার পর খেলোয়াড় এক পা উঁচু করে আরেক পায়ে ভর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। সেই সাথে ‘কুত…কুত..কুত..’ বলে ছড়া কাটতে থাকে।

তবে সাবধান থাকতে হয়, দাগে যেন পা না পড়ে। পড়লেই দান বাতিল। তেমনি ছড়ার দম পুরালেও দান বাতিল। তারপর যে পায়ে ভর দিয়ে সে হাঁটছে সেই পা দিয়ে গুটিটা টোকা দিয়ে ঠেলে দেয় সামনের ঘরগুলোর দিকে। তখন তার লক্ষ্য গুটিটা ঠেলে শেষ ঘরে পৌঁছে দেওয়া। সেটা যদি এক টোকাতেই চলে যায় তো খুবই ভালো। আর না গেলে তাকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সামনে হেঁটে আবারও গুটি ঠেলতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন না করলেই নয়। কারণ গুটি এমনভাবে ঠেলতে হবে, যাতে কোনো দাগে আটকে না যায়। তাহলে দান বাতিল। আবার বেশি জোরে টোকা দিলে গুটি শেষ ঘর পার হয়ে বাইরে চলে যেতে পারে। সেটা হলেও কিন্তু দান বাতিল। গুটি শেষ ঘরে ঢোকালেই চলবে না। খেলোয়াড়কে এক পা ওপরে তুলেই শেষ ঘরে আসতে হয়। তার আগে নিশ্চিত হতে হয়, সে এক পায়ে ভর দিয়ে সব কটা ঘর ঘুরে এসেছে।
গুটি শেষ ঘর পার করার পর খেলোয়াড় আবার চলে আসে প্রথম ঘরের সামনে। তারপর দুই হাতে চোখ ঢেকে মাথা ওপরের দিকে তুলে তাকে পা বাড়াতে হয় সামনের ঘরগুলোর দিকে। এখন আর গুটির দরকার নেই, না দেখে সব ঘর মাড়ালেই চলবে। তবে এই মাড়ানোটা কিন্তু যেনতেন ব্যাপার নয়। কোনো অবস্থায়ই যেন দাগে পা না পড়ে সেটা আন্দাজ করে নিতে হয়।

চোখ খোলা চলবে না। আবার এক ঘরে দুই পা ফেলাও চলবে না। মানে প্রথম ঘরে এক পা থাকলে দ্বিতীয় ঘরে থাকবে দ্বিতীয় পা। তারপর দ্বিতীয় ঘরের পা-টা ঠিক রেখে প্রথম ঘর থেকে পা সরিয়ে তৃতীয় ঘরে নিতে হবে। এভাবে সব কটা ঘর ঘোরা শেষ হলেই তবে সফলভাবে ঘর কেনা হবে। তবে শুধু প্রথম ঘরটা কেনা হলো। প্রথম ঘর কেনা শেষ হলেই আবার নতুন করে দান শুরু হবে। এবার লক্ষ্য দ্বিতীয় ঘর কেনা। এ জন্যও তাকে আগের মতোই গুটি নিয়ে সব ঘর পেরোতে হবে। তারপর চোখ বুজে সব ঘর মাড়াতে হবে। এভাবে সব কটা ঘর কেনা হলে খেলা শেষ হয়ে যাবে।