শাজাহানপুরে এতিম মাদরাসার প্রকল্পের টাকা লুটপাট !

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়া শাজাহানপুরে সাজাপুর পশ্চিম পাড়া দারুল উলুম কওমি হাফেজিয়া (এতিম শিশুদের জন্য) মাদরাসার উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সফিকুল ইসলাম এবং সাধারন সম্পাদক রায়হানুল ইসলাম। তবে এসব অর্থ আত্মসাৎ শুধু তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

এর সাথে জড়িত রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাও। তারা কাজ না করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে সকলে মিলে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। মঙ্গলবার ২৮ জুলাই ওই মাদরাসায় গেলে প্রধান শিক্ষক মুহতামীম হাফেজ মাওলানা মোঃ নুরুল আমীন ও এলাকাবাসি এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। দেখাযায়, মাদরাসা সংস্কার ও উন্নয়ন করা তো দুরের কথা, ফুটো ফুটো টিনের চালার জড়াজীর্ণ ঘড়ে এতিম শিশুরা অর্ধাহারে মাটির মেঝেতে দিনাতিপাত করছে।

Pop Ads

জানাগেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টিআর) প্রকল্পের আওতায় এতিম শিশুদের এই দারুল উলুম কওমি হাফেজিয়া মাদরাসাটির উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য ৭২ হাজার ৫ শত টাকা প্রকল্প বাস্তাবায়ন করা হয়। কিন্তু সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখাযায়, কাগজে কলমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন থাকলেও বাস্তবে কিছুই করা হয়নি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং পদাধিকার বলে প্রধান শিক্ষক হবেন সচিব। তাদের যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া প্রকল্প বিল উত্তোলন করা সম্ভব না। কিন্তু এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। প্রধান শিক্ষককে না জানিয়ে প্রকল্পের টাকা তুলে ভাগবাটোয়ারা করে হজম করা হয়েছে।

এবিষয়ে মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মুহতামীম হাফেজ মাওলানা মোঃ নুরুল আমীন জানান, প্রকল্প বিষয়ে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। তবে তিনি বলেন, মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য তারেক হোসেন সুমন কিছুদিন আগে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বলেছেন, “আপনাদের মাদরাসার নামে একটি প্রকল্প এনেছিলাম। প্রকল্পটি পাশ করাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। যাহোক এই ৫ হাজার টাকা রাখেন, কাউকে কিছু বলবেননা”।

এবিষয়ে মাদরাসার এবং প্রকল্পটির সভাপতি ও মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সফিকুল ইসলাম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে উপজেলা কর্মকর্তা বুঝবে আর আমরা বুঝবো। সাংবাদিকের কাছে জবাব দিতে বাধ্য নই। আর সাধারন সম্পাদক রায়হানুল ইসলাম বলেন, ওসব টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে গেছে অনেক আগে। এতোদিন পরে বললে হয়…।

এদিকে এতিম মাদরাসার উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ হরিলুটের এমন নির্লজ্জ ঘটনায় এলাকাবাসির পক্ষে তদন্ত ও জড়িতদের বিচার চেয়ে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ মুন্জুরুল হক আকন্দ। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, মাদরাসাটির উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্পের কোন কাজ না করেই সমস্ত টাকা তছরুপ করা হয়েছে। বিধায় তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবী করেন।

অপরদিকে মাদরাসাটির প্রধান শিক্ষক ও আশেপাশে বসবাসরত মৃত মনছুর আলী ছেলে মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান ও আজিজ মিয়ার ছেলে তারিকুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের টাকা না দেয়ায় ও মাদরাসার ভংগুর অবস্থা দেখে কিছুদিন আগে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোঃ নাঈম হোসেন ৫ হাজার টাকা দান করেন। পরে এলাকাবাসী চাদা তুলে সবমিলে ১০-১২ হাজার টাকা মিল করে দেওয়াল সংস্কার ও রং করা হয়।

কিন্তু প্রকল্প দেখতে এসে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের লোক বলেগেছে, কেউ আসলে বলবেন, প্রকল্পের ৭২ হাজার ৫ শত টাকা দিয়ে দেওয়াল সংস্কার ও রং করা হয়েছে। এদিকে কাজ না করেই কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, এ যুগে কাজ শতভাগ হয়েছে, এমন দেখেছেন কখনও। যাহোক তারপরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।

আর এলাকাবাসী জানান, এভাবে যোগসাজসে টাকা লুটপাট করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির এতিম শিশুদের প্রতি চরম অমার্জনীয় অপরাধ করা হয়েছে এবং লোকের সমালোচনায় সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা একান্ত জরুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here