শাজাহানপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের মুচলেকা অমান্য

শাজাহানপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের মুচলেকা অমান্য। প্রতিকী-ছবি

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি): বগুড়ার শাজাহানপুরে ভ্রাম্যমান আদালতে দেয়া মুচলেকা অমান্য করে এক নাবালিকা ছোট্র মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিয়ে স্বামীর ঘড়ে তুলে দেয়া হলেও প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। সংগত কারনে উপজেলা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার সাধারন জনগন।

মেয়েটি উপজেলার জালশুকা উত্তরপরাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী। বর্তমানে মেয়েটি লেখাপড়া বাদ দিয়ে ওই গ্রামের হাফিজার রহমানের ছেলে নাঈমের বধু। আর আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পরও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও শাজাহানপুর উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় ভেস্তে গেছে মেয়েটির লেখাপড়া ও আগামীর সম্ভাবনাময় স্বপ্ন।

Pop Ads

এভাবে আইনের প্রয়োগ না থাকায় বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ে এবং ওই গ্রামে আরও কয়েকটি বাল্যবিয়ে সম্পাদন হয়েছে। রবিবার ১৩ ডিসেম্বর এসব তথ্য জানান স্থানীয়রা। ঘটনার বিবরণে স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগে জালশুকা পশ্চিম পাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমানের ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়–য়া মেয়ে মীম (১১) কে অন্য এলাকায় নিয়ে গিয়ে একই গ্রামের হাফিজার রহমানের ছেলে নাঈম (১৯) এর সাথে গোপনে বাল্য বিয়ে সম্পন্ন করে উভয় পরিবারের লোকজন।

এরপর বাড়িতে এনে একই ঘড়ে দুজনে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু কেউ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় ঘটনাট বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হককে জানানো হলে এ ঘটনায় ১৫ নভেম্বর রাতে সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় টাউটদের ইশারায় মুহুর্তেই সরিয়ে নেয়া হয় সদ্যপ্রাপ্ত স্বামী নাঈম এবং ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রী ও নববধু মীমকে।

ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বার্হী মেজিষ্ট্রেট শাজাহানপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি মোঃ আশিক খান বলেন, ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এ অপরাধে কনের ১৮ বছর পুর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বর ও কণে কে আলাদা রাখার নির্দেশ দিয়ে এ সংক্রান্ত মুচলেকা সহ ছেলের বাবাকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কিন্তু ছোট এ মেয়েটিকে আলাদা বা সেফ হোমে রাখা তো দুরের কথা, ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা দেয়ার পরই ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ওই ছাত্রীকে বধু করে স্বামীর ঘড়ে তুলে দেয়া হয়েছে এবং স্ত্রী হিসেবে তাকে ঘড়ে নিয়ে বসবাস করছে তার স্বামী। শুধু তাই নয়, অবুঝ মেয়েটিকে তার মা ও বাবা বাল্যবিয়ে দিলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি এবং আদালতের আদেশ বা মুচলেকা অমান্য করে নাবালিকা মেয়েটিকে স্বামীর ঘড়ে তুলে দিলেও আর কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

মেয়েটির মা ও শশুর হাফিজার রহমান বলেন, জরিমানা দিয়েছি। এখন আর কেউ ধরতে পারবে না অসুবিধাও নেই। তাই এলাকাবাসীর প্রশ্ন, জরিমানা দিয়ে কি- পুতুল খেলার বয়সেই বধু হওয়ার অনুমতি দেয় হয়েছে ? মুচলেকা অমান্য করলেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা কেন। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে এটাই কি আইন ? এমন প্রশ্ন জনগনের।

তবে এ প্রসংগে জানাযায়, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও উপজেলা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটি বাল্য্যবিয়ে প্রতিরোধে ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করায় এ উপজেলায় বাল্যবিয়ে অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে এলাকার সচেতন লোকজন জানান, এ উপজেলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ নেই। চলছে কোন রকমে দায়সাড়া ভাবে।

বিধায় বাল্য বিয়ের হিরিক পড়ে গেছে। এ প্রসংগে জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বলেন, বাল্যবিয়ে হয়েই থাকে। এ নিয়ে করার আর কি আছে। তাই দায়সাড়া নয়, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সঠিক ব্যাবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।