ঠাকুরগাঁওয়ে অবহেলার কারণে শিশুর মৃত্যু অভিযোগ পিতার

ঠাকুরগাঁওয়ে অবহেলার কারণে শিশুর মৃত্যু অভিযোগ পিতার। ছবি-সজল

সুপ্রভাত বগুড়া (সজল আলী ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি):  মায়ের কোলে ১০ মাসের শিশু ফালাকের নিথর দেহ। একদিকে কান্না করছেন বাবা, অপরদিকে মা। আশেপাশে রয়েছে স্বজনদের ভিড়। শিশুটির এমন মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছে সবাই। তবে কান্নার মধ্যেও যেন একটি কথা ভেসে আসছে, ‘হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট ও কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যদের গাফিতালির কারণেই মারা গেলো আমাদের সন্তান।’

এমনি একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম। মৃত ওই কন্যাশিশু ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়া এলাকার ফয়সাল শুভ’র মেয়ে।

Pop Ads

নিহত শিশুর বাবা ফয়সাল শুভ অভিযোগ করে বলেন, ঠাণ্ডা লাগার কারণে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে হঠাৎ করেই আমার বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ‘এহিয়া ক্লিনিকে’ অক্সিজেন দেয়ার জন্য নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে ক্লিনিকের সংস্কার কাজ করার জন্য অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, পরে রাত ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বাচ্চাকে ভর্তি করা হয়। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাহান নেওয়াজকে দেখানো হয়। রাতে ওই চিকিৎসক কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দেন। ডা. শাহজাহান পরামর্শ দেন, বাচ্চাটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য। পরে ওই চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে চলে যান।

ফয়সাল শুভ বলেন, বাচ্চাটির শ্বাসকষ্ট অনেক হওয়ায় অক্সিজেন দেওয়ার পরও হাসপাতালে থেকে যাই। কিছুক্ষণ অক্সিজেন দেওয়ার পর সিলিন্ডারে অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। এরপর শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের বলা হয় অন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়ার জন্য। এভাবে কয়েকটি সিলিন্ডার পরিবর্তন করা হয়। এক সময় সিলিন্ডারে বুতবুত দেখা যায়, কিন্তু সিলিন্ডারে কোনো অক্সিজেন নেই।

পরে শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত স্টাফদের অনেক অনুরোধ করার পর তারা ইলেকট্রিক মেশিনের একটি অক্সিজেন আমার বাচ্চা শরীরে লাগিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, রোববার সকাল ৬টার দিকে হাসপাতালে এসে দেখি আমার বাচ্চার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানানো হলে শিশু ওয়ার্ডের নার্স ও স্টাফরা সেই অক্সিজেনটি বাচ্চার শরীর থেকে খুলে চেক করতে শুরু করে।

‘চেক করার সময় সকাল ৮টার দিকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন না পাওয়ায় চোখের সামনেই আমার বাচ্চার মৃত্যু হয়।’ ফয়সাল বলেন, ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট ও কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যদের গাফিতালির কারণেই আমার বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। আমি এর বিচার চাই, এ ঘটনায় আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, ‘রাতে বাচ্চাটি হাসপাতালে আনা হয়। তার শারীরিক অবস্থা দেখে তাৎক্ষনিক রংপুরে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু তার স্বজনরা বাচ্চাটিকে নিয়ে যায়নি। তারপরও আমরা হাসপাতাল থেকে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছি।’

নিরবিচ্ছন্নভাবে অক্সিজেন না পাওয়ায় বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে স্বজনদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন নেই। তারপরও সিলিন্ডার অথবা ইলেকট্রিক মেশিনের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হয়। রাতে ওই বাচ্চাকে ইলেকট্রিক মেশিনের মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল।

‘‘মেশিনটি ছয় ঘণ্টা পর ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে’ বন্ধ হয়ে যায়। সকালে মেশিনটি বদলাতে ১৫ মিনিট সময় লাগে। এরমধ্যে বাচ্চাটির অবস্থা খারাপ হয়। পরে আবারও অক্সিজেন দেওয়া হয়। সকাল ৮টার দিকে বাচ্চাটি মারা যায়। এতে আমাদের কোনো ধরনের গাফিলাতি নেই’’, দাবি করেন ডা. শাহজাহান নেওয়াজ।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।